রোনালদোর ‘৭’ নম্বর জার্সির এ কী হাল!

বেশির ভাগ সময় চোটেই পড়ে থাকছেন এডেন হ্যাজার্ডটুইটার

আগামীকাল মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ রিয়াল মাদ্রিদের। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে আতালান্তার বিপক্ষে খেলতে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ। আগের দুই মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগে এই পর্যায় থেকে ছিটকে গেছে রিয়াল। ২০১৮–১৯ মৌসুমে আয়াক্সের মাঠে প্রথম লেগে জয় পেলেও রিয়াল দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৪-১ গোলে। আর গত মৌসুমে দুই লেগেই ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরে বসেছিল রেকর্ড ১৩ বার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ীরা।

আবার কবে মাঠে নামবেন হ্যাজার্ড?
টুইটার


এবার আতালান্তার মাঠ থেকে প্রথম লেগে ১-০ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে। তবু কালকের ম্যাচে রিয়ালকে এগিয়ে রাখার জো নেই। কারণ, প্রতিপক্ষের মাঠে জয় পেলেও রিয়ালের খেলায় দাপট দেখা যায়নি। তার ওপর যোগ হয়েছে রিয়ালের কিংবদন্তিতুল্য ‘৭’ নম্বর জার্সির বর্তমান মালিকের একের পর এক চোটের নতুন কিস্তি।

একসময় চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই ছিল রিয়াল মাদ্রিদের দাপট। আর সেটা সাদা জার্সিতে ‘৭’ নম্বর জার্সিধারী একজনের কারণে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর নিজেদের দলবদলের রেকর্ড ভেঙে আরেকজনকে বিখ্যাত সেই জার্সি পরিয়ে দিয়েছে রিয়াল—এডেন হ্যাজার্ড। কিন্তু কাল মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রিয়াল যখন পরীক্ষা দেবে, তখন সেই ৭ নম্বর জার্সিধারী গ্যালারিতে বসে ম্যাচ দেখবেন। যেমনটা গত পৌনে দুই বছরে নিয়মিতই করতে দেখা গেছে তাঁকে।

আবারও চোটে পড়েছেন হ্যাজার্ড, ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সেটা নিশ্চিত করেছেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান
টুইটার


আজ চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের আগে শেষ অনুশীলন ছিল রিয়ালের। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী চোখ এমনিতেই খুঁটিনাটি বের করতে অভ্যস্ত। কিন্তু অনুশীলনে যে এডেন হ্যাজার্ড নেই, সেটা বুঝতে অত অনুসন্ধানেরও দরকার হয় না। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অনুশীলনে একজনের অনুপস্থিত থাকার কারণ বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারও। আবারও চোটে পড়েছেন হ্যাজার্ড!
ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সেটা নিশ্চিত করেছেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান ও স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা। রিয়ালের জন্য বড় হতাশার ব্যাপার এটি যে এক মাসের বেশি সময় চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা হ্যাজার্ড গত পরশুই লিগে এলচের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন। ১৫ মিনিট খেলেছিলেন বদলি নেমে। ভাবা হয়েছিল, আতালান্তার বিপক্ষেও জিদানের পরিকল্পনায় ভালোভাবেই থাকবেন হ্যাজার্ড। কিন্তু আরেকটি চোটে আবারও লম্বা সময়ের জন্য ‘ছুটি’ নিচ্ছেন এই বেলজিয়ান। ডান সোয়াস পেশিতে চোট পেয়েছেন হ্যাজার্ড। ফলে আগামীকাল তো দেখা যাবেই না, আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহই নাকি তাঁকে পাবে না রিয়াল।

