রোনালদোর গোল বাতিলে আয় হলো ৬৩ লাখ টাকা

সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তে হতাশ রোনালদো আর্মব্যান্ড ছুঁড়ে ফেলে মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।ছবি: রয়টার্স

রাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে রাগ একেবারে মন্দ নয়! ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বাহুবন্ধনী ছুড়ে ফেলা নিয়ে এখন কথাটা মজা করে বলতেই পারেন তাঁর সমর্থকেরা। গোল বাতিল হওয়ার ক্ষোভে বাহুবন্ধনী ছুড়ে ফেলেছিলেন এই পর্তুগাল অধিনায়ক। তাঁর অধিনায়কত্বের সেই বাহুবন্ধনী নিলামে তোলা হয়। মোটা অঙ্কে তা বিক্রিও হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছিল, রোনালদোর বাহুবন্ধনী নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ একটি শিশুর জীবন বাঁচানোর কাজে লাগানো হবে।

সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) আজ জানিয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা নিলামে ৭৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা) খরচায় রোনালদোর ওই বাহুবন্ধনী কিনেছেন। আজ সার্বিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেলও খবরটি নিশ্চিত করে। সার্বিয়ার একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান এই বাহুবন্ধনী নিলামে তুলেছিল। গাভ্রিলো দুরদিয়েভিচ নামে সার্বিয়ার ৬ মাস বয়সী এক শিশুর চিকিৎসায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে। মেরুদণ্ডের পেশির জটিল রোগে ভুগছে শিশুটি।

রোনালদোর বাহুবন্ধনী তিন দিনের জন্য নিলামে তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে বিতর্কও হয়েছে। কিছু ভুয়া ক্রেতা এই বাহুবন্ধনীর আকাশচুম্বী দাম বলেছিলেন। আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভের উদ্‌গিরণ ঘটায় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তাঁদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আবার অনেকে মনে করছেন, খেলোয়াড়টির নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেই তাঁর ব্যবহৃত যেকোনো কিছুর প্রতি ভক্তদের অন্যরকম আগ্রহ তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক।

পর্তুগিজ তারকা অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী ছুড়ে ফেলেছিলেন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সার্বিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে। প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র করে পর্তুগাল। শেষ মুহূর্তে রোনালদোর গোল দৃশ্যত অন্যায্যভাবে বাতিল না হলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত পর্তুগাল। ভিডিও রিপ্লেতে দেখা যায়, রোনালদোর গোলের দাবি ন্যায্য ছিল। এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশের জন্য রেফারির হলুদ কার্ডও দেখেন পর্তুগাল অধিনায়ক।

সব মিলিয়ে খেপে গিয়ে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড মাঠে ছুড়ে ফেলে তখনই ড্রেসিংরুমে চলে যান রোনালদো। অথচ তখনো ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড বাকি! তবে তাঁর এই রাগ এখন হয়তো জীবন বাঁচাবে শিশুটির। মাঠে রোনালদোর ফেলে যাওয়া ওই আর্মব্যান্ড কুড়িয়ে পান রেড স্টার স্টেডিয়ামের এক কর্মী। তাঁর কাছ থেকেই আর্মব্যান্ড পায় সার্বিয়ার একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যারা অসুস্থ সেই শিশুর চিকিৎসার খরচ তোলার চেষ্টা করছিল।

রাগ ভুলে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে পর্তুগালের ৩-১ গোলের জয়ে গোল করেছেন রোনালদো।
ছবি: রয়টার্স

নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘গাভ্রিলো দুরদিয়েভিচ নামের ছয় মাস বয়সী শিশুর চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি রোগে ভুগছে, চিকিৎসা করে তার জীবন বাঁচাতে আড়াই লাখ ইউরো প্রয়োজন।’ বাহুবন্ধনীটি নিলামে ওঠার আগে তা নিয়ে ছবিও তুলেছেন সার্বিয়ার কিছু অগ্নিনির্বাপনকর্মী। তবে মাঠে বাহুবন্ধনী ছুড়ে ফেলার জন্য সমালোচনাও কুড়িয়েছেন রোনালদো। ফিফা তাঁকে শাস্তিও দিতে পারে।

জুভেন্টাসেরই সাবেক ইতালিয়ান স্ট্রাইকার আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোর যেমন রোনালদোর আর্মব্যান্ড ছুড়ে ফেলা পছন্দ হয়নি, ‘আমার মতে, আচরণটি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। রাগ হতেই পারে, সে জন্য মাঠে কথা বলা যায় কিংবা প্রতিবাদ করা যায়। কিন্তু দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এমন একজন, যিনি কিনা আবার পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় আইকন, তাঁর এমন আচরণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।’