রোনালদোর চেয়েও এগিয়ে যাঁরা
মাত্র ছয় বছর খেলেই একটা ক্লাবের সর্বকালের সেরা হয়ে যাওয়াটা অতিমানবীয়ই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদের তো বটেই, আরেকভাবে লা লিগায়ও নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। অন্তত ১০০ গোল করেছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে লা লিগায় আর কারও ম্যাচের চেয়ে বেশি গোল নেই। লিওনেল মেসি, তেলমো জারা, আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ফেরেঙ্ক পুসকাস—সবাই এখানে রোনালদোর পেছনে পড়ে গেছেন। কিন্তু তুলনাটা যদি স্পেনের বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়?
একটা ব্যাপার অবশ্য খোলাসা করে দেওয়া উচিত। স্পোর্টিং লিসবন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর রোনালদো রিয়ালের হয়ে নিজের সেরা সময়টাই পেয়েছেন। মেসি বা জারা যেমন ক্যারিয়ারের পুরোটাই কাটিয়েছেন লা লিগায়। তারপরও রোনালদোর ৩১০ ম্যাচে ৩২৪ গোলের রেকর্ডটা অবিশ্বাস্যই। এখানে ০.৮৫ ম্যাচপ্রতি গোলের গড় নিয়ে মেসি বা ডি স্টেফানো (০.৭৮) বেশ পিছিয়ে। সর্বকালের সেরা গোলদাতার ছোট্ট তালিকায় যাঁরা থাকবেন, সেই পেলে, জার্ড মুলাররাও এদিক দিয়ে রোনালদোর পেছনে। একটি নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে তাঁদের কারও ম্যাচের চেয়ে বেশি গোল নেই। পেলে যেমন সান্তোসের হয়ে ১১১৫ ম্যাচে ১০৮৮ গোল করেছেন। জার্মানির হয়ে মুলারের ম্যাচপ্রতি গোলের গড় একের বেশি হলেও বায়ার্নের হয়ে আবার ৬০৭ ম্যাচে করেছেন ৫৬৬ গোল।
তবে রোনালদোকে এ ক্ষেত্রে সর্বকালের সেরা বলা যাচ্ছে না। সত্যি বললে, কারও কারও রেকর্ডের কাছে রোনালদোকেও অনেকটাই ম্লান মনে হবে। ইয়োসেপ বিকানকেই ধরুন। সর্বকালের সেরা গোলদাতা হিসেবে অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের এই ফুটবলারকেই সবাই মানেন। স্লাভিয়া প্রাহার হয়ে বিকান ২১৭ ম্যাচে করেছেন ৩৯৫ গোল। ১.৮২ গড়টা অবিশ্বাস্য না, অলৌকিকই বলা উচিত! বিকানের দাবি, জীবনে পাঁচ হাজারের বেশি গোল করেছেন। সেটাকে অতিরঞ্জিত মনে হলেও ১ হাজার ৪৬৮টি গোলের রেকর্ড তাঁর নামের পাশে লেখা আছে। টানা পাঁচ মৌসুমে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ‘বাগড়া’ না দিলে বিশ্বকাপও তাঁর জাদু দেখতে পারত।
ফার্নান্দো পেইরোতেওর রেকর্ড অমন আহামরি নয়, তারপরও এই যুগে সেটা যথেষ্টই বিস্ময়কর। ফুটবল ইতিহাসে কিংবদন্তিদের ছোট্ট তালিকায় হয়তো তাঁর নাম থাকবে না, তবে স্পোর্টিং লিসবনে তিনি নিশ্চিতভাবেই কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন। পর্তুগিজ ক্লাবের হয়ে ৩৯৩ ম্যাচে ৬৩৫ গোল তাঁর (ম্যাচপ্রতি গোল ১.৬২)। ১৯৪২ সালে এক ম্যাচে আবার ৯ গোলও করেছিলেন। বিকানের মতো তাঁর উত্থানটাও বিলীন হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গ্রাসে।
পরের নামটা পরিচিতই। ইউসেবিও অবশ্য রোনালদোর চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নন। অনেক নাটকের পর ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ১৯৬০ সালে নাম লিখিয়েছিলেন বেনফিকায়। স্পোর্টিংয়ের ভয়ে বেনফিকা ১২ দিন লুকিয়েই রেখেছিল তাঁকে! এরপরের এক দশকেরও বেশি সময় ইউরোপ আচ্ছন্ন ছিল ইউসেবিওর জাদুতে। ৪৪০ ম্যাচে ৪৭৪ গোল করেছেন, গড় ১.০৭। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান কাপ, ব্যালন ডি’অর থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সবকিছুই পেয়ে গেছেন।
জিমি ম্যাকগ্ররি আবার অত বিখ্যাত কেউ নন। ‘হিউম্যান টর্পেডো’ ও ‘দ্য মারমেইড’ নামের এই স্ট্রাইকার সেল্টিকের হয়ে ৩৭৮ ম্যাচে করেছেন ৩৯৫ গোল। গড়টা রোনালদোর একদম কাছাকাছি, ১.০৪। হেডে ছিলেন দুর্দান্ত, ‘টর্পেডো’ নামটাও এই কারণেই। অথচ উচ্চতা কত ছিল জানেন? মাত্র ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি!
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে না হোক, স্বদেশের ক্লাব হনভেডের হয়ে পুসকাসের গোল ম্যাচের চেয়ে বেশি। ৩৫৮ ম্যাচে ৩৭৪ গোল করেছিলেন ‘গ্যালোপিং মেজর’, গড় ১.০৪। মজার ব্যাপার, পুসকাস যখন খেলা শুরু করেছিলেন, ক্লাবের নাম ছিল কিসপেস্ট। পরে সামরিক জান্তা নাম বদলে হনভেড করে দেয়। ফোর ফোর টু।