যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা আবার ফিরে এল রিয়াল তারকার জীবনে

রিয়ালের হয়ে ভালো পারফরম্যান্সও মাঠের বাইরের আলোচনা থামাতে পারছে না।ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০১৫ সালের ঘটনা। ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন না তিনি, তবু এর জের টানছেন পাঁচ বছর ধরে। সতীর্থ ম্যাথু ভালবুয়েনার এক স্পর্শকাতর ভিডিও পেয়ে যায় দুই ব্যক্তি। সে ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন করিম বেনজেমা। সেই জড়িয়ে পড়া তাঁর ক্যারিয়ারকেই বদলে দিয়েছে। ফ্রান্স দলের মূল স্ট্রাইকার ছিলেন। কিন্তু সে ঘটনায় জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছেন। খেলতে পারেননি ২০১৬ ইউরো। ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যও হতে পারেননি এ ঘটনার কারণেই।

ভালবুয়েনার সে ঘটনায় এখনো শাস্তি পেতে হচ্ছে বেনজেমাকে। সতীর্থকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ উঠেছিল বেনজেমার বিপক্ষে। সেটা প্রমাণিত হয়নি আগে। এ ঘটনায় ভালবুয়েনা পরে মিটমাটের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত যে সে ঘটনা ভোলেনি। সে ঘটনার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে আদালতে। বেনজেমাকে আবার শুনানিতে ডেকেছে ফ্রেঞ্চ আদালত।

ফ্রান্স দলে যখন সতীর্থ ছিলেন দুজন।
ফাইল ছবি: এএফপি

২০১৫ সালে দুজন ব্যক্তি ভালবুয়েনার স্পর্শকাতর ভিডিও পেয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করে। বেনজেমার দাবি, জাতীয় দল সতীর্থ ও বন্ধুকে ঝামেলার হাত থেকে বাঁচাতে এ নিয়ে কথা বলেন ভালবুয়েনার সঙ্গে। কিন্তু এ ঘটনায় পরে সন্দেহের তির বেনজেমার দিকেই যায়।

বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করা বেনজেমাকে আবার শুনানিতে ডাকায় তাঁর আইনজীবী সিলভিয়ান করমিয়ের বেশ ক্ষুব্ধ। করমিয়েরের ভাষায়, ‘এটা (ট্রায়ালে নেওয়া) হাস্যকর এবং অন্যায়। বেনজেমা দোষী হওয়ার মতো কিছু করেননি।’

২০১৫ সালের নভেম্বরে এ ঘটনায় ভার্সেইয়ে এক রাত জেলহাজতেও কাটাতে হয়েছিল বেনজেমাকে। তখন বেনজেমা বলেছিলেন, ‘বড় কোনো ভুল–বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমি শুধু ম্যাথুকে সাবধান করার চেষ্টা করেছিলাম। ওকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কারণ, ওরা আমার সঙ্গেও এমন কিছু করেছিল। ওর সঙ্গে আমি ফ্রান্স দলে খেলেছি এবং ও একজন বন্ধু।’ বেনজেমা দাবি করেছেন, তিনি ওই ভিডিও দেখেননি। কিন্তু যারা ব্ল্যাকমেল করছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন বেনজেমার এক ছোটবেলার বন্ধু করিম জেনাতি। জেনাতিই বলেছিলেন, পরিস্থিতি গুরুতর।

রিয়ালের জার্সিতে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েও জাতীয় দলে ফেরা হচ্ছে না বেনজেমার।
ছবি: রয়টার্স

‘আমার বন্ধু করিম যা বলেছে, সেটাই শুধু ওকে জানিয়েছিলাম। কারণ সে আমার সেরা বন্ধু এবং তাকে বিশ্বাস করি’, বলেছিলেন বেনজেমা। কিন্তু জেনাতির সঙ্গে কথোপকথনে ভালবুয়েনাকে নিয়ে মজা করতে শোনা গিয়েছিল বেনজেমাকে এবং সমকামী বলে গালি দিতেও দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গেও নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন বেনজেমা, ‘পুরো বক্তব্য শুনলেই দেখবেন আমি রসিকতা করছিলাম এবং আমি ওকে সাহায্য করতেই চেয়েছিলাম। ওকে সাহায্য করার চেষ্টার মধ্যে আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি খুবই বিরক্ত ছিলাম। ভেবেছি ভালবুয়েনা আমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে বলেছে। যা-ই হোক, এ শব্দটা আমি বন্ধুদের কাছে যে কারও ব্যাপারেই বলি। আমার প্রজন্মের কাছে এটা কোনো অপমানজনক শব্দ নয়।’

এসব ব্যাখ্যাতেও লাভ হয়নি। ২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর ফ্রান্স দল থেকে ছিটকে পড়েন বেনজেমা। ২০১৪ বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা রাখা এক খেলোয়াড়কে বাদ দিতে দুবার ভাবেনি ফ্রান্স দল। ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন প্রধান নোয়েল লো গ্রায়েত বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে ওর যাত্রা শেষ হয়ে গেছে।’

এরপর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্যারিয়ার–সেরা পারফরম্যান্স করেও আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি বেনজেমা। এ ব্যাপারে যে ভালবুয়েনার ওপর রাগ পুষে রেখেছেন, সেটা টের পাওয়া গেছে কয়েক বছর আগে। নিজের সে ঘটনা ভুলে ভালবুয়েনা আবার শান্তির ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বেনজেমার সঙ্গে দেখা হলে হাত মেলাবেন তিনি। জবাবে বেনজেমা বলেছিলেন, ‘তোমার হাত তোমার কাছেই রাখো।’