রোনালদো জীবন্ত ফুটবল-ঈশ্বর

তুরিনে কাল অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন রোনালদো। ছবি: এএফপি
তুরিনে কাল অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন রোনালদো। ছবি: এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় দেখছিল জুভেন্টাস। জিততে অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখাতে হতো। রোনালদো ঠিক অবিশ্বাস্য কিছুই করে দেখালেন। হ্যাটট্রিক করে জুভেন্টাসকে নিয়ে গেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে

অসম্ভবকে সম্ভব করাই...ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাজ! প্রথম লেগে ২ গোলে পিছিয়ে থাকা একটা দলকে উদ্ধার করতে যা যা করতে হয়, রোনালদো ঠিক তা-ই করলেন। এ যেন সাজানো এক চিত্রনাট্য! অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো অটুট রক্ষণের একটি দলের বিপক্ষে করলেন হ্যাটট্রিক। জুভেন্টাস বিদায়ের দরজা থেকে ফিরে এসে চলে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে! রোনালদোর এই জাদুর ব্যাখ্যা কি সম্ভব?

যেমন অসম্ভব রোনালদোকে কোনো বিশেষণে বিশেষায়িত করা; রিও ফার্ডিন্যান্ড একটাই উপমা খুঁজে পেলেন—রোনালদো জীবিত এক ফুটবল–ঈশ্বর! বিটি স্পোর্টকে রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যুগের সতীর্থ বলেছেন, ‘ও জীবিত এক ফুটবল–ঈশ্বর। ও যা করছে, এ তো রীতিমতো ছেলেখেলা! চ্যাম্পিয়নস লিগে আপনি যা যা রেকর্ড কল্পনা করতে পারেন, এর সবই ওর দখলে আছে। এমনকি সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটাও এখন মেসির সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিল।’

আগের ৫ ম্যাচে সব ধরনের প্রতিযোগিতাতেই অ্যাটলেটিকোকে কেউ গোল দিতে পারেনি। এমন জমাট পরিসংখ্যান নিয়েই ইতালিতে খেলতে এসেছিল ডিয়েগো সিমিওনের দল। সিমিওনের বিশেষ পারদর্শিতাও আছে রোনালদোকে আটকানোর ব্যাপারে। ওদিকে রোনালদোর বয়সও তাঁর বিপক্ষে ছিল। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে একটাই মাত্র গোল ছিল তাঁর নামের পাশে।

কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারেন যাঁরা, তাঁরাই তো কিংবদন্তি। মাথা দিয়ে স্রেফ গুঁড়িয়ে দিলেন অ্যাটলেটিকোর রক্ষণ। ২৭ মিনিটে জুভেন্টাসের হয়ে গোলের খাতা খুললেন রোনালদো, দুর্দান্ত হেডারে। ৪৭ মিনিটের দ্বিতীয় গোলটি আরও ক্ষিপ্র এক হেডারে। এবার গোল লাইন প্রযুক্তি লেগেছে যদিও। ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও স্বস্তি ছিল না। অ্যাটলেটিকো এক গোল করে ফেললেই বিপদ। তখন জুভেন্টাসকে জিততে হতো ৪-১ গোলে। অ্যাটলেটিকোর ফিরে আসার শেষ আশাটাও রোনালদো খুন করে ফেলেন নিখুঁত পেনাল্টিতে।

কাল ম্যাচের পর ভাইরাল হয়েছে ২০০৭ সালের একটা ভিডিও। যেখানে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, সর্বকালের সেরা কে। রোনালদো নিজের নাম বলেছিলেন। পাশে দাঁড়ানো ফার্ডিন্যান্ডও তখন হেসেছেন। ফার্ডিন্যান্ড এখন আফসোস করতে পারেন, তখন যদি রোনালদোর নাম বলে দিতাম!

সেই দুঃখ মুছে ফার্ডিন্যান্ড এখন বলছেন, ‘ওর কালকের প্রথম গোলটাই দেখুন। ঠিক যেন ডানকান ফার্গুসনের মতো (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে হেডে হ্যাটট্রিক করা প্রথম খেলোয়াড়), বলটার দিকে তেড়ে গিয়ে পাহারায় থাকা ফুলব্যাককে পরাস্ত করা, যেন বলছে, “সরে যাও, বলটা আমার।” একেই বলে গোলের জন্য ক্ষুধা! সেটিও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো দলের বিপক্ষে, যাদের রক্ষণ অবিশ্বাস্য বলে সুনাম আছে। সেই দলকে ভেঙেচুরে তিন গোল করে হ্যাটট্রিক!’

গত বিশ্বকাপে ডিয়েগো সিমিওনের মেসেজের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। যেখানে রোনালদোর মানসিক দৃঢ়তার প্রশংসা করে মেসির সমালোচনা করেছিলেন অ্যাটলেটিকোর আর্জেন্টাইন কোচ। কালকের পর মনের কথাটা খোলাখুলি বলে দিতে তাঁর কোনো দ্বিধা থাকল না, ‌‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়, ও বড় রাতের জন্য এ ধরনের পারফরম্যান্স জমিয়ে রাখে।’