রোনালদোর কারণে জুভেন্টাস আরও পিছিয়ে গেছে

রোনালদো পড়েছেন সমালোচনার মুখে।ছবি: রয়টার্স

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে এক-দুটি খোঁচা না মারলে যেন ভাত হজম হয় না আন্তোনিও কাসানোর! ভদ্রলোক ইতালির জার্সিতে খেলা সাবেক স্ট্রাইকার, জাতীয়তায় ইতালিয়ান বলে ভাতের বদলে তাঁর হজম না হওয়া খাদ্যবস্তুটি ‘পাস্তা বা পিৎজা’ বলেও ধরে নিতে পারেন।

খাদ্যবস্তু যা-ই হোক, সেটি হজম হোক না হোক, কাসানো রোনালদোকে নিয়ে কথা বলেই চলেছেন। বেশির ভাগ সময়ে সেটি নেতিবাচক কিছুই হচ্ছে। কদিন আগে কাসানো বলেছিলেন রোনালদো স্বার্থপর, সতীর্থরা গোল করলেন কি করলেন না, তা নিয়ে রোনালদোর কিছু যায়-আসে না। এবার আবার রোনালদোর পেছনে লেগেছেন একসময় রোনালদোরই সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে খেলা কাসানো। ৩৮ বছর বয়সী ইতালিয়ানের মতে, জুভেন্টাসে রোনালদো ফ্লপ! রোনালদো আসার পর জুভেন্টাস নাকি আরও পিছিয়েছে।

অথচ একটা চ্যালেঞ্জ জয়ের লক্ষ্য জানিয়ে তিন বছর আগে জুভেন্টাসে গিয়েছিলেন রোনালদো। কী চ্যালেঞ্জ? ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কুঁড়ি হয়ে ফুটতে থাকা রোনালদো ফুলের সুবাস ছড়িয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে এসে। গোলের বান ছুটিয়েছেন, একের পর এক শিরোপা জিতেছেন। এমনই যে, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে যখন রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন রোনালদো, তার কদিন আগেই রিয়ালকে টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো হয়ে গেছে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের। চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে যেখানে অন্য কোনো ক্লাবের টানা দুটি শিরোপা জেতার কীর্তিও নেই!

রোনালদোর এমন উঁচুতে লাফিয়ে উঠে গোল কম দেখা যায়নি!
ছবি: রয়টার্স

সেই রিয়াল ছেড়ে ১২ কোটি ইউরোতে জুভেন্টাসে রোনালদো কেন এসেছিলেন, তা নিয়ে তর্ক আছে। কেউ বলেন, রিয়ালে বেশি বেতন চেয়েও পাননি বলেই রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে মন-কষাকষি ছিল রোনালদোর। জুভেন্টাস তাঁকে বেশি বেতন দিয়েছে, তাই রোনালদো সেখানে গেছেন। কিন্তু রোনালদো নিজে জুভেন্টাসে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, ম্যান ইউনাইটেডের হয়ে ইংল্যান্ড আর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে স্পেন জয়ের পর এবার জুভেন্টাসের হয়ে ইতালি জয় করতে চান তিনি।

রোনালদো আসার আগের ছয় মৌসুমেই টানা লিগ জিতেছে জুভেন্টাস। ইতালি জেতা তো রোনালদোর জন্য বিশেষ কিছু হতো না। রোনালদো জুভেন্টাসকে দেখিয়েছেন ১৯৯৬ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দেওয়ার স্বপ্ন। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো যে সেটি করতে পারবেন, তা নিয়ে তখন সংশয়ও খুব বেশি মানুষের ছিল না।

এখানেই রোনালদোর ব্যর্থতা দেখছেন কাসানো। রোনালদো আসার পর এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল পেরোতে পারেনি জুভেন্টাস। ২০১৮-১৯ মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়েছে আয়াক্সের কাছে, পরের মৌসুমে অলিম্পিক লিওঁর কাছে বাদ পড়েছে শেষ ষোলোতে। এবারও শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পোর্তোর মাঠে ২-১ গোলে হেরেছে জুভ।

কাসানো তাই বলছেন, ‘ওর চুক্তিতে আর এক বছর বাকি আছে। জুভেন্টাস ওকে দলে টেনেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু ও আসার পর থেকে ওদের অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। সিরি আ তো ওকে ছাড়াই জিতত জুভেন্টাস। (রোনালদোকে দলে আনার) প্রকল্পটাই ভুল ছিল।’

১৭ ফেব্রুয়ারি পোর্তোর মাঠে জুভেন্টাসের হারের পর রোনালদোকে স্বার্থপর বলেছিলেন কাসানো। কেন? কাসানোর চোখে, ‘আমি সব সময়ই বলেছি ও বিলিয়ন বিলিয়ন গোল করেছে ঠিকই, কিন্তু আন্দ্রেয়া পিরলোর ফুটবলের ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। ও সব সময়ই স্বার্থপর ছিল। দলের অন্যরা গোল করল কি করল না, তা নিয়ে ওর মাথাব্যথা নেই। ও ফুটবল খেলাটার চেয়েও শুধু গোল করাটাকেই বেশি পছন্দ করে। আর এই মুহূর্তে সে কারণে সবকিছু আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে।’

আন্তোনিও কাসানো, যখন রিয়াল মাদ্রিদে খেলতেন।
ছবি: সংগৃহীত

এবারও একই সুরেই কথা বলেছেন কাসানো। জুভেন্টাস গত কয়েক বছরে খেলার ধরন বদলানোর চেষ্টা করেছে, বলের দখল রেখে খেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কৌশলে রোনালদো গোল করা ছাড়া দলের অন্য কোনো কাজে আসেন না জানিয়ে কাসানো বললেন, ‘১২০ বছর ধরে যেকোনোভাবে জেতাই ছিল জুভেন্টাসের কাছে সবকিছু। এখনো জেতাটাই সেখানে বড়, তবে (মরিসিও) সারি ও আন্দ্রেয়ার (পিরলো) অধীনে ওরা খেলার ধরন বদলানোর চেষ্টা করেছে। পিরলোর ফুটবল-দর্শনের সঙ্গে রোনালদো যায় না।’

কেন এমনটা বলছেন, সেটার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কাসানো। সেখানে অবশ্য গোলস্কোরার রোনালদোর প্রশংসা করেছেন, তবে পরিপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে রোনালদোর ব্যর্থতাগুলো তুলে ধরেছেন ইতালি জাতীয় দলে ৩৯ ম্যাচে ১০ গোল করা স্ট্রাইকার, ‘ও গোল করেই যাবে। সেটা ও বসে বসেও করতে পারবে। বাঁ দিক থেকে ঢুকবে, জোরালো শটে জাল ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলবে, ওর হেডগুলোও অন্য রকম। কিন্তু আন্দ্রেয়া রক্ষণ থেকে খেলাটা গড়তে চায়। চায় ওর দল যেন প্রতিপক্ষের অর্ধে গিয়ে বল দখলের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু রোনালদো এ ক্ষেত্রে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে না। ও খেলায় তেমন অংশই তো নেয় না। আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারলে ওর গত কয়েক বছরও ব্যর্থ হিসেবেই ধরা হতো।’