‘যারা ফুটবল নিয়ে কাজ করে তাদের কাছে আমি জনপ্রিয়’

৩৬ বছর আগে খেলা ছেড়েছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য কাজী সালাউদ্দিন জাতীয় দল ও আবাহনীর জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে। ১০ নম্বর জার্সিতে সালাউদ্দিন এক সময় হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতীক। সালাউদ্দিন যে প্রশাসক হিসেবেও ভোটের রাজনীতিতে দক্ষ, সেটা তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে গোল করার দক্ষতার মতোই।

গতকাল টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন, দ্বিতীয়বার সভাপতি হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৬ ও ২০২০—টানা দুবার ভোটের হিসেবে প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলেই শেষ হাসি হাসলেন তিনি।

এবারের নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক দুই তারকা ফুটবলার বাদল রায় ও শফিকুল ইসলাম। বাদল রায় তো শেষ পর্যন্ত গোলকধাঁধাই থেকে গেলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ছিলেন কি নেই, এই গোলকধাঁধাঁর মধ্যেও সাবেক এই তারকা নিজের বাক্সে ঠিকই ৪০ ভোট আদায় করে নিয়েছেন। তবে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী, আরেক সাবেক ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিকের ভরাডুবিই হয়েছে। তিনি পেয়েছেন মাত্র ১ ভোট।

সালাউদ্দিন বললেন, ভোটাররাই তাঁর বিরুদ্ধে সব সমালোচনার জবাব দিয়ে দিয়েছেন।
ছবি: শামসুল হক

২০০৮ সালে প্রথমবার সভাপতি হওয়ার পথে সালাউদ্দিন ভোট পেয়েছিলেন ৬২টি। সে নির্বাচনে তাঁর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) আমীন আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। দেশের খেলাধুলার জগতে পরিচিত মুখ জেনারেল আমীনের সঙ্গে লড়ে বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচিত সালাউদ্দিন এরপর নিজেকে বাংলাদেশের ফুটবলের অভিভাবক হিসেবে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

২০১২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর সভাপতি নির্বাচন সেই বার্তায় দেয়। যদিও এর পরের দুটি নির্বাচনে তাঁকে বিরোধিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, কিন্তু একটা হিসেবে দেখা যাচ্ছে ২০০৮ থেকে তাঁর ভোটের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৬ সালে তিনি এক সাংসদের বিরুদ্ধে লড়ে পেয়েছিলেন ৮৩ ভোট। এবার পেলেন ৯৪ ভোট।

কাল নির্বাচিত হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত সালাউদ্দিন বললেন সে কথাই, ‘২০০৮ সালে আমি ৮০ ভোট (হবে ৬২) পেয়ে পাশ করেছি। শেষবার অর্থাৎ ২০১৬ সালে ৮৪ ভোট (হবে ৮৩)। এবার ৯৪ ভোট। আমি তো দেখছি আমার ভোটের সংখ্যা বাড়ছে। লোকজন অনেক কিছুই বলছে, আমাকে নাকি চায় না। কিন্তু যারা ফুটবল নিয়ে কাজ করছে, আমি তো তাদের কাছে জনপ্রিয়।’

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়জুড়ে বাফুফের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সালাউদ্দিন। তাঁর বিজয়কে নির্বাচনের আগের যাবতীয় সমালোচনা ও বিরোধিতার জবাবই বলছেন তিনি, ‘আমাদের বিজয় ভোটারদের বিজয়। ভোটাররা আপনাদের কাছে ফল উপস্থাপন করেছে। নির্বাচনের আগে অনেকে অনেক কথাই বলেছে, তবে উত্তরটা দেওয়ার ছিল ভোটারদের। আমি ভোটারদের ধন্যবাদ জানাই।’

টানা চতুর্থবার বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন
ছবি: প্রথম আলো

সালাউদ্দিন নিজের নির্বাচনী বিজয়ের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক তারকা ফুটবলারদের সমালোচনাই করেছেন, ‘১২ বছরে কোনো লিগ, খেলা মিস হয়নি। আর এটা করি বলেই খেলোয়াড়রা এবং ভোটাররা, যারা ফুটবলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তারা আমাকে সমর্থন করে। এটাই একমাত্র কারণ। আজকে ( কাল) বর্তমান খেলোয়াড়রা আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। যারা এখনো খেলছে। অতীতের খেলোয়াড়রা না। এখনকার খেলোয়াড়রা যখন আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে, তখনই আমি বুঝেছি, হয়তো আমি কিছু ঠিক কাজ করেছি।’

সালাউদ্দিনের সঙ্গে বাফুফের নব নির্বাচিত সদস্যরা।
ছবি: প্রথম আলো

নিজে সভাপতি ছাড়াও তাঁর পরিষদ থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সহ আরও তিনজন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে অন্য একজন সহসভাপতি আসবেন তাঁর প্যানেলের বাইরে থেকে তা নিশ্চিত। ৬৫ ভোটে পেয়ে দুই সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল ( স্বতন্ত্র) ও মহিউদ্দিন আহমেদের ( সমন্বয় পরিষদ) লড়াই শেষ হয়েছে সমতায়। ৩১ অক্টোবর পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে চতুর্থ সহসভাপতি। এ ছাড়া সদস্য পদেও কয়েকজন এসেছেন বিরোধী প্যানেল থেকে। সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করা যাবে তো?

এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিন একসঙ্গে কাজ করার কথাই বলেছেন, ‘যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছে, তারা আমার প্যানেল থেকে আসুক বা অন্য প্যানেল থেকে, তাদেরকে তো ভোটাররা এনেছে। আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে কাজ করব। কারণ আমি ফুটবলে করতে এসেছি। এটা তো রাজনীতি নয়।’