রোনালদো সর্বোচ্চ গোলদাতা? মানছেন না তাঁরা

রোনালদো।ছবি: এএফপি

প্রশ্ন উঠবে, আপত্তিও উঠতে পারে—তা জানাই ছিল। কারণ, অফিশিয়াল ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের সঠিক হিসাব নেই। অন্তত তথ্য–উপাত্ত সংরক্ষণকারীদের হিসাবে সর্বোচ্চ গোলের হিসাবটা একেক রকম। চেক প্রজাতন্ত্রের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন যেমন দাবি করছে, জোসেফ বাইকানের গোলসংখ্যা ৮২১। তাই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অফিশিয়াল ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড নিয়ে তাদের আপত্তি তোলার জায়গা আছে!

ইতালিয়ান সুপার কোপায় বুধবার নাপোলির বিপক্ষে জুভেন্টাসের ২–০ ব্যবধানের জয়ে গোল করেন রোনালদো। তখন নতুন করে ওঠে তাঁর রেকর্ড ভাঙার দাবি। কিছু তথ্য–উপাত্ত অনুযায়ী অফিশিয়াল ম্যাচে ৭৫৯ গোল করেছিলেন বাইকান। নাপোলির বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করে ক্লাব ও দেশের হয়ে নিজের মোট গোলসংখ্যা ৭৬০–এ উন্নীত করেন রোনালদো।

ভয়ংকর এক শিকারি ছিলেন বাইকান।
ছবি: ফিফা

কিন্তু চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাইকানের রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেননি জুভেন্টাস তারকা। কাল চেক জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষ থেকে টুইটে বলা হয়, ‘ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা? চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান কমিটি কিংবদন্তি জোসেফ বাইকানের সব গোল হিসাব করছে। আমরা নিশ্চিত করতে পারি অফিশিয়াল ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ৮২১।’ টুইটে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। সেখানে কথা বলেছেন চেক কমিটির প্রধান জারোস্লাভ কোলার।

কোলার বলেন, ‘ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা কে? জোসেফ বাইকান না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো? সহজ প্রশ্ন কিন্তু উত্তরটা জটিল। কারণ, বাইকানের সব গোল থেকে শুধু অফিশিয়াল গোল হিসাব করতে হবে, যেটা বেশ জটিল। আমাদের চেক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান কমিটি এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানের ওয়েবসাইটে আমরা দেখেছি বাইকানের গোলসংখ্যা ৮০৫। কিন্তু ১৯৫২ সালে চেক ফুটবলে দ্বিতীয় বিভাগে হার্দেক ক্রালাভের হয়ে তাঁর গোলগুলো হিসাব করা হয়নি। তবে আমরা সেগুলো খুঁজে বের করেছি—২৬ ম্যাচে ৫৩ গোল। আমরা বাইকানের লিগ, কাপ ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের গোলসংখ্যা পুনরায় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছি।’

আরেকটি ট্রফি জিতেছেন রোনালদো।
ছবি: এএফপি

কোলার এরপর বলেন, ‘এসব হিসাবের পর আমরা বাইকানের অফিশিয়াল ম্যাচের গোলসংখ্যা বের করতে পেরেছি। আমরা নিশ্চিত করতে পারি অফিশিয়াল ম্যাচে বাইকানের গোলসংখ্যা ৮২১। এর অর্থ হলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখনো অফিশিয়ালি সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারেননি। রেকর্ডটি ভাঙতে তাকে আরও ভালো করতে হবে।’

ব্রাজিলের দুই কিংবদন্তি পেলে ও রোমারিও এর আগে দাবি করেছিলেন ক্যারিয়ারে তাঁদের গোলসংখ্যা হাজারের বেশি। যদিও এই দাবির পক্ষে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ৩৫ বছর বয়সী পর্তুগিজ তারকা রোনালদোর যে ফিটনেস ও ফর্ম, তাতে বাইকানের রেকর্ডও (চেক অ্যাসোসিয়েশনের দাবি করা) সম্ভবত বেশি দিন টিকবে না।
অস্ট্রিয়ান–চেক বংশোদ্ভূত বাইকানের জন্ম ১৯১৩ সালে ভিয়েনায়। ১৯৩১ সালে অস্ট্রিয়ান ক্লাব র‌্যাপিড ভিয়েনার হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন বাইকান।

স্লাভিয়া প্রাহা ও দিনামো প্রাগের হয়েও খেলেছেন তিনি। ১৯৩৪ বিশ্বকাপে অস্ট্রিয়াকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন বাইকান। এরপর জাতীয়তা পাল্টে সাবেক চেকোশ্লোভাকিয়া (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র) জাতীয় দলে যোগ দেন তিনি। কিন্তু চেকদের হয়ে ১৯৩৮ বিশ্বকাপে তিনি খেলতে পারেননি। বাইকান ছিলেন লম্বা ও ভীষণ গতিসম্পন্ন স্ট্রাইকার। নিজের সেরা ফর্মে ১০০ মিটার ১০.৮ সেকেন্ডে দৌড়াতে পারতেন, সে সময়ের সেরা স্প্রিন্টারদের সঙ্গে তাঁর গতির তুলনা উঠত।