যে ৫ কারণে ভারতের বিপক্ষে জিততে পারে বাংলাদেশ

দোহায় অনুশীলনে বাংলাদেশ ফুটবল দল।ছবি: বাফুফে

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সবচেয়ে বড় শক্তি ভারত। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বাধিক সাতবার চ্যাম্পিয়ন তারা। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলোর তুলনায় ভারত নিজেদের অবস্থান এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে যে সাফে আর এখন মূল দল পাঠায় না তারা।

তাদের বিপরীতে সর্বশেষ চারটি সাফের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। তবু প্রতিবেশী দুটি দেশ মাঠে নামলে কোনো পরিসংখ্যান খাটে না। লড়াইটা হয় জম্পেশ। সর্বশেষ ম্যাচে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে ১ গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।

আজ বাংলাদেশের প্রত্যাশা জয়। ভারত অনেক শক্তিশালী দেশ হলেও যে পাঁচ কারণে আজ ম্যাচটি জিততে পারে বাংলাদেশ...

প্রতিপক্ষ ভারত বলেই বাড়তি অনুপ্রেরণা

বিশ্ব ফুটবলে ভারত ১০৫ আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫। র‌্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য একতরফা এক ম্যাচের কথাই বলবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামলে র‌্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য পেছনে পড়ে যায়। লড়াইটা হয় ধুন্ধুমার।

সর্বশেষ কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের প্রথম লেগের ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচটা এখনো সেই সাক্ষী হয়ে আছে। আজ ভারতের বিপক্ষে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বাংলাদেশের উইঙ্গার রাকিব হোসেন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে আমাদের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে।’

বাংলাদেশ দলের বাকি খেলোয়াড়দের মনোভাবটাও এ রকম আগুনে। প্রতিবেশী দেশ ভারতীয় ফুটবলের নব্য অহমিকায় আঘাত হানতে হবে, এটা প্রমাণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশের ফুটবলাররা।

গতির অনুশীলন করছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
ছবি: বাফুফে

বাংলাদেশের গতিময় ফরোয়ার্ডদের সামনে ভারতের ধীরগতির রক্ষণভাগ
চোট কাটিয়ে সেন্টারব্যাক সন্দেশ ঝিঙ্গান ফেরাতে ভারতীয় দলের রক্ষণভাগে ভারসাম্য ফিরেছে। ঝিঙ্গানের সঙ্গে ভারতীয় দলের রক্ষণভাগের অন্য দুজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সেন্টারব্যাক আদিল খান ও রাইটব্যাক প্রীতম কোটাল।

এই তিনজনের গড় বয়স প্রায় ২৯। বাংলাদেশের তরুণ আক্রমণভাগের গতির সঙ্গে তাদের কুলিয়ে ওঠার কথা নয়। কলকাতায় ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর প্রথম পর্বের ম্যাচে বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিমদের সামনে খুব বেশি পেরে উঠছিল না ভারতীয় ডিফেন্ডাররা। এবার আক্রমণে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির মতিন মিয়া।

আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেখা গেছে মতিনকে রুখতে বেশ কয়েকবার ফাউল করতে বাধ্য হয়েছেন আফগান ডিফেন্ডাররা। পেনাল্টির দাবিও উঠেছিল একবার।

বাংলাদেশের টিম ডিফেন্ডিং
‘ফুটবল–বিশ্বে কিছু বিরক্তিকর দল থাকে। যারা খুব কঠিনভাবে রক্ষণভাগ সামলে ও ভালো খেলে প্রতিপক্ষকে বিরক্ত করে। ফুটবলে প্রতিপক্ষ দলকে বিরক্ত করার জন্য আপনি সবকিছুই করার চেষ্টা করবেন। বিরক্ত করতে তাদের পাস দেওয়ার সুযোগ দেবেন না। গ্রুপে প্রতিটি পয়েন্টের জন্য বাংলাদেশ এই কাজই করছে। তারা যাই করে, দল হিসেবেই করে—’ বাংলাদেশ দল সম্পর্কে কথাগুলো বলেছেন ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচ।

বাংলাদেশ দলের খেলা ফুটবলীয় সৌন্দর্যে মন ভরানোর মতো নয়। দলীয় রক্ষণটাই জেমি ডের দলটার মূল শক্তি। ফুটবলের তিন প্রধান চরিত্রের একটি ‘ট্রানজিশন’। অর্থাৎ বল হারালে বা হারানো অবস্থা থেকে পেলে, দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া। আগে বল হারানোর পর গুছিয়ে নিতে অনেক সময় নিত বাংলাদেশ দল।

ম্যানেজার ইকবাল হোসেনের সঙ্গে জাতীয় দলের ফুটবলাররা।
ছবি: বাফুফে

বর্তমানে এ জায়গাতে অনেক উন্নতি করেছে ফুটবলাররা। শৃঙ্খলিত হয়ে প্রতিপক্ষকে থামানোর জন্য একসুতায় নিজেদের গাঁথা। ডি-বক্সের সামনে বিপজ্জনক মাঝ করিডরে প্রতিপক্ষকে কোনো জায়গা না দেওয়া, বিপজ্জনক পাস বন্ধ করা এবং ধাঁধায় পড়েও নিজেরা জমাট থাকা।

ম্যাচের সময় পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে এভাবেই প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে চায় দল। শেষ পর্যন্ত নিজেদের কাজটা বাংলাদেশ করতে পারলে সাধারণত প্রতিপক্ষ ভুল করতে বাধ্য হয়। সে সুযোগটা নেওয়ার সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশ।

ভারতের অলআউট ফুটবল

ভারতের এখন একমাত্র লক্ষ্য, কোনোভাবে হাতে থাকা বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচগুলো জিতে গ্রুপে তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের সুযোগ করে নেওয়া। ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচের কথাতেই স্পষ্ট বাংলাদেশের বিপক্ষে অলআউট আক্রমণনির্ভর ফুটবল খেলবে তারা। যেভাবে কলকাতাতেও খেলেছিল ভারত।

ভারতের অলআউট ফুটবল হতে পারে বাংলাদেশের প্রতি–আক্রমণনির্ভর ফুটবলের জন্য সবচেয়ে আদর্শ। কলকাতার ম্যাচটিই তার প্রমাণ। অলআউট ফুটবলে ভারতের রক্ষণভাগ ওপরে উঠে এলে পেছনে অনেক বড় জায়গা তৈরি হয়। দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামের মাঠটি বড় হওয়ায় সে জায়গা ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে আরও বেশি। বাংলাদেশের কোচ জেমি ডের মাথায় ঘুরছে সেই পরিকল্পনা।

ভারতের বিপক্ষে আজ কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে তারিক কাজীর (বাঁয়ে)।
ছবি: বাফুফে

আফগানিস্তান ম্যাচের অনুপ্রেরণা

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ড্র বলে নয়। পিছিয়ে পড়ে ম্যাচের শেষের দিকে গোল করে ফিরে আসা যায়, এই আত্মবিশ্বাসটা তাতিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সে ম্যাচে শেষ দিকে যেভাবে বাংলাদেশ ফিরে এসেছিল, তা ভারত ম্যাচের জন্য অনুপ্রেরণা হয়েই এসেছে। আফগান ফুটবলারদের তুলনায় ভারতীয় ফুটবলাররা শারীরিকভাবেও আছেন অনেক পিছিয়ে। সব মিলিয়ে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচটি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে জামাল ভূঁইয়াদের।