রিয়াল কেন ছাড়লেন, জানালেন জিদান

রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দিয়েছেন জিনেদিন জিদান।ফাইল ছবি: এএফপি

খেলোয়াড় ও ম্যানেজার হিসেবে সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে জিনেদিন জিদানের সম্পর্ক ২০ বছরের মতো। এই দুই দশকে ফরাসি তারকা রিয়ালের ঘরের ছেলেই হয়ে গেছেন যেন। খেলোয়াড় হিসেবে দুর্দান্ত এক ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন রিয়ালে। এরপর কোচ হিসেবেও গড়েছেন ইতিহাস। খেলোয়াড়ি জীবনের সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেছেন ডাগআউটে দাঁড়িয়ে। সেই ‘ঘরের ছেলে’ জিদানই কয়েক দিন আগে দ্বিতীয়বারের মতো রিয়ালের কোচের পদটা ছেড়ে দিয়েছেন নিজে থেকেই।

কেন ছেড়েছেন, সেটি নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা থাকলেও জিদান এত দিন কিছুই বলেননি। অবশেষে মৌনব্রত ভেঙেছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসকে জানিয়েছেন রিয়াল ছাড়ার কারণ, দীর্ঘ এক চিঠির মাধ্যমে। তাঁর ক্লাব ছাড়ার দায়টা একরকম রিয়ালের কাঁধেই চাপিয়েছেন এই ফুটবল কিংবদন্তি। জানিয়েছেন, প্রিয় ক্লাব তাঁর ওপর আর আস্থা রাখেনি, তাই ক্লাব ছাড়তে বাধ্যই হয়েছেন তিনি, ‘আমি ক্লাব ছেড়েছি, কিন্তু কখনোই অনুশীলন করাতে হাঁপিয়ে উঠিনি। ২০১৮ সালের মে মাসে ক্লাব ছেড়েছিলাম। কারণ, তখন আমার মনে হয়েছিল, আড়াই বছরের সাফল্য এবং এতগুলো শিরোপার পর দলকে উদ্বুদ্ধ করতে নতুন কাউকে দরকার। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার আমি ক্লাব ছাড়ছি, কারণ ক্লাব আমার ওপর সেভাবে আস্থা রাখতে পারছিল না ক্লাব।’

ক্লাব নাকি তাঁর ওপর আস্থা রাখেনি।
ছবি: টুইটার

রিয়ালকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিদানের কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে তেমন সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন জিদান, ‘একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে যেমন সমর্থন দরকার, সেটি আমি পাচ্ছিলাম না রিয়ালের কাছ থেকে। আমি ফুটবল বুঝি। বুঝি রিয়ালের কী কী দরকার। আমি জানি, যখন জেতা যায় না, তখন সরে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু এখানে আমার অর্জনগুলোকে ভুলে যাওয়া হয়েছে।’

রিয়ালের হয়ে দুটি লিগ জিতেছেন, টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার অনন্য কীর্তিও গড়েছেন। তাঁর অর্জন এ যুগে অন্য অনেক কোচেরই নেই। এত অর্জনের পরেও ক্লাব থেকে প্রাপ্য সম্মানটা পাননি জিদান, ‘প্রতিদিন ক্লাবের প্রত্যেকের সঙ্গে আমি সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। আমি জন্মেছি জেতার জন্যই। এখানে এসেছিলাম শিরোপা জেতার জন্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ, জীবন, আবেগের মতো বেশ কিছু জিনিস থাকে, যেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। কোনো না কোনোভাবে আমার ঘাড়ে দোষ চাপানোর একটা প্রবণতা দেখেছি। আমরা সবাই মিলে এখানে যে সাফল্য অর্জন করেছি, আমি সবার চোখে শুধু সম্মানের দৃষ্টিটাই দেখতে চেয়েছিলাম।’

ক্লাব ছাড়তে বাধ্যই হয়েছেন জিদান
ছবি: রয়টার্স

সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে সম্পর্কেও একটু ফাটল ধরেছিল বলে জানিয়েছেন এই কোচ, ‘ক্লাব ও ক্লাবের সভাপতির সঙ্গে কয়েক মাস ধরে আমার যেমন সম্পর্ক, সেটি একটু অন্য রকম হলেই ভালো লাগত। আমি কোনো বাড়তি সুবিধা চাইছি না; আমি কেবল আমাদের সবার অর্জনের স্বীকৃতি চেয়েছিলাম। আজকাল যেকোনো বড় ক্লাবে কোচদের মেয়াদ হয় কমবেশি দুই বছর। এর চেয়ে বেশি দিন থাকতে চাইলে অবশ্যই ক্লাবের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা লাগে। এই সম্পর্কটাই টাকা, খ্যাতি সবকিছুর চেয়ে বড়।’

এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে সাংবাদিকদেরও যে দায় আছে, সেটিও জানিয়েছেন এই ফরাসি কোচ, ‘কয়েকটা ম্যাচ হারলেই সংবাদমাধ্যমগুলো আমার সম্ভাব্য ছাঁটাই নিয়ে যা যা লিখত, তা পড়া খুবই পীড়াদায়ক ছিল। সামনের একটা ম্যাচ হারলে আমি ছাঁটাই হয়ে যাব, এমন একটা খবর ছড়িয়ে পড়ায় আমি আর আমার স্কোয়াডের খেলোয়াড়—সবার মনেই আঘাত লেগেছিল। তার মানে, এই খবর ক্লাবের কেউই সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস করেছে। যার কারণে ক্লাবের সবার মধ্যে একটা নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে, পরিবেশ বিষিয়ে গেছে, ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশেও কিছু বলতে চাই। আমি শতাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা ফুটবল নিয়ে তেমন কথা বলিনি। আমি আপনাদের কিছু শেখাতে চাই না, কিন্তু সব সময় বিতর্কিত বিষয় নিয়ে যদি প্রশ্ন না করতেন, তাহলে ভালো হতো।’

খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ রিয়াল মাদ্রিদকে উপহার দিয়েছেন জিদান। ছবি: টুইটার

তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, জিদান ও তাঁর শিষ্যরা যেকোনো পরিস্থিতিতেই যে নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন, সেটাও বলতে ভোলেননি দুই দফায় রিয়ালকে কোচিং করানো এই কোচ, ‘আমি জানি দল কী চায়। গত ২০ বছরে আমি এটা বুঝেছি যে ক্লাবের ভক্তরা শুধু জিততে চায়—আর সেটিই হওয়া উচিত। কিন্তু এটা মনে রাখা উচিত, আমি ও আমার ক্লাবের খেলোয়াড়েরা সব সময় সর্বোচ্চটুকু দিতে চেষ্টা করেছি। আমি নিশ্চিত করতে পারি, আমরা আমাদের শতভাগ দিয়েছি।’

জিদানের কথাগুলো রিয়াল–সমর্থকদের মনে শেল হয়েই বিঁধবে—এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।