গোলডটকম জানাচ্ছে, চেলসিতে ৭ বছরে চোটের কারণে সব মিলিয়ে ১৯৮ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন হ্যাজার্ড। অথচ রিয়ালে যাওয়ার পর দেড় মৌসুমেই চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন ৩৬২ দিন! বারবার হ্যাজার্ডের এভাবে চোটে পড়া নিয়ে জিদান নিজেও যে চিন্তিত, সেটা লুকাননি রিয়াল কোচ, ‘ও আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবে না কাল। কিন্তু আমি আশাবাদী, এটা বড় (লম্বা সময়ের চোট) কোনো কিছু নয়। ওর কিছু তো একটা হয়েছেই। ক্যারিয়ারে কখনো এত চোটে পড়েনি এর আগে। এটা ওর জন্য নতুন কিছু। আমি এর বেশি কিছু ব্যাখ্যা করতে পারছি না। আমরা সবাই ওকে সাহায্য করতে চাই। আশা করি, খুব দ্রুত ও আমাদের মধ্যে ফিরে আসবে।’


হ্যাজার্ডের দ্রুত ফেরার আশা করছেন বেনজেমাও। গত দেড় মৌসুমে যে কয়টি ম্যাচ দেখে রিয়ালের খেলা প্রাণবন্ত মনে হয়েছে, সে ম্যাচগুলোতে হ্যাজার্ড ও বেনজেমার রসায়ন ছিল দেখার মতো। ছন্দে ফেরা হ্যাজার্ডের সঙ্গে বেনজেমার মাঠে বোঝাপড়া রিয়ালের খেলার ধার ও সৌন্দর্য—দুই-ই বাড়িয়ে দিত। এমন এক সঙ্গীকে দ্রুত ফিরে পেতে চান বেনজেমা, ‘আসার পর থেকেই ভাগ্যের কোনো সহায়তা পাচ্ছে না এডেন। ওর জন্য খারাপ লাগে। ও শীর্ষ মানের একজন, যে অনেক সাহায্য করতে পারে আমাদের। ও নিজেও অখুশি। কারণ, নিজেকে তারকা প্রমাণ করতে চায় ও। যা হচ্ছে, সেটা সবাই মাথায় রাখছি। সবাই ওকে সাহায্য করতে চাই। আশা করি, ও দ্রুত ফিরবে।’

চোটই হ্যাজার্ডের নিত্যসঙ্গী এখন
টুইটার


রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচ খেলেছেন হ্যাজার্ড। আর চোটের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন ৫০ ম্যাচে। আজ থেকে অনুপস্থিতির কারণে না থাকা ম্যাচ ও দিনের সংখ্যা বাড়ছে নিশ্চিতভাবেই। রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণ করার কথা ছিল যাঁর, তাঁর এহেন দশা রিয়াল সমর্থকদের নিশ্চিতভাবেই হতাশ করছে।
জিদান যদিও হাল ছাড়ছেন না। তাঁর ধারণা, একদিন না একদিন আস্থার প্রতিদান দেবেনই হ্যাজার্ড, ‘আমি জানি না আমার অধীনেই সেটা হবে কি না, কারণ, ওর অনেক লম্বা সময়ের চুক্তি আছে। কিন্তু আগে হোক পরে হোক, হ্যাজার্ড এর প্রতিদান দেবেই। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমি সমর্থকদের বলব হ্যাজার্ডের জন্য অপেক্ষা করুন, আমরা জানি ও কেমন খেলোয়াড়। সমর্থকেরা এডেন হ্যাজার্ডকে খেলতে দেখতে চায়। ক্লাব, কোচ ও তার সতীর্থরাও তা-ই চায়। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে।’
হ্যাজার্ডের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হলো, ধৈর্য আর অপেক্ষা করা—এ দুই শব্দ নিয়মিত সাফল্যে অভ্যস্ত রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকদের সঙ্গে যায় না। ৩০ বছরে পা রাখা এক উইঙ্গারকে আর কত দিন এভাবে চোটের সঙ্গে লড়তে দেখা মেনে নেবে সমর্থক কিংবা ক্লাব কর্তৃপক্ষ? অতীতের উদাহরণ বলছে, খুব বেশি দিন নয়!