রোনালদো-কাকাদের পেয়েও খুশি ছিলেন না তিনি

এক দলবদলেই এঁদের এনেছিলেন পেরেজ।
ছবি: টুইটার

এমন কিছু ফিফা গেমসেই সম্ভব। বাস্তবে এমন কিছু যে দেখা যেতে পারে, ২০০৯ সালের আগে কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। ২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সেলোনাকে সম্ভাব্য সবকিছু জিততে দেখে রীতিমতো খেপে উঠেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। নির্বাচনে জয়ের জন্য আগে থেকেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে এনে দেবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিলেন। তবু ২০০৯-১০ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে অচিন্তনীয় সব ঘটনা ঘটিয়েছিলেন পেরেজ।

রোনালদোকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে এনেছিলেন। ২০০৮ মৌসুমের ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর আগেই ২০০৭–এর বিজয়ী কাকাকে রিয়ালে হাজির করেছিলেন পেরেজ। লিওঁর হয়ে ইউরোপে সাড়া জাগানো স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাকেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নাগাল থেকে নিয়ে এসেছিলেন। লিভারপুল থেকে স্প্যানিশ দুই তারকা জাবি আলোনসো ও আলভারো আলবেলোয়াকেও কিনে আনা হয়েছিল। ঘরোয়া লিগ থেকেও আরও তিনজনকে কিনে এনেছিলেন পেরেজ।

যেকোনো কোচ এমন এক দল পেলে বর্তে যেতেন। কিন্তু সেই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হয়ে আসা মানুয়েল পেলেগ্রিনি এমন দল পেয়েও সুখী হতে পারেননি। বর্তমানে স্প্যানিশ লিগেরই দল রিয়াল বেতিসের কোচ পেলেগ্রিনি ইংলিশ পত্রিকা দ্য অ্যাথলেটিককে জানিয়েছেন সে কথা।

একই সঙ্গে দুজন ব্যালন ডি অর জয়ীকে নিয়েছিল রিয়াল।
ছবি: টুইটার

প্রথম দফায় সভাপতি হয়ে রিয়ালে তারকাপুঞ্জ বানিয়েছিলেন পেরেজ। এনেছিলেন জিদান, রোনালদো নাজারিও, বেকহাম, ফিগোদের। দ্বিতীয় দফাতেও সেই পথেই হেঁটেছেন। নতুন কোচ পেলেগ্রিনিকে মাঠে লড়াইয়ের জন্য ভয়ংকর সব অস্ত্র তুলে দিতে চেয়েছিলেন। তাই দলে প্রায় অধিকাংশ জায়গায় ভালো খেলোয়াড় থাকলেও একদম পাগলের মতো কেনাকাটা করেছেন। কিন্তু কোচের এমন খেলোয়াড় লাগবে কি না, সেটা চিন্তাও করে দেখেননি। এত দিন পর রিয়ালের ডাগআউটে থাকার সময়টা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপের কথাই শোনালেন সাবেক কোচ, ‘এটা বিশেষ এক বছর ছিল। সব কোচই রিয়াল মাদ্রিদ সামলাতে চায়। কিন্তু বেশ কিছু কারণে সভাপতির সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা ভালো ছিল না।’

অ্যাথলেটিকের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেরেজের ওভাবে খেলোয়াড় কেনার ভুলটা দেখিয়ে দিয়েছেন পেলেগ্রিনি, ‘খেলোয়াড় সম্পর্কে চিন্তায় আমার ও তাঁর মধ্যে পার্থক্য ছিল। তারা আমাকে বেশ ভালো কিছু খেলোয়াড় এনে দিয়েছেন। কিন্তু এঁদের মধ্যে কেউ কেউ এমন পজিশনে খেলতেন, যেখানে আগ থেকেই ভালো খেলোয়াড় ছিল। এ ব্যাপারে আমি খুশি ছিলাম না।’ রিয়াল রক্ষণে সের্হিও রামোস, পেপে, মেটজেল্ডার, গারাই ছিলেন। এর মধ্যেই আবার আরবেলোয়া ছাড়াও রাউল আলবিওলকে কিনে আনা হয়েছিল।

