রোনালদোকে বিক্রি করতে তর সইছে না জুভেন্টাসের

দলের সেরা তারকাকে বিক্রি করে দিতে চাইছে জুভেন্টাস।ছবি: রয়টার্স

এখনো চুক্তি শেষ হওয়ার বাকি প্রায় দেড় বছর। অথচ এর আগেই দলবদলের বাজারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে তোলার পরিকল্পনা করেছে তাঁর ক্লাব জুভেন্টাস! বার্ষিক ৩১ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দুই বছর আগে জুভেন্টাসে যোগ দেন রোনালদো। ক্লাবটির জার্সিতে দারুণ ফর্মে আছেন। লিগে এ মৌসুমে চার ম্যাচে ছয় গোল করেছেন। জুভেন্টাসের জার্সিতে ৯৪ ম্যাচে ৭১ গোল দলটিকে দুটি লিগ শিরোপাও এনে দিয়েছে। কিন্তু এ ফরোয়ার্ড নাকি ধীরে ধীরে ক্লাবের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছেন!

অক্টোবরের অর্ধেক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন রোনালদো। এরপর ফিরে গোল পেলেও কিছুটা সমালোচনা হয়েছে তাঁর। গোলের নেশায় রোনালদো নাকি স্বার্থপর হয়ে উঠেছেন। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ ফাবিও ক্যাপেলো সরাসরি তাঁকে স্বার্থপর বলেছেন। কোচ আন্দ্রেয়া পিরলোও আকারে–ইঙ্গিতে আরেকটু দলের জন্য খেলতে বলেছেন তাঁর খেলোয়াড়দের। ইঙ্গিতটা যে রোনালদোর দিকে, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। তবে এসব মূল কারণ নয়, রোনালদোর বড় অঙ্কের বেতনটাই জুভেন্টাসের মাথাব্যথার যত কারণ।

২০১৮ বিশ্বকাপ চলার সময় রিয়াল মাদ্রিদ থেকে রেকর্ড ১০ কোটি ইউরোতে জুভেন্টাসে গেছেন রোনালদো। স্প্যানিশ পরাশক্তিদের ছেড়ে ইতালিতে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল পর্তুগিজ তারকার বেতন। রিয়ালে বার্ষিক ২ কোটি ইউরো পাওয়া রোনালদো বেতন বাড়াতে চেয়েছিলেন। নেইমার ও মেসির কাছাকাছি বেতন তাঁকে দিতে রাজি হয়নি রিয়াল। পরে মৌসুমে ৩ কোটি ১০ লাখ ইউরোর চুক্তিতে জুভেন্টাসে গেছেন রোনালদো। পারিশ্রমিকটা কত বেশি, সেটা একটা তুলনাতেই বোঝা যায়। যখন জুভেন্টাসে গিয়েছিলেন, তখন রোনালদোর পর সবচেয়ে বেশি বেতন পেতেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। সেটাও মাত্র ৮০ লাখ ইউরোর একটু বেশি।

জুভেন্টাস দলে রোনালদোর পর বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন তরুণ ডিফেন্ডার ডি লিট। তাঁর বেতনও রোনালদোর চার ভাগের এক ভাগ। রোনালদোর পরই যার ওপর সবচেয়ে বেশি ভরসা জুভেন্টাসের, সেই পাওলো দিবালার বেতন রোনালদোর চেয়ে ২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো কম। করোনাভাইরাসের এই সময়ে আর্থিক বিষয়গুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে এগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। দল এত বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে রোনালদোকে টানতে পারছে না। অবিশ্বাস্য বেতন দিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তাদের। তাই তো তাদের প্রাণভোমরাকে বিক্রি করে দিতে চায় জুভেন্টাস।

রোনালদোকে ছাড়া জুভেন্টাসের আক্রমণে ভরসা রাখার মতো কেউ নেই।
ছবি: রয়টার্স

রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি নবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় আনছে না জুভেন্টাস। চুক্তিটা ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। তবে এক মৌসুম আগেই রোনালদোকে বাজারে তুলতে চায় জুভেন্টাস। রিয়ালকে দেওয়া ১০ কোটি ইউরোর যতটা সম্ভব পুষিয়ে নিতে চায় জুভেন্টাস। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত-ই জানাল এমন খবর।

বাস্তবতা হচ্ছে, রোনালদোর বয়স ৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ৩৬ বছরে পা রাখবেন। এমন একজন বয়স্ক ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে জুভেন্টাস। অথচ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রোনালদোকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল ক্লাবটির।

রোনালদোকে ঘিরেই ১৯৯৬ সালের পর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল জুভেন্টাস। এ কারণেই তো প্রায় ৩০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করে ক্লাবের আর্থিক অবস্থা হুমকির মুখে ফেলে এনেছিল জুভেন্টাস। রোনালদো যোগ দেওয়ার পর কেটে গেছে দুই মৌসুম। সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে তাদের। যদিও গত দুটি সিরি ‘‌‌আ’ জিততে রোনালদোর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। তবে যে প্রত্যাশা করে তাঁকে নিয়ে এসেছিল, সেটা পূরণ হয়নি, এটা মানতেই হবে। তাই তো তাঁকে বেচতে মরিয়া জুভেন্টাস।

এখনো অবসরের কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন রোনালদো। ফিটনেস আর পারফরম্যান্স দিয়ে আরও কয়েক বছর দিব্যি খেলে যেতে পারবেন। কে জানে, হয়তো এ জন্যই আগামী মৌসুমে তাঁকে নিতে লড়াইয়ে নামবে অন্য কোনো বড় ক্লাব।