রামোস যাচ্ছেন, নিশ্চিত করে দিল রিয়াল মাদ্রিদ

সের্হিও রামোস।ছবি: টুইটার

এমন কিছু হবে, তা অনেক আগে থেকেই অনুমিত ছিল। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে মাঝেমধ্যে চুক্তি নবায়ন নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ও সের্হিও রামোস - দুই পক্ষের মতের মিলের গুঞ্জন শোনা গেছে বটে। কিন্তু সের্হিও রামোস আর রিয়াল মাদ্রিদের পথ যে দুদিকে বেঁকে যাচ্ছে, তা-ই প্রায় নিশ্চিত করে জানিয়ে রেখেছিলেন ইউরোপের অনেক সাংবাদিক।

অবশেষে প্রায় নিশ্চিত ব্যাপারটা আনুষ্ঠানিক হয়ে গেল। রিয়াল মাদ্রিদ আজ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়ে দিয়েছে, রামোস ক্লাব ছাড়ছেন। আগামীকাল তাঁর বিদায়ী সংবর্ধনাসূচক সংবাদ সম্মেলনে হবে।

‘রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব ঘোষণা করছে যে আগামীকাল, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের অধিনায়ক সের্হিও রামোসকে সম্মান প্রদর্শন ও বিদায় জানানোর অনুষ্ঠান হবে। যে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন আমাদের ক্লাবের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ’ – রিয়াল মাদ্রিদের বিবৃতিতে লেখা।

অনুষ্ঠান শেষে রামোস অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়ে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

আনুষ্ঠানিক এই বিবৃতির মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে গেল রামোস আর রিয়ালের ১৬ বছরের সম্পর্ক। যে সম্পর্কে প্রাপ্তির আনন্দ ছিল, শিরোপার পর শিরোপার উদ্‌যাপন ছিল, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-ইকার ক্যাসিয়াস-কাকা-রাউল গঞ্জালেস-জিনেদিন জিদানদের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গ ছিল। বার্সেলোনাকে মাঝে কিছুদিন চূড়ায় উঠতে দেখার হতাশা ছিল, সেটি কাটিয়ে আবার রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘রাজা’র সিংহাসনে বসতে দেখার তৃপ্তি ছিল।

রামোস যখন রিয়ালে গিয়েছিলেন।
ছবি: টুইটার

সব মিলিয়ে রিয়ালে ৬৭১ ম্যাচটি ছিল। তাতে ১০১টি গোল ছিল। পাঁচটি লিগ শিরোপা ছিল। আর রিয়াল অধ্যায়ে ফিরে তাকালে রামোসের চোখে সবচেয়ে বেশি উষ্ণতা এনে দেবে যে স্মৃতি, সেই চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ছিল। এর মধ্যে তিনটি এসেছে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে টানা তিন মৌসুমে, চারটি এসেছে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পাঁচ বছরে।

একদিক থেকে দেখলে ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে রিয়ালের এই অবিশ্বাস্য স্বপ্নযাত্রার শুরুও রামোসের কল্যাণেই। ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে যখন রিয়াল হেরেই যাবে বলে মনে হচ্ছিল, ৯২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে টনি ক্রুসের কর্নারে লাফিয়ে উঠে গোল করলেন রামোস! লিসবনে সেদিনের ফাইনাল অতিরিক্ত সময় শেষে ৪-১ গোলে জেতে রিয়াল।

এই যে তাঁর সময়ে এত এত ট্রফি, লিগ-চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতল রিয়াল, সেই আত্মবিশ্বাস তো রামোসেরই বুনে দেওয়া!

রিয়ালে রামোসের কিংবদন্তিতুল্য মুহূর্ত। লিসবনে ২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে এই হেডেই ৯২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান রামোস।
ছবি: টুইটার

কিন্তু কালে কালে বেলা তো কম গড়ায়নি। তাঁর বয়স হয়ে গেছে ৩৫। রিয়ালের সঙ্গে বর্তমান চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ৩০ জুন, কিন্তু সেটির নবায়ন নিয়ে রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে বনাবনি হয়নি রামোসের।

রিয়ালে নতুন নিয়ম করেছেন পেরেজ, ৩০-এর ডানদিকে চলে আসা খেলোয়াড়দের চুক্তি নবায়ন করার ক্ষেত্রে এক বছর করে চুক্তি নবায়ন করা হবে। মিডফিল্ডার লুকা মদরিচের ক্ষেত্রে গত দুই বছর ধরে যা করছে রিয়াল! কিন্তু রামোস এভাবে এক বছর করে চুক্তিতে রাজি নন।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সময়ে বলেছে, রামোস অন্তত দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করতে চেয়েছেন। কিন্তু পেরেজ এক বছরের বেশি দিতে রাজি নন। এদিকে অর্থের হিসাব নিয়েও দুই পক্ষে বেধেছিল বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

শেষ পর্যন্ত কারণ যা-ই হোক, রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তদের বুকে দীর্ঘশ্বাস বইয়ে দেওয়া সত্যিটা এই যে, রামোস চলে যাচ্ছেন। আগামী মৌসুমে হয়তো তাঁকে পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি কিংবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো কোনো দলে দেখা যাবে!