কোচের সিদ্ধান্ত জানার চেষ্টা করেননি পেরেজ।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মধ্যমাঠে মামাদু দিয়ারা, লাসানা দিয়ারা ও গাগোর মতো স্কোয়াড খেলোয়াড় থাকার পরও এস্তেবান গ্রানেরোকে কেনা হয়েছিল। গুতি, ফন ডারভার্টদের রেখে দিয়েও নেওয়া হয়েছিল কাকাকে। রোনালদো ছাড়াও বেনজেমাকে আনা হয়েছিল। দলে তখন বেনজেমার বয়সী গঞ্জালো হিগুয়েইন ছিলেন। অধিনায়ক রাউল গঞ্জালেস তো ছিলেনই। আবার আলভারো নেগ্রেদোকেও কেনা হয়েছিল।

দলের খেলোয়াড় কেনায় কোচের পছন্দকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফল রিয়াল পেয়েছিল। রিয়াল শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেও সে মৌসুমেও বার্সা জিতেছিল লিগ। চ্যাম্পিয়নস লিগ বা কোপা দেল রে-ও পায়নি রিয়াল। সে কারণে চাকরি হারাতে হয়েছিলে পেলেগ্রিনিকে, ‘এরপরও আমরা (লিগে) ৯৬ পয়েন্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে লিগ জিততে পারিনি। কারণ, আমাদের বিপক্ষে বার্সেলোনার সেই অসাধারণ দলটি ছিল। মৌসুম শেষ হলো, রিয়াল তার পথে গেছে আমিও নিজের পথে গিয়েছি। যখন এক দরজা বন্ধ হয়, অন্য দরজা খোলে। আমি মালাগাতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি এবং আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল ক্লাব সেটা।’ পেলেগ্রিনিকে সরানোর পেছনে অবশ্য ২০০৯-১০ মৌসুমে জোসে মরিনিওর হাত ধরে ইন্টার মিলানের লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইতালিয়ান কাপের ‘ট্রেবল’ জেতার ভূমিকাও ছিল।

প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা হাতে পেলেগ্রিনি।
ফাইল ছবি: এএফপি

রিয়ালের পর স্পেনের ক্লাব মালাগায় গিয়েছিলেন পেলেগ্রিনি। বর্তমানে স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগে থাকা দলটাকে তখন অপ্রত্যাশিত সাফল্য এনে দিয়েছিলেন চিলিয়ান কোচ। ‘আমি একটা দল গড়েছিলাম এবং আমরা ইউরোপে জায়গা করে নিয়েছি। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছি। কেউ বিশ্বাস করেনি মালাগা এটা করতে পারবে’—বলেছেন পেলেগ্রিনি। সে সাফল্য তাঁকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুয়ার খুলে দিয়েছিল, গিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে।

২০১৩ সালে সিটির দায়িত্ব পেয়েছিলেন পেলেগ্রিনি। যদিও সেটা একটু ঘুরপথে এসেছিল তাঁর কাছে, ‘২০১৩ সালে যখন সিটির সঙ্গে আলোচনা করি, তাদের ক্রীড়া পরিচালক বলেছিল তারা বার্সেলোনায় পেপের (গার্দিওলা) সঙ্গে কাজ করেছে। এবং ম্যানচেস্টার সিটিতেও তাঁকেই চায়। তারা জানিয়েছিল আপাতত এক বছরের জন্য ছুটি নিয়েছেন পেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। যদি সিটিতে যোগ দিতে চান, তবে পেপই কোচ হবেন। যদি তিনি না হন, আমিই হব।’

গার্দিওলা বায়ার্ন মিউনিখকে বেছে নিয়েছিলেন সেবার। আর তাতেই ভাগ্য খোলে পেলেগ্রিনির, ‘পেপ বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন এবং পরদিনই সিটি আমাকে ফোন করে। বলে, “মানুয়েল, আপনার সঙ্গে কথা বলা দরকার আমাদের, আমরা চুক্তি করব।”’ সিটির হয়ে একটি লিগ ও দুটি লিগ কাপ জিতেছিলেন পেলেগ্রিনি। পরে সেই গার্দিওলাই তাঁর কাছ থেকে দলটির দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।