এভাবে কখনো রাগ দেখাননি জিদান
জয় দরকার ছিল রিয়াল মাদ্রিদের। সেভিয়ার বিপক্ষে কাল রিয়াল মাদ্রিদ করেছে ২-২ গোলে ড্র। বার্সেলোনা আর আতলেতিকো মাদ্রিদের চেয়ে স্প্যানিশ লিগের শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার, লিগের শিরোপা-ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ার সুযোগ হারাল জিনেদিন জিদানের দল। কিন্তু এ সবকিছুর পেছনে জড়িয়ে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআরের বিতর্কিত এক সিদ্ধান্ত।
এমন ম্যাচে এমন সিদ্ধান্ত রিয়াল মাদ্রিদের কেউই মানতে পারার কথা নয়। মানতে পারছেনও না। তবে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান যেভাবে খেপেছেন, এমনটা জিদানকে সাধারণত করতে দেখা যায় না। রেফারিং নিয়ে বিতর্ক তো নতুন নয়, রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে-বিপক্ষেও সিদ্ধান্ত গেছে অনেকবার। এ নিয়ে ম্যাচের পর সব সময় প্রশ্নে জিদান বলে আসতেন, রেফারির কাজ রেফারি করেছেন, এ নিয়ে তিনি কথা বলবেন না। কিন্তু কাল আর রাগটা চেপে রাখতে পারেননি জিদান।
নিজেই সেটা স্বীকার করে নিয়ে জিদান ম্যাচ শেষে বললেন, রেফারিং নিয়ে তিনি কখনো কথা বলেন না, তবে আজ তিনি বেশ রেগে আছেন।
‘খুব বেশি রাগ হচ্ছে এখন। রেফারির সঙ্গে (ম্যাচের পর) কথা বলেছি, ব্যাখ্যা চেয়েছি। ব্যাপারটা আসলেই অনেক প্যাঁচানো। কারণ, ম্যাচ থেকে আমাদের আরও বেশি কিছু পাওয়ার ছিল’—ম্যাচের পর স্প্যানিশ সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠান মুভিস্টারে বলেছেন জিদান।
পরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘রেফারি আমাকে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা আমি মানতে পারছি না। আমি রেফারিদের নিয়ে কখনো কিছু বলি না, কিন্তু আজ আমি খুব রেগে আছি।’
জিদানের রাগ মূলত ৭৮ মিনিটে সেভিয়ার পাওয়া পেনাল্টি নিয়ে। যে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সেভিয়াকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন ইভান রাকিতিচ। পরে ৯৪ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ডের ফাঁকতালে পাওয়া গোলে সমতা ফেরায় মাদ্রিদ। বক্সের বাইরে থেকে টনি ক্রুস শট করেছিলেন, হ্যাজার্ডের পায়ে লেগে বল দিক বদলে ঢুকে যায় জালে। তাতে হার এড়ানো গেছে, কিন্তু মাদ্রিদের তো জয় দরকার ছিল এ ম্যাচে!
এখনো লিগের শিরোপাদৌড় জমজমাটই আছে, মাদ্রিদও দৌড়ে ভালোভাবেই আছে, কিন্তু জয় পেলে নিয়ন্ত্রণটা মাদ্রিদের হাতে থাকত। এখন যা আতলেতিকোর হাতে। জিদানের খ্যাপারই কথা!
সেভিয়ার ওই পেনাল্টি নিয়ে ক্ষোভটা আরও বেশিই হওয়ার কথা। ৭৮ মিনিটে প্রথমে রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি। কারণ, পাল্টা আক্রমণে ওঠা মাদ্রিদের হয়ে সেভিয়া রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে উঠে গিয়েছিলেন মাদ্রিদ স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা, তাঁকে বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন সেভিয়া গোলকিপার।
তা সব পেনাল্টিই তো ভিএআরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভিএআর বের করল, সেভিয়ার যে কর্নার থেকে মাদ্রিদের পাল্টা আক্রমণ, সেটির শুরুতে কর্নার ঠেকাতে গিয়ে মাদ্রিদ বক্সে বল লেগেছে মাদ্রিদ ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের হাতে। ব্যস, যে পেনাল্টি মাদ্রিদের পাওয়ার কথা ছিল, তা পেল কিনা সেভিয়া!
আরও ক্ষোভের কারণ, মিলিতাওয়ের যে হ্যান্ডবলের কারণে পেনাল্টি দেওয়া হলো, ম্যাচে তার কিছুক্ষণ আগে সেভিয়ার বক্সে সেভিয়ার এক ডিফেন্ডারের হাতেও সেভাবে বল লেগেছিল। রেফারি তখন মাদ্রিদের পক্ষে পেনাল্টি দেননি। জিদানও ম্যাচের পর ক্ষোভ জানালেন এ নিয়ে, ‘রেফারি কী বোঝাতে চাইলেন, কিছুই বুঝলাম না! যদি মিলিতাওয়েরটা হ্যান্ডবল হয়, তাহলে সেভিয়ারটাও হ্যান্ডবল হওয়ার কথা!’
ভীষণ বিরক্ত জিদান এরপর রেফারিদের কাছে নতুন করে হ্যান্ডবলের নিয়মটাই শিখতে চাইলেন, ‘আমাকে এ নিয়ে আর প্রশ্ন করবেন না। আমি কী ভাবছি, সেটা এরই মধ্যে বলেছি। তাঁদের আমাকে বোঝাতে হবে হ্যান্ডবলের নিয়মটা আসলে কী!’ ভিএআরের ওপর তাঁর বিশ্বাস আছে কি না, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে পরে ‘জিজু’র উত্তর, ‘আমি ফুটবলে বিশ্বাস রাখি। আমি শুধু এতটুকুই বলছি যে আমি ম্যাচে দুটি হ্যান্ডবল দেখেছি, তাঁরা শুধু আমাদেরটাতে হ্যান্ডবল ধরেছেন।’
বিতর্ক একপাশে রেখে জিদান শেষে শুধু রাগত কণ্ঠেই জানালেন তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। মৃত্যু পর্যন্ত।’