যিনি গোল করলে বাংলাদেশ কখনো হারে না

ম্যাচসেরা হয়েছেন তপু বর্মনছবি: বাফুফে

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের জয় আসে কালেভদ্রে। আর গোল তো সোনার হরিণ।

বাংলাদেশের ফুটবলে প্রায় বিলুপ্ত হতে যাওয়া এই দুই বিষয়কে কিছুটা এক সুতায় গাঁথতে পেরেছেন তপু বর্মণ। ডিফেন্ডার হয়েও গোলের রাস্তাটা তাঁর চেনা, আর তপু গোল করলে বাংলাদেশ হারে না, বিষয়টি এত দিনে প্রমাণিত। কাল ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমকে তপু এ কথা বলেছেনও, ‘আমি গোল করলে বাংলাদেশ হারে না।’

তপুর জয়সূচক গোলেই কলম্বোতে মাহিন্দা রাজাপক্ষে টুর্নামেন্টে মালদ্বীপকে হারিয়েছে বাংলাদেশ
ছবি: বাফুফে

সর্বশেষ গতকাল তপুর জয়সূচক গোলেই কলম্বোতে মাহিন্দা রাজাপক্ষে টুর্নামেন্টে মালদ্বীপকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৮ বছর পর মালদ্বীপকে হারাল বাংলাদেশ। ১-১ গোলে সমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। ৮৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন তপু।

অনেকে ভ্রু কুঁচকে বলতে পারেন, পেনাল্টি থেকে গোল আর এমনকি! কিন্তু চাপের সময়ে স্নায়ুর পরীক্ষা দিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে বল জালে জড়ানোর কৃতিত্বটা তো আর কম নয়। কাল তপু এমন সময়ে গোল করে দলকে উদ্ধার করলেন, যখন ম্যাচের আয়ু বাকি আছে মাত্র কয়েক মিনিট। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতে।

২০১৪ সালে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তপুর। ২৬ বছর বয়সী এই সেন্টারব্যাক ৪৩ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৬টি। পরিসংখ্যানটা এমন আহামরি কিছু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের সেন্টারব্যাক হিসেবে কারও ৬ গোল করাটাকে ভালো বলতেই হবে। তাঁর ৬ গোলের ম্যাচগুলোতে এক ড্রয়ের বিপরীতে ৫টি জিতেছে বাংলাদেশ।


তপুর প্রথম গোলটি ছিল ২০১৫ সালে কেরালা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানের বিপক্ষে। ম্যাচটিতে ৩-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৮ সালের সাফের দুই আসর মিলিয়ে টানা ৩ ম্যাচে গোল আছে তাঁর। অন্য দুটি গোল ২০১৮ সালে ঢাকায় ভুটান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রায় ৩ বছর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই গোল ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রোইন থেকে দূরের পোস্টে মাথা ছুঁয়ে গোলটি করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। গত মাসে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়টি এসেছিল তাঁর পেনাল্টি থেকে করা গোলে।

বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ছয় গোল হয়ে গেছে তপুর
ছবি: বাফুফে

তবে তপুকে সমর্থকেরা বেশি মনে রাখবেন এ বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গোলের জন্য। বাংলাদেশ জেতেনি, তবে ১-১ গোলের সেই ড্রয়ের মাহাত্ম্য অনেক বড়। দোহায় এক গোল খেয়ে হারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ দল। ৮৪ মিনিটে বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাব হলো তপুর। ফ্রি কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। গোল করার জন্য ওপরে উঠে এসেছিলেন দুই সেন্টারব্যাক তপু ও রিয়াদুল হাসান। প্রথম দফায় আফগান গোলরক্ষক সেভ করলে বল গিয়ে পড়ে বদলি মিডফিল্ডার মানিক হোসেনের পায়ে। সে বক্সের মধ্যে লম্বা বল ফেললে রিয়াদুল হেড করে বক্সের মধ্যে নামিয়ে দিলে চকিতে ঘুরে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে তপুর গোল। একজন সেন্টারব্যাকের পা থেকে এমন গোল দেখলে বিস্মিত হতেই হয়।


বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তপু নিয়মিত গোল করে যান, সমর্থকদের এখন এমনই আশা থাকবে!