রায়ান রেনল্ডস কেন ফুটবল ক্লাব কিনতে চাচ্ছেন?

ফুটবল ক্লাবের মালিক হিসেবে কেমন হবেন রেনল্ডস?ছবি: টুইটার

রায়ান রেনল্ডস ভালো অভিনেতা। পর্দায় দারুণ সব অ্যাকশন দেখাতে জানেন, জানেন ব্যঙ্গাত্মক কথা বলে দম ফাটানো হাসি বের করতে। আর জানেন কীভাবে নিজের ব্যক্তিত্ব ও সেন্স অব হিউমারকে কাজে লাগিয়ে একটি ব্র্যান্ডের জন্ম দিতে। মাত্র দুই বছরের জন্য একটি পানীয় পণ্যের অংশ হয়ে সেটাকে বিশ্ববিখ্যাত বানিয়ে ফেলেছিলেন দারুণ সব মজার বিজ্ঞাপন দিয়ে। তারকাখ্যাতির চেয়েও সেন্স অব হিউমার যে বিজ্ঞাপনের জগতে বড় অস্ত্র হতে পারে, সেটা রেনল্ডসই দেখিয়ে দিয়েছেন।

রেনল্ডসের মতো তারকা এখন ফুটবলে নজর দিয়েছেন। কিছুদিন পরপরই বড় বড় তারকাদের সঙ্গে ফুটবল ক্লাবের মালিক হওয়ার গুঞ্জন ছড়ায়। তবে রেনল্ডসের ক্ষেত্রে এ গুঞ্জন অনেকটা বাস্তব হওয়ার পথে। ওয়েলশের ক্লাব রেক্সাম এএফসি কিনতে চান ‘ডেডপুল’খ্যাত এই অভিনেতা। কিন্তু রেনল্ডসের মতো মালিক পাওয়ার সম্ভাবনাতেই ভুলছে না ক্লাবের সমর্থকেরা। রেনল্ডস ও তাঁর ব্যবসায়িক সঙ্গী অভিনেতা রব ম্যাকেলহেনির এভাবে ফুটবল ক্লাব কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন সমর্থকেরা। তাই রেনল্ডসকে জানাতে হয়েছে, কেন রেক্সামকে কিনতে চাইছেন তাঁরা।

নতুন মালিক পাবেন রেক্সামের খেলোয়াড়েরা?
ছবি: টুইটার

ইংলিশ ফুটবলের পঞ্চম স্তরে আছে রেক্সাম। ২০০৮ সালে সর্বশেষ ফুটবল লিগে (প্রথম চার স্তর) দেখা গেছে তাদের। এরপর থেকেই ন্যাশনাল লিগে খেলছে তারা। এমন দুর্দশার মধ্যেও চাইলেই রেক্সামকে কিনতে পারছেন না রেনল্ডস। কারণ, দুর্দশার মধ্যে গেলেও সোনালি অতীতকে ভোলেনি ক্লাব। ওয়েলশের ইতিহাসের সবচেয়ে পুরোনো ক্লাব তারা। বিশ্বে রেক্সামের চেয়ে বেশি বয়সী ক্লাবই আছে মাত্র দুটি। টানা ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে কোনো মালিকে আর আস্থা রাখতে পারছেন না সমর্থকেরা। ২০১১ সাল থেকেই ক্লাবটির মালিকানা রেক্সাম–সমর্থকদের ট্রাস্টের।

রেনল্ডস ও ইটস অলওয়েজ সানি ইন ফিলাডেলফিয়ার ম্যাকেলহেনিকে পরিষ্কারভাবেই জানাতে হয়েছে নিজেদের উদ্দেশ্য। রোববার ট্রাস্টের সদস্যদের কাছে নিজেদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন রেনল্ডস। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো একটি ক্লাবকে বিশ্ববিখ্যাত এক ব্র্যান্ড বানাতে চাচ্ছেন রেনল্ডস, ‘পৃথিবীর তৃতীয় প্রাচীনতম ক্লাব এটা। সারা বিশ্বে এ ক্লাবের আবেদন না থাকার কোনো কারণ দেখছি না। আমরা রেক্সামকে বৈশ্বিক শক্তি বানাতে চাই।’

