রিয়াল থেকে এসেই বেল দেখলেন বারুদে সনের ৪ গোল

সন-কেইনের সমন্বয় আজ দারুণ ছিল।ছবি: রয়টার্স

তিনি টটেনহামে ফিরছেন, সেটি আগেই নিশ্চিত ছিল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল গতকাল। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে এক মৌসুমের ধারে টটেনহামে এসেছেন গ্যারেথ বেল। এসেই মাঠে নেমে পড়তে পারছেন না অবশ্য, চোট ওয়েলশ ফরোয়ার্ডকে মাঠের বাইরে রাখবে অক্টোবরের আন্তর্জাতিক বিরতি পর্যন্ত।

বেলের বুঝি এখন মনে হচ্ছে, চোটটা না থাকলে, এই মুহূর্তেই মাঠে নেমে পড়তে পারলেই ভালো হতো! বেলের আসার খবরটা তাজা থাকতেই যে টটেনহাম দেখা দিল বারুদে ফুটবল নিয়ে। দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিন করেছেন চার গোল, এই চারটি গোলই গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইংলিশ স্ট্রাইকার ও অধিনায়ক হ্যারি কেইন একটি গোলও করেছেন। চোখধাঁধানো গোল-উৎসবে আজ সাউদাম্পটনের মাঠ থেকে ৫-২ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে জোসে মরিনিওর টটেনহাম!

টটেনহামের আক্রমণের বাঁ পাশে খেলেন সন, মাঝে কেইন। ডান পাশের জায়গাটা একেক সময় একেকজনের দখলে। আজ সেখানে খেলেছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার লুকাস মওরা। তেমন কিছুই করতে পারেননি। ম্যাচ শেষে ফুটবলের বিশ্লেষণাত্মক ওয়েবসাইট হুস্কোরডের রেটিং দেখাচ্ছিল, ম্যাচে সনের রেটিং ৮.৩৭, কেইনের ৮.২৪। আর ডান পাশে মওরার ৬.১৪। কিন্তু এমন বারুদে ফর্মে থাকা সন-কেইনদের সঙ্গে ডান পাশে বেল নামলে কী ভয়ংকর হবে টটেনহাম—আজ ম্যাচের পর এই সুখকল্পনাতেই হয়তো ছিলেন টটেনহাম সমর্থকেরা!

ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিট পর কে ভেবেছিল, টটেনহাম—বিশেষ করে সন—এমন ভয়ংকর হয়ে উঠবেন! ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিট যেন গোল কোনোভাবেই হচ্ছিল না! সন ও কেইন একবার করে বল জালে জড়িয়েছিলেন, দুটিই বাতিল হলো অফসাইডে। সাউদাম্পটনের ড্যানি ইংস এদিকে গোল করলেন, সেটিও বাতিল শট নেওয়ার আগে বল একবার তাঁর বাহুতে লাগায়। কিছুক্ষণ পর সাউদাম্পটনের মুসা জেনেপোর শট ফিরল পোস্টে লেগে।

সাত মৌসুম পর টটেনহামে ফিরেছেন বেল।
ছবি: টুইটার

প্রথম ৩০ মিনিট গোল হয়নি, এরপর শুরু হলো ‘গোলযোগ।’ গোলের পর গোল! ৩২ মিনিটে দুর্দান্ত ‘ফার্স্ট টাচে’র পর দারুণ ফিনিশিংয়ে সাউদাম্পটনকে এগিয়ে দেন লিভারপুল থেকে গত মৌসুমে আসা ইংস। গোলের আগে-পরে ৪-২-২-২ ছকে নামা রালফ হাসনহুটলের সাউদাম্পটনেরই ছিল দাপট। মনে হচ্ছিল, প্রথম ম্যাচে এভারটনের কাছে অসহায় হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও বুঝি ভাগ্য বদলাচ্ছে না মরিনিওর টটেনহামের। কিন্তু প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সনের গোলে সমতায় ফেরে টটেনহাম, আশা ফেরে লন্ডনের ক্লাবটিতে।

বিরতিতে সম্ভবত কৌশল বদলেছেন মরিনিও। সাউদাম্পটনের রক্ষণ একটু উঁচুতে উঠে (হাইলাইন রেখে) খেলছিল, তা দেখে স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন একটু নিচে নেমে খেললেন, আর বাঁ উইং থেকে বারবার সাউদাম্পটনের রাইটব্যাক ও ডানদিকের সেন্টারব্যাকের মাঝ দিয়ে দুরন্ত গতিতে উঠে গেছেন সন। ফল? কেইনের একের পর এক দারুণ পাস, তা ধরে সনের একের পর এক গোল। ৪৭ মিনিটে একটি, ৬৪ মিনিটে প্রিমিয়ার লিগে সনের প্রথম হ্যাটট্রিক পূর্ণ। ৭৩ মিনিটে আবার গোল! সাউদাম্পটন ১: ৪ টটেনহাম। বলা ভালো, সাউদাম্পটন ১: ৪ সন+কেইন!

এর মধ্যে তৃতীয় গোলটিতে তো সনের দিকে না তাকিয়েই মাঝমাঠের একটু ডান দিক থেকে কেইন চোখধাঁধানো থ্রু বাড়ালেন, বাঁ প্রান্ত থেকে দৌড়ে তা ধরে গোল সনের! ৯০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সাউদাম্পটনের দ্বিতীয় গোলটিও গত মৌসুমে আলো ছড়ানো ইংসের। এর মধ্যেই ৮২ মিনিটে নিজের নামের পাশেও গোল যোগ করলেন কেইন।

ম্যাচের পর কেইন বলছিলেন, ‘আমরা জানতাম ওদের রক্ষণের পেছনে অনেক ফাঁকা জায়গা থাকবে। ম্যাচের আগেও এটি নিয়ে কথা বলেছি। একটা পাস তো আমি না তাকিয়েই দিয়েছি, শুধু ফাঁকা জায়গায় ফেলেছি কারণ আমি জানতাম ও (সন) ডিফেন্ডারদের পেরিয়ে দৌড়ে যাবে।’ আর দুজনের দারুণ রসায়নে সন্তুষ্টি জানিয়ে বিনয়ী সন পাশে থাকা কেইনকে দেখিয়ে বললেন, ‘প্রিমিয়ার লিগে চার গোল করা অনেক বড় সম্মানের। চারটি দারুণ অ্যাসিস্ট এসেছে এই ছেলেটার (কেইন) কাছ থেকে। আমার মনে হয় ওরই আজ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল।’
এমন পারফরম্যান্সের পর রেকর্ড যে অনেক হবে, তা নিয়ে সংশয় সামান্যই। দুজনের রসায়ন স্পষ্ট এই রেকর্ডে—প্রিমিয়ার লিগে এই প্রথম একই ম্যাচে কোনো এক খেলোয়াড় আরেক খেলোয়াড় চার গোলে ‘অ্যাসিস্ট’ করলেন। বাকি দুই রেকর্ডে অবশ্য সনের চেয়েও কেইনের দাপট বেশি। চার গোল করার চেয়ে চারটি করানো যে প্রিমিয়ার লিগে বেশি বিরল। প্রিমিয়ার লিগে এক ম্যাচে চার অ্যাসিস্ট করা ষষ্ঠ খেলোয়াড় কেইন, ইংলিশদের মধ্যে প্রথম। অথচ এই কেইনই গত মৌসুমে পুরো লিগ মিলিয়ে গোল করিয়েছেন মাত্র দুটি!