রিয়ালের জয়ে আবারও ভিএআর নিয়ে কানাকানি

যোগ করা সময়ে গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে করিম বেনজেমাছবি: এএফপি

জিনেদিন জিদানের এ নিয়ে কথা বলতে ভীষণ বিরক্তি। মাঠে সিদ্ধান্ত নেওয়া রেফারির কাজ ভুল-শুদ্ধ যা-ই হবে, তা রেফারি বুঝবেন। এ নিয়ে এত প্রশ্ন করার কোনো অর্থ দেখেন না রিয়াল মাদ্রিদ কোচ। কথা তো বলতেই চান না!

কিন্তু না চাইলেও রেফারিং এবং ভিএআর নিয়ে বিতর্ক যেন জিদান আর রিয়ালের পিছুই ছাড়ছে না! একেকটা ম্যাচ যায়, নতুন করে ভিএআর বা মাঠের রেফারির কোনো সিদ্ধান্ত কীভাবে রিয়াল মাদ্রিদের সুবিধা করে দিয়েছে, সে নিয়ে ওঠে আলোচনা।

নিজেদের মাঠে কাল গ্রানাদার বিপক্ষে রিয়ালের জয়ের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হলো না! দ্বিতীয়ার্ধে কাসেমিরো ও করিম বেনজেমার গোলে ম্যাচটা ২-০ ব্যবধানে জিতেছে রিয়াল, এর মধ্যে বেনজেমার গোলটা একেবারে ম্যাচের শেষে যোগ করা সময়ে।

কিন্তু লিগে রিয়ালের টানা পঞ্চম এই জয়ে বিতর্ক তুলেছে রিয়ালের বিপক্ষে দুটি পেনাল্টি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

দুটি ঘটনাতেই বিতর্কের কেন্দ্রে কাসেমিরো! প্রথমার্ধে রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার বক্সের মধ্যে গ্রানাদার ইয়ানহেল এরেরাকে টেনে ধরেছিলেন। কিন্তু রেফারি তা দেখেননি, ভিএআরও তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি।

মাথা ঘামাচ্ছে বার্সেলোনাভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক স্পোর্ত। তারা আলাদা করে খবরই ছাপিয়েছে দুটি সিদ্ধান্ত রিয়ালের পক্ষে যাওয়া নিয়ে।

প্রথমটি পেনাল্টি ছিল—এ রায় দিচ্ছেন মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়াদৈনিক মার্কার রেফারিং বিশেষজ্ঞ মারিয়ানো আন্দুহারও, ‘আমার চোখে এটা পরিষ্কার পেনাল্টি। রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার বলের দিকে না তাকিয়ে গ্রানাদার খেলোয়াড়কে টেনে ধরেছেন, যেটি মাঠের রেফারি সে সময়ে ঠিকমতো না বুঝতে পারলেও ভিএআরের দেখা উচিত ছিল।’

কাসেমিরো গোল পেলেও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন
ছবি: এএফপি

দ্বিতীয়ার্ধে আবারও আলোচনায় কাসেমিরো। এবার গ্রানাদার হোর্হে মলিনার শট রিয়াল বক্সে লাগে কাসেমিরোর হাতে। এ দফায় ভিএআরের সঙ্গে আলোচনা করেই রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

রেফারিং বিতর্ক এক পাশে রাখলে কাল জিততে অবশ্য বেশ কষ্টই হয়েছে রিয়ালের। জিদানও ম্যাচ শেষে বলছিলেন, ‘ভালো একটা দলকে হারিয়েছি। ওরা বেশ কিছু ম্যাচে ভালো ফল পেয়েছিল। আমাদের খুশি হওয়া উচিত। খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ।’

ম্যাচটা কঠিন ছিল বলেই চোট কাটিয়ে ফেরা এদেন হ্যাজার্ডকেও নামাননি বলে জানালেন জিদান।

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই রিয়াল ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের ভুলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল গ্রানাদা। ভারানের ভুল পাস থেকে বল কেড়ে নিয়ে গ্রানাদা স্ট্রাইকার রবের্তো সোলদাদো পাস দেন সতীর্থ আন্তোনিও পুয়ের্তাসকে।

কিন্তু রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়াকে একা পেয়েও ২০ গজ দূর থেকে বার উঁচিয়ে মারেন পুয়ের্তাস।

কিছুক্ষণ পর আবার দারুণ সুযোগ পায় গ্রানাদা। এবার ভুল কোর্তোয়ার, গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান গ্রানাদার কেনেডি। কিন্তু শট নিতে দ্বিধায় ভোগা কেনেদি অবশেষে যখন শট নিলেন, তাতে গতি ছিল না, গেল সোজা কোর্তোয়ার হাতে।

ভিএআর নিয়ে কথা বলাটা পছন্দ নয় রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানের
ছবি: এএফপি

কঠিন প্রথমার্ধটা রিয়ালের জন্য আরও খারাপ হলো ৩৭ মিনিটে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তরুণ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রদ্রিগো। তাঁর জায়গায় মার্কো আসেনসিও নামার পর ম্যাচে ভাগ্য বদলায় রিয়ালের।

ম্যাচসেরা আসেনসিও গোল করিয়েছেন, মৌসুমের সেরা গোলের তালিকায় থাকার মতো গোলও প্রায় করেই ফেলেছিলেন!

৫৫ মিনিটে আসেনসিওর সেই গোলটা হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পোস্ট। গ্রানাদা বক্সে ক্রস আসে আসেনসিওর কাছে, গোলপোস্টের দিকে পিছু ফিরে থাকা অবস্থাতেই ব্যাক ফ্লিক করে স্প্যানিশ উইঙ্গার! কিন্তু পোস্টে লেগে ফিরে আসে তাঁর চোখধাঁধানো শট।

সে সময়ে ম্যাচে দারুণ দাপট দেখাতে থাকা রিয়ালকে অবশ্য গোলের জন্য এরপর আর দুই মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। বাঁ দিক থেকে আসেনসিওর ক্রসে পোস্টের খুব কাছ থেকে হেডে বল জালে জড়ান কাসেমিরো।

হেডে গোল করছেন কাসেমিরো
ছবি: এএফপি

রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটা এসেছে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে। দারুণ ছন্দে থাকা বেনজেমার একক প্রচেষ্টার ফসল সেটি। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে ভেতরে ঢোকেন ফরাসি স্ট্রাইকার, এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের ওপর থেকে বাঁ পায়ের শট নেন। ঝাঁপিয়ে পড়েও তা আর ঠেকানো সম্ভব হলো না গ্রানাদা গোলকিপারের। গেইম, সেট, ম্যাচ!

এ জয়ে লিগশীর্ষে থাকা আতলেতিকোর সমান ৩২ পয়েন্ট হলো রিয়ালের, তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে জিদানের দল আছে তালিকার দুই নম্বরে। অবশ্য আতলেতিকোর চেয়ে রিয়াল ম্যাচও খেলেছে দুটি বেশি—আতলেতিকো ১৩টি, রিয়াল ১৫টি।