ট্রাস্টের সদস্যদের সামনে নিজেদের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন রেনল্ডস ও ম্যাকেলহেনি। নিজের রসবোধের পরিচয় দিয়ে রেনল্ডস প্রথমেই বলে দিয়েছেন, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চেস্টার সিটিকে (ইংলিশ ফুটবলের ষষ্ঠ স্তরের ক্লাব) সব সময় হারাবেন, এ অঙ্গীকার করেই নেমেছেন তাঁরা। সে সঙ্গে রেক্সাম ক্লাব ও ক্লাবের স্টেডিয়ামের ঐতিহ্য ধরে রাখা হবে। ১৫৬ বছরের ইতিহাসের কোনো কিছু ভুলে যাবে না মালিকপক্ষ। ক্লাবের সঙ্গে জড়িত সবার ও ওই অঞ্চলের মূল্যবোধে জোর দেওয়া হবে। ক্লাবের প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসা যে এই অঞ্চলের সবার রক্তে আছে, সেটা জেনেই তাঁরা এসেছেন। নিজেদের ক্ষমতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে রেক্সামকে বৈশ্বিক শক্তি বানাবেন। তবে সেটা ক্লাবের মূল্যবোধ ধরে রেখেই। আর ক্লাবের সমর্থকেরা যা চান, সেটা এনে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। আর সেটা হলো জয়ের ধারায় ফেরা।

ফুটবলে বাইরের বা তারকাধীন মালিকানার ফল সব সময় ভালো হয়নি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে। যারা ক্লাবের মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে আর্থিক দিকটাতেই নজর বেশি দিচ্ছে। স্পেনে ভ্যালেন্সিয়ার মতো ক্লাব প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছে। রেক্সামের ক্ষেত্রে এমন কিছু হবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছেন রেনল্ডস। দাবি করেছেন, ‘রেক্সামকে আমাদের অংশ নয়, আমরা রেক্সামের গল্পের অংশ হতে চাই।’

রেনল্ডসরা এখন পর্যন্ত ক্লাবের সমর্থকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। ৯৫ শতাংশ সমর্থক রেনল্ডসদের সঙ্গে ক্লাবের মালিকানা নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়েছিলেন। সমর্থকদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তাঁদের উত্তর শুনে নাকি সমর্থকেরা মুগ্ধ। হলিউডের কোনো খেয়ালি মালিক নয়, সত্যিকারের কোনো ফুটবলভক্ত বলেই নাকি মনে হয়েছে রেনল্ডস, ম্যাকেলহেনিকে। এক সমর্থক জানিয়েছেন, ‘ওরা নিজেদের কাজটা সেরে এসেছে। উপস্থাপনাটা অনবদ্য ছিল। একজন ফুটবল ভক্ত হিসেবে যা শুনতে চাই, তাই বলেছে। মনে হচ্ছিল স্বপ্নের দেশে চলে গিয়েছি।’

ক্লাবের মালিকানা পেলেও স্টেডিয়ামের মালিকানা পাবেন না রেনল্ডস।
ছবি: রেক্সাম ওয়েবসাইট

রেনল্ডসের মতো অভিনেতা দর্শকদের উপস্থাপনায় মন্ত্রমুগ্ধ করবেন, এ আর এমন কী! তাই আরেক সমর্থক একটু সাবধানী, ‘আমি অত নেতিবাচক নই। তবে ওরা চলে গেলে কী হবে, এ নিয়ে চিন্তিত।’ তাঁর চোখে দুই হলিউডের তারকা খুবই বুদ্ধির সঙ্গে ভালো উপস্থাপনা করেছেন। ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও ক্লাবের হয়ে মাঠে ও ডাগআউটে থাকা ডিক্সি ম্যাকনিল অবশ্য মুগ্ধ এ দুজনের উপস্থাপনায়। ক্লাবের সদস্যদের সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব ফেলতে চান না বলে সরাসরি কিছু বলেননি। তবে জানিয়েছেন, ক্লাব সম্পর্কে সবকিছু জেনেই এসেছেন রেনল্ডস। আর ফুটবলে ভালো করতে হলে অর্থের প্রয়োজন।

এখন রেনল্ডসরা রেক্সামের মালিক হতে পারবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন সদস্যরা। ট্রাস্টের ২ হাজার সদস্য এ ব্যাপারে ভোট দিতে পারবেন। তাতে ৭৫ শতাংশ সদস্য যদি ক্লাবের মালিকানা হস্তান্তর করতে রাজি হন, তবে ঐতিহ্যের ভাগীদার হতে পারবেন রেনল্ডস। আর সে ক্ষেত্রে ২০ লাখ পাউন্ড খরচ হবে তাঁদের। রেনল্ডসের জন্য এটা তেমন কিছুই নয়। আর পানীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই রেনল্ডস দেখিয়েছেন, কীভাবে বিনিয়োগ তুলে আনতে হয়।