রবিনিও সান্তোসে বেতন পাবেন মাসে ২৩ হাজার টাকা

রবিনিওর গল্পটা অপূর্ণই থাকল ব্রাজিলের জার্সিতে।ছবি: টুইটার

নেইমার তাঁর ভক্ত ছিলেন। শুধু নেইমার কেন, এ প্রজন্মের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কিংবা রদ্রিগো গোয়েসের মতো হাজারো ব্রাজিলিয়ান তরুণ ফুটবলারের আদর্শ রবিনিও। পায়ের দক্ষতা আর ড্রিবলিং ভালোবাসেন এমন কারও পক্ষেই রবিনিওকে ভালো না বেসে উপায় নেই। সেই রবিনিওর ক্যারিয়ার পথটা যেন ঘুড়ির মতো। শুরুতেই অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছিল, এর পর সুতা যে কাটল; গোত্তা খেয়ে শুধু নামছে নিচেই।

এক সময় রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও এসি মিলানে আলো ছড়ানো রবিনিও গত কয়েক বছর চীন, ব্রাজিল ও তুরস্কে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সে অধ্যায় পাড় করে আবার ব্রাজিলে ফিরেছেন, নিজ ঘরে। যে ক্লাবে প্রথম সবার নজর কেড়েছিলেন, হয়েছিলেন কয়েক প্রজন্মের ফুটবলারের আদর্শ, সেই সান্তোসেই । নিজের নীড়ে ফেরার আনন্দ-মুহূর্তে ক্লাবের কাছ থেকে যে বেতনটা পাচ্ছেন, সেটাই চমকে দিচ্ছে সবাইকে। সান্তোসের কাছ থেকে মাসে ২৭১ ডলার পাবেন রবিনিও। বাংলাদেশি মূল্যমানে ২২ হাজার ৯৮০ টাকার মতো এই বেতনও হয়তো পেতেন না। কিন্তু ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী, একজন চাকুরে এর চেয়ে কম বেতনে কাজ করতে পারেন না।

১৯ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন। স্প্যানিশ পরাশক্তিদের ১০ নম্বর জার্সি পরার গৌরব সে বয়সেই হয়েছে। জিদান-রোনালদো-কার্লোসের ড্রেসিংরুমেও আলো কেড়েছিলেন। কিন্তু এমন দারুণ শুরুটা ব্যর্থ হয়েছে মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডে। রেকর্ড গড়ে রিয়াল থেকে গিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। কিন্তু ছন্নছাড়া রাত্রি জীবনের প্রভাব পড়ল তাঁর পারফরম্যান্সে, দেড় বছরেই ব্রাত্য হয়ে পড়েন। ধারে খেলতে যান সান্তোসে। এরপর আবার এসি মিলানে আশ্রয়। সেখানেও ফর্ম ফিরে পাননি। আবারও সান্তোসেই ফিরেছিলেন। সেবারও ধারেই এসেছিলেন। এর পর তো মূল পতনের শুরু। ত্রিশ ছুতে না ছুতে চীনে গেলেন, আবার ব্রাজিলে ফিরেছিলেন আতলেতিকো মিনেইরোর জার্সিতে। শেষ দু বছর কাটিয়েছেন তুরস্কে।

গত মৌসুমে খেলেছেন ইস্তাম্বুল বাশেকশেহিরে। সুপার লিগ জিতে ক্লাবটি চ্যাম্পিয়নস লিগেও চলে এসেছে। তবে এতে রবিনিওর কোনো অবদান ছিল না। চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্বের দুই ম্যাচ সহ ক্লাবের জার্সিতে খেলেছেন ৯৪৪ মিনিট। কোনো গোল পাননি, গোলে অবদানও রাখেননি। পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লাইপজিগের মতো দলের গ্রুপ সঙ্গী হওয়ার পরও রবিনিওর মতো অভিজ্ঞ একজনকে ছেড়ে দিতে দ্বিধা হয়নি ক্লাবটির।

নতুন পেলে ট্যাগটা পেলের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন রবিনিও।
ছবি: টুইটার

