ম্যারাডোনার খবর এখনো শোনেননি গুরু বিলার্দো

কার্লোস বিলার্দো এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনা।ছবি: টুইটার

পুরোনো সেই দিনের কথা...ডিয়েগো ম্যারাডোনা বেঁচে থাকতে কতবার স্মৃতি হাতড়ে কার্লোস বিলার্দোর সঙ্গে তাঁর সুখের দিনগুলোর কথা বলেছেন!

বিলার্দোও তাঁর সাবেক শিষ্যকে নিয়ে ছিলেন গর্বিত। কত স্মৃতিময় ছবি যে তাঁদের দুজনের আছে। আছে কত স্মৃতিময় ঘটনা, কত আনন্দের উপলক্ষ! সেভিয়া, বোকা জুনিয়র্স থেকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল—বিলার্দোর অধীনে খেলেছেন ম্যারাডোনা। ছিলেন বিলার্দোর প্রিয় শিষ্যদের একজন। অথচ সেই ম্যারাডোনা যে নশ্বর এ পৃথিবীতে আর নেই সেটা জানেনই না বিলার্দো!

আসলে ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর ইচ্ছা করেই জানানো হয়নি ৮৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন কোচকে। শুধু ম্যারাডোনাই নন, বিলার্দোকে জানানো হয়নি আলেহান্দ্র সাবেয়া বা টাটা ব্রাউনের মৃত্যুর খবরও। এর কারণও আছে। এমনিতেই বার্ধক্যের ধকল, এর ওপর অনেক দিন ধরেই রোগে ভুগছেন আর্জেন্টিনার সাবেক কোচ।

এ অবস্থায় তাঁর প্রিয় কিছু মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়ে বিলার্দোর জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চায়নি পরিবার। এসব মৃত্যুর খবর সইতে না পেরে তাঁর যদি কিছু হয়ে যায়!

ম্যারাডোনার মৃত্যুর আরও কিছুদিন আগে থেকে স্মৃতিভ্রষ্টতা আর পারকিনসনের মতো রোগের সঙ্গে লড়াই করে আসছেন বিলার্দো। একটা পর্যায়ে তো তিনি কোমায়ই চলে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি কোমা থেকে বেঁচে ফিরেছেন বিলার্দো। তবে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁর পরিবার বিলার্দোকে লালন–পালন করছেন শিশুর মতো। কোনো কিছুতে তাঁর শরীরে বা মনে চাপ পড়বে, এমন কিছু থেকে তাঁকে দূরে রাখা হয়।

তবে ফুটবল ছিল যাঁর শয়নে-স্বপনে, বিলার্দো ফুটবল ছাড়া কি থাকতে পারেন। কিছুটা সুস্থ হয়েই টেলিভিশনে খেলা দেখতে শুরু করেন। তাঁকে খেলা দেখতে দিয়েও একরকমের বিপদে পড়েছে তাঁর পরিবার। এমনিতে আর্জেন্টিনার ক্লাব ফুটবলের ম্যাচগুলো অন্য অনেক জায়গার মতোই হচ্ছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। তবে প্রায় প্রতিটি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেই ঝোলানো থাকে ম্যারাডোনার ছবিসহ ব্যানার।

এটা দেখে বিলার্দো কখনো কখনো তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন করেন, ‘আমি প্রচুর ডিয়েগোর ব্যানার দেখছি। কী হয়েছে, কোনো সমস্যা?’ এ প্রসঙ্গটি ধরেই বিলার্দোর ভাই হোর্হে সম্প্রতি বলেছেন যে কিংবদন্তি ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর জানেন না বিলার্দো, ‘ডিয়েগো মারা যাওয়ার সময় প্রথম দিকে আমরা তাকে নেটফ্লিক্স অন করে দিতাম। কখনো কখনো টেলিভিশনও দেখত। সে সময় সে নেটফ্লিক্স বা টেলিভিশনে কলম্বিয়ান সিরিজ দেখত।’

কিন্তু ফুটবল শুরু হওয়ার পর খেলা দেখতেই বেশি পছন্দ করছেন বিলার্দো। খেলা দেখতে গিয়ে তাঁর চোখে ম্যারাডোনার ব্যানারগুলো পড়েছে এবং তিনি প্রশ্ন করে যান। বিলার্দোর প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকেরা বিষয়টি এড়িয়ে যান এভাবে, ‘আমরা তাঁকে বলি, দেখুন না মানুষগুলোও কেমন যেন হয়ে গেছে। কত রকমের ব্যানার কোথায় কোথায় টাঙিয়ে রাখে!’

বিলার্দো খেলা দেখার সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হয়। তিনি যেন ধারাভাষ্য না শুনতে পান! কে জানে কখন কোন ধারাভাষ্যকার ম্যারাডোনার মৃত্যুর কথা বলতে শুরু করেন আর সেটা বিলার্দো শুনে ফেলেন। শুনে ফেলার পর সেই চাপ যদি সইতে না পারেন! হোর্হে বলে চলেন, ‘খেলা যখন শুরু হয় আমরা তখন টেলিভিশনের শব্দ কমিয়ে দিই।’ এখন বিলার্দো নিজেও শব্দ শুনতে খুব একটা পছন্দ করেন না।

এখন অবশ্য বিলার্দোর অবস্থার একটু উন্নতি হয়েছে। হয়তো আরেকটু উন্নতি হলে ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবরটি দেওয়া হবে তাঁকে। কে জানে তখন প্রিয় শিষ্যের চলে যাওয়ার খবরটা সইতে পারবেন কিনা আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতানো কোচ বিলার্দো। যে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা।