রোনালদোকে আটকাতে পেরেছিলেন যে পাঁচ কোচ

ফাইনালে রোনালদোকে নিয়েই দুশ্চিন্তা বেশি লিভারপুলের। ছবি: এএফপি
ফাইনালে রোনালদোকে নিয়েই দুশ্চিন্তা বেশি লিভারপুলের। ছবি: এএফপি
>

চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদোর জুড়ি মেলা ভার। টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২০)। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আছে তিন ফাইনালে গোলের রেকর্ড। অর্থাৎ ২৬ মে কিয়েভের ফাইনালে রোনালদোকে নিয়ে লিভারপুলের শঙ্কাটা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা। সে জন্য অলরেড কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ নিশ্চয়ই এখন ‘হোমওয়ার্ক’ করছেন। রোনালদোকে বোতলবন্দী রাখতে না পারলে যে ১৩ বছর পর লিভারপুলের ইউরোপসেরা হওয়ার স্বপ্ন মাটি হতে পারে!

১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল। তাঁদের প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ এ নিয়ে ফাইনালে উঠল টানা তিনবার। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা তিন শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। রিয়ালের এই স্বপ্নভঙ্গ করতে ফাইনালে কাকে বোতলবন্দী রাখতে হবে লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ তা ভালো জানেন। তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদোর জুড়ি মেলা ভার। টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২০)। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আছে তিন ফাইনালে গোলের রেকর্ড। অর্থাৎ ২৬ মে কিয়েভের ফাইনালে রোনালদোকে নিয়ে লিভারপুলের শঙ্কাটা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা। সে জন্য অলরেড কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ নিশ্চয়ই এখন ‘হোমওয়ার্ক’ করছেন। রোনালদোকে বোতলবন্দী রাখতে না পারলে যে ১৩ বছর পর লিভারপুলের ইউরোপসেরা হওয়ার স্বপ্ন মাটি হতে পারে!
ফাইনালে রোনালদোকে আটকানোর কৌশল বের করার ক্ষেত্রে ক্লপ কিন্তু অতীত থেকে সাহায্য নিতে পারেন। আসুন, জেনে নিই রোনালদোকে সফলতার সঙ্গে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পেরেছেন যে পাঁচ কোচ—

বার্সার কোচ থাকতে রোনালদোকে ভালোই ভুগিয়েছেন গার্দিওলা। ছবি: এএফপি
বার্সার কোচ থাকতে রোনালদোকে ভালোই ভুগিয়েছেন গার্দিওলা। ছবি: এএফপি

পেপ গার্দিওলা
বার্সেলোনার কোচ হিসেবে লা লিগায় ছয়বার রোনালদোর মুখোমুখি হয়েছেন গার্দিওলা। লা লিগায় তাঁর মতো আর কোনো কোচই রোনালদোর বিপক্ষে এত সফল নন। লিগে ছয়বার গার্দিওলার মুখোমুখি হয়ে চারবারই হেরেছেন রোনালদো। জিতেছেন মাত্র একবার আর গোল করেছেন মাত্র দুটি।
গার্দিওলার বার্সার বিপক্ষে প্রথম ‘ক্লাসিকো’য় রোনালদোর সামনে ‘দেয়াল’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন গোলরক্ষক ভিক্টর ভালদেজ। দ্বিতীয় ম্যাচে মাঝমাঠে বার্সার জাভি হার্নান্দেজের দাপটে রিয়ালের মিডফিল্ডাররা রোনালদোকে সেভাবে বলের জোগানই দিতে পারেনি। তৃতীয় ম্যাচটা ৫-০ গোলে জিতেছিল বার্সা। এই ম্যাচে সারাক্ষণ রোনালদোকে চোখে চোখে রেখেছিলেন বার্সার এরিক আবিদাল। গার্দিওলা আবিদালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেকোনো মূল্যে রোনালদোকে রোখার।

২০০৪ ইউরোয় রোনালদোকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছিলেন রেহাগেল। ছবি: রয়টার্স
২০০৪ ইউরোয় রোনালদোকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছিলেন রেহাগেল। ছবি: রয়টার্স

অটো রেহেগেল
গ্রিক সম্রাট অটোর নামের সঙ্গে মিলিয়ে গ্রিকরা তাঁকে ভালোবেসে ‘কিং অটো’ নামে ডাকে। তা তিনি গ্রিক সম্রাট হওয়ার যোগ্য তিনি বটে। গ্রিসকে তিনি যে রূপকথার এক শিরোপা এনে দিয়েছিলেন, ২০০৪ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে। পর্তুগালের ঘরের মাঠে সেই ইউরোতে রোনালদোকে দুবার সফলতার সঙ্গে আটকে রাখতে পেরেছিলেন রেহাগেল।
পর্তুগালের দুই বড় তারকা লুই ফিগো ও রুই কস্তা সেবার তেমনভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। কিন্তু রোনালদো উঠতি খেলোয়াড় থেকে হয়ে উঠেছিলেন পর্তুগিজ আক্রমণভাগের মূল অস্ত্র। গ্রুপপর্বে গ্রিসের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছিলেন রোনালদো। দারুণ রক্ষণকৌশলে নির্ধারিত সময়ে তাঁকে নিষ্ক্রিয় রেখেছিলেন রেহেগেল। যোগ করা সময়ে রোনালদো গোল পেলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। গ্রিসের কাছে পর্তুগাল হারে ২-১ গোলে।
এরপর ফাইনালে রোনালদোকে আর গোল পেতে দেননি রেহেগেল। রক্ষণভাগ দিয়ে তাঁকে বোতলবন্দী রেখে ১-০ গোলের ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছিলেন এ জার্মান কোচ।

স্পেনের কোচ হিসেবে রোনালদোর বিপক্ষে সফল দেল বস্ক। ছবি: এএফপি
স্পেনের কোচ হিসেবে রোনালদোর বিপক্ষে সফল দেল বস্ক। ছবি: এএফপি

ভিসেন্তে দেল বস্ক
২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরোয় ভিসেন্তে দেল বস্কের স্পেনের সামনে অসহায় ছিলেন রোনালদো। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল স্পেন। এ ম্যাচে দু-একটি সুযোগ পেলেও স্পেনের জমাট রক্ষণভাগের জন্য তা কাজে লাগাতে পারেননি রোনালদো। ২০১২ ইউরো সেমিতেও তিনি স্প্যানিশ রক্ষণ ভাঙতে পারেননি। গোলশূন্য ড্র ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে জয় তুলে নিয়েছিল স্পেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে রোনালদোর বিপক্ষে পুয়োল-পিকে-রামোস রক্ষণজুটি দারুণভাবে ব্যবহার করেন ভিসেন্তে দেল বস্ক। দুই বছর পর ইউরোয় স্প্যানিশ রক্ষণভাগে যোগ দেন ফুল ব্যাক আলভারো আরবেলোয়া। আরও শক্তিশালী হয় স্প্যানিশ রক্ষণভাগ। দেল বস্কের এই জমাট রক্ষণ ভাঙা সম্ভব হয়নি রোনালদোর পক্ষে।

কার্লো আনচেলত্তি
কার্লো আনচেলত্তি

কার্লো আনচেলত্তি
চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০০৬-০৭ মৌসুমের সেমিফাইনাল। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এসি মিলানের বিপক্ষে প্রথম লেগ ৩-২ গোলে জিতল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। জোড়া গোল করলেন ওয়াইন রুনি। ইউনাইটেডের অন্য গোলটি রোনালদোর। এই দুজন সেই মৌসুমে ডিফেন্ডারদের সামনে রীতিমতো ত্রাসের সঞ্চার করেছেন। দুজন মিলে ৪৬ গোল করে ইউনাইটেডকে জিতিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ।
আনচেলত্তি তখন মিলানের কোচ। প্রথম লেগ থেকে নেওয়া শিক্ষাটা তিনি কাজে লাগালেন ফিরতি লেগে। রোনালদোকে নিষ্ক্রিয় রাখতে তাঁর পেছনে লাগিয়ে দিলেন শিষ্য জেনারো গাত্তুসোকে। আনচেলত্তি এই কৌশলের ফল পেয়েছিলেন হাতেনাতে। গোটা ম্যাচে রোনালদো একটি শট নিতে পেরেছিলেন কি না সন্দেহ! গাত্তুসোর পেছনে ছিলেন আলেসান্দ্রো নেস্তা ও মাসিমো ওডোর মতো পরীক্ষিত ডিফেন্ডার। ইউনাইটেডকে এই ম্যাচে গোলবঞ্চিত রেখে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানের জয়ে মিলানই উঠেছিল ফাইনালে।

গত ইউরোয় রোনালদোকে ভুগিয়েছেন হলগ্রিমসন
গত ইউরোয় রোনালদোকে ভুগিয়েছেন হলগ্রিমসন

হেইমির হলগ্রিমসন
গত ইউরোর আইসল্যান্ডকে মনে আছে? প্রথম ম্যাচে পর্তুগালকে ১-১ গোলে আটকে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন আইসল্যান্ডের এ কোচ। রোনালদোকে আটকাতে হলগ্রিমসন এ ম্যাচে রেহাগেলের পথ অনুসরণ করেন। পাঁচজনের বেশ জমাট রক্ষণভাগ সাজান তিনি। এ ছাড়া রোনালদোর জন্য আলাদা করে একজন মার্কারও নিযুক্ত করেছিলেন। রিয়াল তারকা এতে গোল করা দূরে থাক, তেমন সুযোগও সৃষ্টি করতে পারেননি। ম্যাচ শেষে আইসল্যান্ডের প্রতি ‘নেতিবাচক ফুটবল’ খেলার অভিযোগ তুলেছিলেন রোনালদো।