রেফারিং নিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ক্ষোভ, বসুন্ধরার ছয়ে ছয়

বসুন্ধরার জয়সূচক গোল করার পর মাহবুবুর রহমানের উচ্ছ্বাস।ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম আবাহনীর শক্ত চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে গিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। তবে ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমানের একমাত্র গোলে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেছে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। সেই সঙ্গে লিগে টানা ছয় ম্যাচই জিতে অস্কার ব্রুজোনের দল ধরে রেখেছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষস্থান। চট্টগ্রাম আবাহনী ৬ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে তালিকার সাত নম্বরে।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ শুরু থেকেই চট্টগ্রাম আবাহনীর কৌশল ছিল বসুন্ধরাকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে না দেওয়া। এই কৌশলে তারা অনেকটাই সফল। বসুন্ধরা অন্য দিনের তুলনায় আজ সেরাটা দিতে পারেনি মাঠে। দৃষ্টিনন্দন আক্রমণাত্মক ফুটবল আর সৃজনশীলতা দেখা যায়নি লাল জার্সির দলটির খেলায়।

খেলাটা ধরতে কিছুটা সময় লাগে বসুন্ধরার। গোলের পরিষ্কার সুযোগও আসছিল না। ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকার রবসনের শট সরাসরি চলে যায় চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলকিপার মোহাম্মদ নাইমের হাতে। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ডি সিলভার সাইড ভলি লাগে পোস্টে।

রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়েরা।
ছবি: প্রথম আলো

৬২ মিনিটে বসুন্ধরা পেয়ে গেছে ম্যাচের একমাত্র গোলটি। জোনাথনের কর্নারে হেড করতে লাফিয়ে ওঠেন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরা। কিন্তু রাউল বল পাননি। পেছন থেকে ছুটে আসা মাহবুবুর রহমানের হেড চলে যায় জালে। মাহবুবুর পাহারায় ছিলেন না, যার খেসরাত দিতে হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীকে।

গোল খেয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক মাঠে পাঠান দলের মূল স্ট্রাইকার নিক্সন গিয়াহামেকে। পুরো ফিট না হওয়ায় শুরু থেকেই নামানো হয়নি এই ব্রাজিলিয়ানকে। বদলি নেমেও সুবিধা করতে পারেননি নিক্সন। চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলাটা যাঁকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় মাঝমাঠে, সেই অধিনায়ক চার্লস দিদিয়ের ম্যাচের ২৫ মিনটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তাঁকে হারানো চট্টগ্রাম আবাহনীর জন্য বড় ক্ষতি।
তার ওপর রেফারি জসিম আক্তারের দুর্বল খেলা পরিচালনার খেসারত দিতে হয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা।

রেফারি গোটা দুই পেনাল্টির জোরালো দাবি নাকচ করেছেন চট্টগ্রামের দলটির। শেষ দিকে বক্সে চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার মোনায়েম রাজুকে ফেলে দেন বসুন্ধরার মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া। কিন্তু রেফারি এড়িয়ে গেছেন এই ফাউল। বসুন্ধরার অধিনায়ক তপু বর্মণের হাতে বল লাগলেও রেফারি সেটিও এড়িয়ে গেছেন বলে দাবি চট্টগ্রাম আবাহনীর। তারপরও চট্টগ্রাম আবাহনী সমতাসূচক গোলটি পেতে পারত মিডফিল্ডার রাকিব হোসেন সহজ সুযোগ না হারালে। বক্সের ভেতরে ফাঁকায় বল পেয়েও শট নিতে পারেননি এই মিডফিল্ডার।

বসুন্ধরার ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের উগ্র মেজাজে অবাক উপস্থিত দর্শকেরা। মাঠে রীতিমতো ‘মাস্তানি’ করেছেন তিনি। বল ছাড়াই ঘুষি মারেন চট্টগ্রাম আবাহনীর রাকিবকে। কিন্তু রেফারি শুধুই হলুদ কার্ড দেখান বিশ্বনাথকে। অনেকের মতে, বিশ্বনাথের ‘অপরাধ’ লাল কার্ডের সমতুল্য। বসুন্ধরার জোনাথন কর্নার পতাকা উপড়ে ফেললেও তাঁকে শুধুই হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। সব মিলিয়ে ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর ক্ষোভের নিশানা রেফারি।

বসুন্রেধরার বিপক্ষে ম্যাচে রেফারিং নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না আবাহনীর খেলোয়াড়েরা।
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচ শেষে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়, কর্মকর্তারার সঙ্গে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন আবাহনী গ্যালারিতে বসা কিছু দর্শক। চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার আরমান আজিজ প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আমাদের তিনটি পেনাল্টির দাবি নাকচ করেছেন রেফারি। এভাবে পক্ষপাতপূর্ণ রেফারিং হলে আমাদের আর মাঠে এসে খেলার দরকার কী! একটি দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলেই হয়!’ একই দলের কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদের কথা, ‘রেফারির পক্ষপাতপূর্ণ সিদ্ধান্ত একটি দলকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে পারে। আজ আমরা রেফারি জসিমের অবিচারের শিকার হলাম।’ কোচ মারুফুল হকের ভাষায়, ‘রেফারি এভাবে আমাদের বঞ্চিত করবে ভাবতেই পারিনি।’