রোজা রেখে গোল করে দল জেতালেন মিসরের মোস্তফা

গোলের পর বারিধারা স্ট্রাইকার মোস্তফার উদযাপন।ছবি: তানভীর আহাম্মেদ।

লড়াইটা ছিল পয়েন্ট তালিকায় তলানির দুই দলের। এই ম্যাচের আগপর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে একটি করে জয় ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও উত্তর বারিধারার। অবনমনের শঙ্কা থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে এই ম্যাচে জয়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল দুই দলের জন্যই। শেষ পর্যন্ত পারল না ব্রাদার্স।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ ব্রাদার্সকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় অনেকটা নিরাপদ স্থানে (১০ম) উঠে এল উত্তর বারিধারা। জোড়া গোল করেছেন বারিধারার মিসরীয় স্ট্রাইকার মোস্তফা আবদেল খালেক। একটি গোল করেছেন সুজন বিশ্বাস। এর আগে প্রথম লেগে ব্রাদার্স ৩-৩ গোলে ড্র করে বারিধারার সঙ্গে।

১৬ ম্যাচে ১ জয়, ২ ড্র ও ১৩ হারে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে ব্রাদার্স। ১৫ ম্যাচে ২ জয়, ৬ ড্র ও ৭ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে টপকে টেবিলে ১০–এ উঠে এসেছে বারিধারা। পয়েন্ট তালিকার সবার নিচে থাকা আরামবাগের চেয়ে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে বারিধারা।

লিগে নিজেরা অনেকটা নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে পেরেছে, সেই আনন্দেই কিনা ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়েরা বারিধারার ম্যানেজার নূর হোসেনকে কাঁধে তুলে খানিকক্ষণ আনন্দনৃত্য করলেন!

আগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে ৫ গোল হজম করেছিল ব্রাদার্স। ওই ম্যাচের একাদশে থাকা ডিফেন্ডার আরিফুল ইসলামের বদলে আজ কোচ রেজা পারকাস খেলিয়েছেন উজবেক ডিফেন্ডার ফুরকাত জনকে।

কিন্তু ফুরকাত রক্ষণ সামলাতে ব্যর্থ হন আজ। পাশাপাশি অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার অরূপ কুমার বৈদ্যও সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। সব মিলিয়ে এমন নড়বড়ে রক্ষণের মাশুল আরও একটি ম্যাচে দিল ব্রাদার্স।

গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে উঠে যাওয়ার আগে দারুণ খেলেন মোস্তফা। গোলের পর।
ছবি: প্রথম আলো

বারিধারার আক্রমণভাগের বড় অস্ত্র মোস্তফা প্রচণ্ড গরমের কারণে ৬৩ মিনিটে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়েই তাঁকে উঠিয়ে নেন কোচ মাহবুব আলী। মাঠ থেকে উঠে আসার আগে কাজের কাজটুকু সেরে আসেন মোস্তফা। ম্যাচে তখন মোস্তফার দেওয়া দুই গোলে এগিয়ে ছিল বারিধারা। ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, রোজা রেখে মাঠে নেমেছিলেন মোস্তফা।

শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা বারিধারা ম্যাচের ১৪ মিনিটে পেয়েছে প্রথম গোল। বাঁ প্রান্ত দিয়ে সুমন রেজা বক্সে ঢুকে বল বাড়িয়ে দেন মোস্তফাকে। তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়ান মোস্তফা (১-০)।

গোল খেয়ে অবশ্য ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে ব্রাদার্স। ৩১ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগও পেয়েছিলেন ব্রাদার্সের নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার মাগালান আওয়ালা। কিন্তু মাগালানের শট প্রথম চেষ্টায় ‘ফিস্ট’ করে ফেরান বারিধারার গোলরক্ষক মিতুল মারমা।

ফিরতি শট ‘ক্লিয়ার’ করেন বারিধারার ডিফেন্ডার হাফিজুর রহমান। মাগালানের দুর্বল ফিনিশিংয়ে আরেকবার গোলবঞ্চিত হয় ব্রাদার্স ৩৮ মিনিটে। বক্সে বল নিয়ে ঢোকা মাগালানের সামনে তখন শুধুই বারিধারার গোলরক্ষক মিতুল। কিন্তু তড়িঘড়ি করে বল মারতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাগালান পড়ে যান!

ব্রাদার্সের রক্ষণব্যূহে এভাবে ত্রাস ছড়ান মোস্তফা।
ছবি: প্রথম আলো

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বেড়েছে বারিধারার। ৬৩ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে ব্রাদার্স গোলরক্ষক জাফর সর্দারকে বোকা বানিয়ে কোনাকুনি শটে ব্যবধান ২-০ করেন মোস্তফা। এরপর ৭২ মিনিটে সুমন রেজার ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে স্কোর ৩-০ করেন সুজন বিশ্বাস। এক হালি গোল পেতে পারত বারিধারা। কিন্তু ৮২ মিনিটে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মারেন সুজন।

ম্যাচ শেষের মিনিট সাতেক আগে গোলরক্ষক জাফর সর্দারকে তুলে নিয়ে ব্রাদার্স কোচ মাঠে নামান দ্বিতীয় গোলরক্ষক মহিউদ্দিন রানুকে। কিন্তু এর আগেই সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। বাকি সময়ে চেষ্টা করেও অবশ্য কোনো দল আর গোল পায়নি।