রবিনিও তাই ফিরেছেন ব্রাজিলে। পাঁচ মাসের জন্য সেই সান্তোসেই ফিরেছেন ৩৬ বছর বয়সী। এর পেছনে আর্থিক যে কোনো কারণ নেই সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। মাসে ২৭১ ডলার যে ইউরোপ দূরে থাক, বাংলাদেশের প্রথম বিভাগের কোনো ফুটবলারও আয় করেন না। রবিনিওর বেতনটা কত কম সেটা বোঝাতে একটা তুলনা টানা যাক। যে ভিনিসিয়ুস বা সান্তোসেরই রদ্রিগো তাঁর খেলা দেখে বড় হয়েছেন, তাঁর ড্রিবলিং ও স্কিল দেখে বিভোর থাকেন, আদর্শ মানেন, সেই দুই তরুণ রিয়াল মাদ্রিদে বার্ষিক ৪০ লাখ ইউরো বা ৪৭ লাখ ডলারের বেশি আয় করেন। অর্থাৎ, এ দুজন ঘণ্টায় পান ৫৩৮ ডলারের কিছু বেশি। ১৯ ও ২০ বছর বয়সী দুই তরুণ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ঘণ্টায় যা আয় করেন, রবিনিওর সেটা সান্তোসের দুই মাসের বেতনের প্রায় সমান! আর নেইমার পিএসজিতে রবিনিওর মাসিক বেতন বুঝে নেন প্রতি চার মিনিটেই।

রবিনিওর এমন সিদ্ধান্তের পেছনে অবশ্য মহৎ এক উদ্দেশ্য আছে। পেলে, রবিনিও, নেইমার ও রদ্রিগোদের ক্লাব ভয়াবহ আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্লাবকে আর্থিক এই দুর্দশার হাত থেকে বাঁচাতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছেন রবিনিও। গত শুক্রবার ক্লাব ওয়েবসাইটে বলেছেন, ‘আমি সর্বনিম্ন বেতনে খেলব কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এখানে খেলতে পারা। আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে খুব ভালো আছি। অবশ্য পুরোপুরি ছন্দে ফিরতে সময় লাগবে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওটাও পেয়ে যাব।’

ক্যারিয়ারে কম জার্সি পরেননি রবিনিও।
ছবি: টুইটার

নিজের ছোটবেলার ক্লাব সান্তোস। এ ক্লাবে খেলেই বিশ্ব ফুটবলের নজরে এসেছিলেন। তাই এ ক্লাবকে কিছু দিতে পেরেই খুশি রবিনিও, ‘এখানে অনেক ভালোবাসার স্মৃতি আছে আমার। সমর্থকেরা নিশ্চিত থাকতে পারেন, সান্তোসকে মাঠ ও মাঠের বাইরে সাহায্য করার জন্য আমি আমার সেরাটা দেব। খুব কঠিন আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সান্তোস। এখনই সময় যারা সাহায্য করতে পারে, তাদের কিছু করার। আমাকে সব দিয়েছে যে ক্লাব তাকে সাহায্য করতে চাই। সান্তোস আমার জন্য সব সময় অনেক কিছু করেছে, সে তুলনায় আমি খুবই অল্প কিছুই ফেরত দিচ্ছি।’

সান্তোস যে আর্থিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে রবিনিওর এ বিসর্জনেই চলবে না। ক্লাবের বর্তমান সব খেলোয়াড়কেই হয়তো এ কাজ করতে হবে। অনেক দেনা হয়ে গেছে ক্লাবটির। এতটাই বাজে পরিস্থিতি যে ফিফার কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞায় আসতে পারে। চিলির ক্লাব হুয়াচিপাতো ৩৪ লাখ ডলার পায় সান্তোসের কাছে। ভেনেজুয়েলার স্ট্রাইকার জেফারসন সোতেলদোকে কেনার সময় এ অর্থ বাকি রেখেছিল সান্তোস। ওদিকে কলম্বিয়ার ক্লাব আতলেতিকো ন্যাসিওনালের দাবি ফিলিপে অ্যাগুলারকে বিক্রির প্রাপ্য ৭ লাখ ৭৪ হাজার ডলার এখনো বুঝে পায়নি তারা।