রোনালদো হতে পারেননি, কেইন হতে পারবেন বেল?

বড় দায়িত্ব পেয়েছেন বেল।ছবি: এএফপি

রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকেরা এখনো ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে ক্ষমা করতে পারেননি। ২০১৮ সালে জিনেদিন জিদান বারবার সতর্ক করেছিলেন, সিদ্ধান্তটা ভুল হবে। পেরেজ মানেননি, তাই ১০ কোটি ইউরোতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন রিয়াল সভাপতি। পতন অবশ্যম্ভাবী জেনে জিদান দলের দায়িত্ব থেকে সরে যান। ওদিকে পেরেজ বাজি ধরলেন গ্যারেথ বেলের ওপর। ৩৩ বছর বয়সী রোনালদো নয়, ২৮ বছরের বেলকেই ভবিষ্যতের কান্ডারি মানছিলেন পেরেজ।

সেটা যে কত ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। রোনালদোর শূন্যস্থান কী পূরণ করবেন, চোটাঘাতে দিন পার করেছেন ক্লাবের চিকিৎসালয়ে। যখন মাঠে ছিলেন তখনো খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। দুই মৌসুমে মোটে ১৭ গোল করেছেন। জিদান ফিরে এসে কিছুদিন চেষ্টা করেছেন, কিন্তু শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে আবার বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। রোনালদো হতে পারেননি। বরং ব্রাত্য হয়ে ক্লাব ছেড়ে গেছেন ২০২০-২১ মৌসুমে।

রিয়াল থেকে ধারে আপাতত টটেনহামে আছেন বেল। রোনালদোর মতো গোল স্কোরার উইঙ্গার হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবার তাঁকে আরও কঠিন এক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরাসরি স্ট্রাইকারের দায়িত্ব পালন করতে হবে তাঁকে। হ্যারি কেইনের অভাব পূরণ করার দায়িত্ব পেয়েছেন বেল।

এত দিন নিয়মিত একাদশে দেখা যায়নি বেলকে।
ছবি: এএফপি

এ মৌসুমে দুর্দান্ত শুরু হয়েছিল টটেনহামের। সন হিউং-মিন ও হ্যারি কেইনের জুটি গোলের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। কিন্তু প্রাথমিক আনন্দ মিইয়ে যেতে বসেছে। টানা কিছু নেতিবাচক ফলের সঙ্গে খেলোয়াড়দের চোট ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে জোসে মরিনিওকে। তবে লিভারপুলের বিপক্ষে গত সপ্তাহে ৩-১ গোলের হারটাই ঝামেলা বাড়িয়ে দিয়েছে বেশি। সে ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন মূল স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন।

কেইনের অনুপস্থিতি লিভারপুলের বিপক্ষে টের পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ার্ধে টটেনহামের আক্রমণে কোনো প্রাণ ছিল না। সন জীবনের সেরা ফর্মে আছেন। এর পেছনে কেইনের অবদানও কম নয়। এ মৌসুমে কেইনের খেলার অন্যদিকটাও ভালো টের পাওয়া যাচ্ছে। খেলা তৈরি করে দিচ্ছেন মাঝমাঠে নেমেও। তবে মরিনিও কেইনের গোল করার ক্ষমতাটার অভাবই টের পাবেন বেশি। পর্তুগিজ কোচ তাই বেলকে দ্রুত সুযোগটা নিতে বলছেন। তাঁর ধারণা, রিয়াল মাদ্রিদে ব্রাত্য হয়ে পড়া এই উইঙ্গারের জ্বলে ওঠার এটাই সময়, ‘এটা ওর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। সে দিন দিন আরও ভালো বোধ করছে। আপনি যখন হ্যারির মানের কাউকে হারাবেন, তখন অন্য খেলোয়াড়দেরই এগিয়ে আসতে হয়। আশা করি বেল আমাদের এ ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।’

বেলের ওপর এমন আশা রিয়ালও করেছিল। রোনালদোর মতো গোল করার ক্ষমতা দেখাতে পারেননি। গোল করা ছাড়াও রোনালদোর আরেকটি গুণ ছিল, আর সেটা হলো সতীর্থদের জাগিয়ে তোলা ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা। বেল মাঠেও নেতৃত্বগুণ দেখাতে পারেননি। টটেনহাম থেকেই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে রিয়ালে গিয়েছিলেন। এ মৌসুমে তাঁর প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল স্পার্স সমর্থকেরা। এই ক্লাবেই যে বিশ্ব সেরাদের কাতারে উঠেছিলেন ওয়েলশ অধিনায়ক। ভাবা হয়েছিল, জিদান গুরুত্ব না দিলেও মরিনিও ঠিকই তাঁর সেরা বের করে আনবেন।

বেল এখন পর্যন্ত সেই প্রত্যাশার যোগ্য প্রতিদান দিতে পারেননি। নতুন ক্লাবেও শুরু করেছেন চোট দিয়ে। লিগে মাত্র ৪ ম্যাচে মাঠে ছিলেন, তাতে এক গোল আছে। কিন্তু কেইনের অভাব পূরণ করার মতো সামর্থ্য তাঁর আছে কি না, প্রশ্ন উঠতেই পারে। মরিনিও নিজেও বেলের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট নন। এক সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ থাকা অবস্থায় যাঁকে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন, সেই বেলকেই এখন বেঞ্চে বসিয়ে রাখতেও তাঁর কোনো দ্বিধা নেই।

কাপ ম্যাচেই বেশি দেখা যাচ্ছে বেলকে।
ছবি: এএফপি

এবার অবশ্য আর বেঞ্চে বসিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কেইনের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগে শূন্যস্থান সৃষ্টি করেছে। বেলকে দলের অধিনায়কের অভাব পূরণ করার দায়িত্ব দিয়েছেন বটে, তবে মরিনিও নিজেও যে খুব একটা আশা দেখছেন না, সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ‘বেল যে পজিশনে খেলতে পছন্দ করে, সেখানেই তাকে প্রতি মিনিট খেলানো হয়েছে। আক্রমণের সঠিক দিকটাতেই ছিল সে।’ তবু বেলের পারফরম্যান্সে উন্নতির ছাপ দেখতে পাওয়া যায়নি।

রিয়ালের সঙ্গে বেলের চুক্তি ২০২২ সাল পর্যন্ত। এ মৌসুমে টটেনহামের হয়ে আলো ছড়াতে না পারলে তাঁকে পাকাপাকি ভাবে টেনে নেবে না ইংলিশ ক্লাব। ইউরোপের অন্য কোনো বড় ক্লাবও তাঁর ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবে না। ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদও যে তাঁকে খেলাবে না, সেটাও প্রায় নিশ্চিত। এমন অবস্থায় ইউরোপে খেলতে চাইলে বেলের এটাই শেষ সুযোগ। টটেনহাম থেকে যখন চলে গিয়েছিলেন, তখন হ্যারি কেইনের নামও শোনেননি অনেকে। যখন ফিরেছেন, তখন টটেনহাম মানেই কেইন। এখন সেই কেইনের শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে বেলকে।

রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে রিয়াল ক্যারিয়ারটাই শেষ করে ফেলেছেন। কেইনের অভাব ভুলিয়ে ক্যারিয়ারটা বাঁচানোর সুযোগটা কি হাতছাড়া করবেন বেল?