রামোস-সালাহ যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব হচ্ছে না

২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের সেই মুহূর্ত
ছবি: এএফপি

সবাই প্রথমে ব্যাপারটাকে ‘এপ্রিল ফুল’ জাতীয় মশকরা হিসেবেই ভেবেছিলেন। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, আরও সবাই নিশ্চিত হতে থাকেন—খবরটা কোনো মশকরা নয়। রিয়াল মাদ্রিদ আনুষ্ঠানিকভাবে কালকেই জানিয়ে দিয়েছিল, মাংসপেশির চোটে পড়েছেন কিংবদন্তি অধিনায়ক সের্হিও রামোস। মৌসুমের এ পর্যায়ে এসে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়াড়ের চোটের খবর কোনো রিয়াল সমর্থকই শুনতে চাননি। মনেপ্রাণে প্রার্থনা করেছিলেন, খবরটা যেন আর দশটা এপ্রিল ফুল মশকরার মতোই হয়।

কিন্তু সেটা হয়নি। গত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রামোস নিজেই নিশ্চিত করেছেন, স্পেনের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে গিয়ে আসলেই চোটে পড়েছেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি ম্যাচ। ওদিকে লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ‘এল ক্লাসিকো’। এই ম্যাচগুলোর ওপরই মূলত নির্ভর করছে এ মৌসুমে রিয়াল আদৌ কিছু জিতবে কি না। ফলে রামোসের চোটের সংবাদটা রিয়াল সমর্থকদের কাছে অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই এসেছে।

রামোসের ট্যাকলে সালাহর সেই চোট ছিল ভয়ংকর।
ছবি: এএফপি

রামোসের চোটের সঙ্গে সঙ্গে আরও নিশ্চিত হলো, রামোস-সালাহ দ্বৈরথের দ্বিতীয় পর্ব এখনই হচ্ছে না। ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ম্যাচের শুরুর দিকেই সালাহকে বাজেভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন রামোস। ফলে সালাহকে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। লিভারপুল সে ম্যাচে ৩-১ গোলে হেরেছিল। ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলটার মনোবলই ভেঙে গিয়েছিল। অনেকের মতে সালাহ থাকলে সে ম্যাচে লিভারপুল হয়তো আরেকটু টক্কর দিতে পারত রিয়ালকে। সেটা হয়নি।

ফলে এবার যখন আবারও কোয়ার্টারে এই দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার ঘোষণা এল, রামোস-সালাহ যুদ্ধের দ্বিতীয় কিস্তি দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলেন সবাই। রামোসের সঙ্গে সালাহর দেখা হলে কী হবে, এবার কী সালাহ রামোসদের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিতে পারবেন কি না, নাকি রামোস আবারও অমন কিছু করে বসবেন—আলোচনা ছিল সর্বত্র।

এমনকি কিছুদিন আগে মাদ্রিদভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সালাহ। যদিও তিনি জানিয়েছিলেন, অতীতচারী হয়ে সে ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চান না তিনি। চোখ রাখতে চান ভবিষ্যতে। রামোসের সঙ্গে কী হবে না হবে, সেটা নিয়ে ভাবতে চান না। যত যা-ই বলুন না কেন, মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রামোসের মতো একজনের না থাকাটা শুধু সালাহ নয়, গোটা লিভারপুল দলকেই স্বস্তি দেবে।

গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে মাঠে থেকে দলকে সাহায্য করতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রামোসের পোস্ট করা বার্তার প্রতিটি শব্দে, ‘সত্যি বলতে কি, গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্য অনেক কঠিন কেটেছে। গতকালের ম্যাচের পর আমি পিচে আরও কিছুক্ষণ ছিলাম, নিজের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছি, তখনই নিজের বাঁ পায়ের পেশিতে একটু ব্যথা অনুভব করি। পরে স্ক্যান করার পর দেখলাম, আমার আসলেই মাংসপেশিতে চোট লেগেছে। এ সময়ে ক্লাবকে সাহায্য করতে না পারার যন্ত্রণা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।’

মাঠে না খেলতে পারলেও মাঠের বাইরে থেকে ঠিকই দলকে সমর্থন জুগিয়ে যাবেন রামোস, ‘আমি এখন যা করতে পারি তা হলো, দলকে সমর্থন করা, দলকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসা।’

তবে রামোস না থাকলে রিয়ালের জন্য যে ভালো কিছু হয় না, এ কথা নতুন নয়। এর আগে চোট কিংবা নিষেধাজ্ঞার কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে রামোস যখনই ছিলেন না, ভুগেছে রিয়াল। গত বছর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে, তার আগেরবার আয়াক্সের বিপক্ষে। রামোসহীন রিয়াল ভারান, মিলিতাও কিংবা নাচো ফের্নান্দেসকে দিয়েও পরাজয় ঠেকাতে পারেনি।

ফলে দলের অধিনায়ককে ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ন সময়ে রিয়াল কীভাবে খেলবে, প্রত্যাশিত ফলাফল পাবে কি না, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।