রামোস না থাকলে রিয়ালের হারই যেন নিয়তি

চোটের কারণে শাখতারের বিপক্ষে খেলতে পারেননি সের্হিও রামোস।।ছবি: টুইটার

শাখতার দোনেৎস্কের মুখোমুখি হওয়ার আগে লা লিগায় সর্বশেষ কাদিজের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সে ম্যাচে হাঁটুর চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন রিয়াল অধিনায়ক সের্হিও রামোস। কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে রামোসকে খেলানোর ঝুঁকি নেননি জিনেদিন জিদান। পরশু ‘এল ক্লাসিকো’—তার আগে রক্ষণভাগের স্তম্ভকে বিশ্রাম দিতে চেয়েছেন রিয়াল কোচ। জিদান নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিলেন তাঁর অধিনায়ককে রেখে মাঠে নামাটা এখন একরকম ‘অভিশাপ’।

কাদিজের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠ ছাড়ার পর রিয়াল ডাগআউটে কাল মুখ ভার করে বসেছিলেন রামোস। করোনা মহামারির মধ্যে তাঁর মুখের কালো ‘মাস্ক’টা যেন রূপক—মাঠে সতীর্থ ডিফেন্ডাররা ভুলের পর ভুল করে যাচ্ছেন, অথচ তিনি কিছু করতে পারছেন না! এমন শোক রামোসের মতো রিয়াল অন্তঃপ্রাণ সেনানীর জন্য সহ্য করাও কঠিন। কাল তো ইউরোপের মঞ্চে শাখতারের মতো সাদামাটা একটা দল কি না প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গেল রিয়ালের তারকাসমৃদ্ধ রক্ষণভাগের বিপক্ষে! ফলটা শেষ পর্যন্ত ৩-২ ব্যবধানের পরাজয় হলেও হার তো হারই—সেখানে আবার যদি রক্ষণ দেয়ালের অসংখ্য ‘ফুটো’(পড়ুন ভুল) বেরিয়ে পড়ে তাহলে রামোসের মুখে শোকের কালো মাস্কটা যথার্থই মনে হয়।

বিষয়টি রিয়াল সমর্থকদের জন্যও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা। রাফায়েল ভারান, এদের মিলিতাও, ফারলাঁ মেন্দি এমন অভিজ্ঞ মার্সেলোরা আছেন, তবু রামোস না থাকলে সাম্প্রতিক সময়ে জিততে পারে না রিয়াল। রামোস না থাকলে ইউরোপের ময়দানে সবচেয়ে সফল ক্লাবটাই সেই একই রণক্ষেত্রে হয়ে পড়ে দিশাহীন নাবিকের তরী। দলকে উদ্দীপ্ত করার মতো কোনো ‘নেতা’ নেই, নিজেদের রক্ষণভাগে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের জন্য ত্রাসের সঞ্চার করার মতো কেউ থাকে না! রামোসের বয়স ৩৪ বছর হয়ে গেলেও এই কাজে এখনো তাঁর বিকল্প বের করতে পারেনি রিয়াল। কাল শাখতারের বিপক্ষে হারটা তারই সাম্প্রতিকতম প্রমাণ।

রামোসকে ছাড়া রক্ষণভাগে ভুগছে রিয়াল।
ছবি: টুইটার

পরিসংখ্যানও রামোসহীন রিয়ালের দুর্দশার প্রমাণ দিচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে রামোসকে বাইরে রেখে রিয়ালের খেলা সর্বশেষ ৮ ম্যাচের মধ্যে ৭টিতেই হার দেখতে হয়েছে। রামোসকে ছাড়া ইউরোপে রিয়ালের ‘কালো অধ্যায়’ শুরু হয়েছে ২০১৭-১৮ মৌসুম থেকে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে রামোসকে ছাড়াই জুভেন্টাসের মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল। প্রথম লেগে ৩ গোলের ব্যবধান ঘুচিয়ে ফিরতি লেগে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ইতালিয়ান ক্লাবটি। ভাগ্যিস, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গোল করে জিতিয়েছিলেন। পরের মৌসুমে অবশ্য রোনালদো ছিলেন না। রিয়াল তখন থেকেই রামোসের ওপর নির্ভর করছে ভীষণভাবে। সে মৌসুমে (২০১৮-১৯) গ্রুপপর্বে সিএসকেএ মস্কোর বিপক্ষে দুই ম্যাচেই রামোসকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন জিদান। ওই দুই ম্যাচে রিয়ালকে মোট ৪ গোল দিয়েছিল রাশিয়ান ক্লাবটি।

শেষ ষোলোয় ফিরতি লেগে আয়াক্সের বিপক্ষেও মাঠে নামতে পারেননি রামোস। নিষেধাজ্ঞা ছিল। ডাচ ক্লাবটি রিয়ালের রক্ষণভাগ ছিন্নভিন্ন করে ৪ গোল দিয়েছিল। পরের মৌসুমে প্যারিসে পিএসজির মাঠে ৩-০ গোলে হারে রিয়াল। নিষেধাজ্ঞার কারণে সে ম্যাচেও ডাগআউটে বসে হার দেখতে হয় স্প্যানিশ ডিফেন্ডারকে। এরপর শেষ ষোলোয় ফিরতি লেগে নিষিদ্ধ থাকা রামোসকে ডাগআউটে দর্শক বানিয়ে রিয়ালকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে ফেলেছিল ম্যানচেস্টার সিটি।

এখন চলতি মৌসুমেও এই অভিশাপে কপাল পুড়ছে রিয়াল। বলা ভালো, পুড়িয়ে নিচ্ছে। রামোসের মতো নেতার বিকল্প যে এখনো তৈরি করতে পারেনি রিয়াল।