রোনালদোর কাছে ‘সিংহাসন’ হারালে খুশিই হবেন দাইয়ি
এখনো সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে আলি দাইয়ি। ১০৯ গোল নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসনটা ধরে রেখেছেন ইরানের সাবেক তারকা। কিন্তু সেটি বোধ হয় শিগগিরই ছেড়ে দিতে হচ্ছে তাঁকে। এ জন্য তাঁর মন যে খুব খারাপ, তা নয়। তিনি যে মানুষটির কাছে সিংহাসন হারাতে চলেছেন তিনি যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! এমন কারও কাছে হার মানতেও যে আনন্দ।
বেশ কিছুদিন থেকেই দাইয়ির কাঁধে গরম নিশ্বাস ফেলছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবারের ইউরোতে এরই মধ্যে ৩ গোল করে ফেলেছেন পর্তুগিজ স্ট্রাইকার। দাইয়িকে টপকে যেতে রোনালদোর প্রয়োজন আর মাত্র ৩টি গোল।
ইরানের অন্যতম সেরা তারকাই এই দাইয়ি। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৪৯ ম্যাচে করেছেন ১০৯ গোল। একটা সময় তো মনে করা হতো ইরানি তারকার গড় এ রেকর্ড ভাঙা খুব সহজ কম্ম নয়। কিন্তু রোনারদো এরই মধ্যে ১৭৭ ম্যাচ খেলে করে ফেলেছেন ১০৭টি গোল। যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে দাইয়ির এই রেকর্ড। হয়তো এ ইউরোতেই! কিন্তু রোনালদোর কাছে নিজের গৌরবের কীর্তি হারিয়েও দাইয়ির মন খারাপ হচ্ছে না কেন! তিনি বরং রোমাঞ্চিত এমন একজন ফুটবলার তাঁর রেকর্ড ভাঙার খুব কাছাকাছি চলে আসায়, ‘রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য। রোনালদো এমন একজন ফুটবলার সত্যিই যার এই রেকর্ডটা ভাঙার সামর্থ্য রয়েছে। ওর সামর্থ্যের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সে এমন এক ফুটবলার যার প্রশংসা করার দরকার হয় না।’
একটা সময় এশিয়ান ফুটবলে অন্যদের চেয়ে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন দাইয়ি। ইরানকে মহাদেশীয় পর্যায় থেকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে পেরেছেন শুধু দাইয়ি। ইউরোপে এশিয়ান ফুটবলারদের পথিকৃৎদের একজনও এই সাবেক স্ট্রাইকার।
এশিয়ার অনেক প্রতিপক্ষকেই দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে ওই সময়ের ইরান। খেলেছে ১৯৯৮ ও ২০০৬ বিশ্বকাপ। আর সেই জয়গুলোর বড় কারিগর ছিলেন দাইয়ি। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইরানের ৭-০ গোলে জয়ের ম্যাচে একাই ৫ গোল করেছিলেন তিনি। আর প্রতিপক্ষের জালে ৪ বার করে ৪ গোল করেছেন দাইয়ি। এর একটি হচ্ছে ২০০১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে গুয়ামকে ১৯-০ গোলে হারানোর সেই ম্যাচ।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ইরানের বিখ্যাত জয়ের ওই ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন দাইয়ি। যদিও ইরানের ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন মেহেদি মাহদাভিকিয়া। ৩৭ বছর বয়সে বুট জোড়া তুলে রাখার আগে ২০০৬ বিশ্বকাপে ইরানের অধিনায়কত্ব করেন দাইয়ি।
ইরানের প্রথম ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন ইউরোপের বড় ক্লাবে। খেলেছেন আর্মেনিয়া বিলেফেল্ড, বায়ার্ন মিউনিখ ও হার্থা বার্লিনে। ফুটবল ছেড়ে এরপর কোচিংয়ে গিয়েও আলোচনায় ছিলেন সোজাসাপ্টা কথাবার্তার জন্য। ৫২ বছর বয়সী দাইয়ি ইরানের জীবন্ত কিংবদন্তি। ইনস্টাগ্রামে তাঁকে অনুসরণ করে ৬৭ লাখ মানুষ।
খেলার বাইরেও নানাভাবে সফল দাইয়ি। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করছেন ক্রীড়া সামগ্রীর। তেহরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়েছেন প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক। তবে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতি তাঁর অনাগ্রহও এখন যথেষ্ট আলোচিত ব্যাপার।