রোনালদোর 'শপি'র চেয়েও বিদঘুটে বিজ্ঞাপন আছে!

‘শপি’র বিজ্ঞাপনে এভাবেই নাচতে দেখা গেছে রোনালদোকে! ছবি: টুইটার
‘শপি’র বিজ্ঞাপনে এভাবেই নাচতে দেখা গেছে রোনালদোকে! ছবি: টুইটার
দুদিন আগে সিঙ্গাপুরের অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘শপি’ একটা বিচিত্র বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞাপনের মূল চরিত্রে ছিলেন ‘শপি’র মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বিশ্বজোড়া ফুটবল–ভক্তদের কাছে বিজ্ঞাপনটা বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। ফুটবলারদের বিদঘুটে বিজ্ঞাপন করার উদাহরণ কিন্তু এটাই প্রথম নয়।


ম্যাচে টান টান উত্তেজনা। ফ্রি কিক নিতে আসছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দুর্দান্ত এক গোলও করলেন ফ্রি কিক থেকে। কিন্তু রোনালদোর গোল নিয়ে দর্শকদের কোনো আগ্রহই নেই! সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ নিজ নিজ স্মার্টফোনের পর্দায়। সবাই ‘শপি’ থেকে কেনাকাটা করায় ব্যস্ত! এরপর রেফারির কাছ থেকে রোনালদো একটা কার্ডও দেখলেন। তবে হলুদ বা লাল কার্ড নয়, ‘শপি’র লোগোসংবলিত কার্ড! তা দেখে উৎফুল্ল রোনালদো সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে নাচ শুরু করলেন। নাচ শেষে সবাইকে বললেন ‘শপি’ থেকে কেনাকাটা করতে।

এমন বিদঘুটে বিজ্ঞাপন শেষ কবে দেখেছেন? রোনালদোকে নাচতেই–বা দেখেছেন কবে? চিন্তায় পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে ফুটবলারদের বিচিত্র সব বিজ্ঞাপন করার উদাহরণ কিন্তু এটাই প্রথম নয়; এর আগেও ফুটবলারদের করা অনেক হাস্যরসাত্মক বিজ্ঞাপন দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। আসুন, এ সুযোগে সেসব বিজ্ঞাপনের কয়েকটার দিকে একটু নজর দেওয়া যাক!

রোনালদো
ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদোও বিদঘুটে বিজ্ঞাপন করার ব্যাপারে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। নবজাতকদের জন্য মায়ের দুধের গুরুত্ব নিয়ে প্যান আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল রোনালদোকে। বিজ্ঞাপনে দেখা গেল, রোনালদোর ‘স্ত্রী’ তাঁদের সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। খাওয়ানো শেষ হওয়ার পর দুজন মিলে সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে দোলনায় রেখে এলেন। সন্তানের দিকে আবেগমথিত কণ্ঠে রোনালদোকে বলতে শোনা গেল, ‘ও আজ অনেক দুধ খেয়েছে!’ সন্তানকে রেখে এসে পরে তাঁরা নিজেদের শয়নকক্ষে চলে এলেন। কিন্তু দরজা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল, দরজার ওপাশ থেকে কে যেন ফুটবল জাগল করছে! পরে দেখা গেল, আর কেউ নয়, মায়ের দুধ খেয়ে শক্তিশালী হয়ে রোনালদোর ‘ছেলে’ই ফুটবল নিয়ে কারিকুরি করা শুরু করে দিয়েছে!

ইমানুয়েল আদেবায়োর
অ্যাডিডাসের একটা বুটের বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল সাবেক আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার ইমানুয়েল আদেবায়োরকে। দেখা গেল, নিজের বুটকে কন্ট্রোলার বানিয়ে ‘গেম’ খেলা শুরু করেছেন টোগোর এই স্ট্রাইকার। গেমে আছেন তিনি নিজেই। বল নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এক এক করে পয়েন্ট পাচ্ছেন, আর প্রত্যেক পয়েন্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল আদেবায়োরের পেছনে কয়েকজন করে নতুন আদেবায়োর যুক্ত হচ্ছেন। ঠিক নোকিয়ার সেই ‘স্নেক’ খেলার মতো! এভাবে দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় গোল করে ফেললেন তিনি। গোল করার পর নাচা শুরু করল আদেবায়োর দল! বিজ্ঞাপনটা নেদারল্যান্ডসে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

লিওনেল মেসি
পেপসির এই বিজ্ঞাপনে দেখা গেল, মরুভূমিতে এসেছেন মেসি। এসেই বালুর ওপর থাকা পেপসির বোতলের দিকে নজর আটকে গেল তাঁর। পায়ে থাকা বল দিয়ে পেপসির বোতলের দিকে মারতে গিয়ে দেখলেন আশ্চর্য এক ঘটনা। মরুভূমির মিরক্যাটগুলো (মঙ্গুজ জাতীয় প্রাণী) পেপসির বোতলে বল লাগতে দিল না। উল্টো তারাই বলে শট মেরে পেপসির বোতল ফেলে দিয়ে মেসিকে হারিয়ে দিল!

পাওলো ফুত্রে
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও এসি মিলানে খেলা সাবেক এই পর্তুগিজ উইঙ্গার ‘লিবিডিয়াম ফার্স্ট’ নামক পুরুষদের যৌনশক্তিবর্ধক ব্র্যান্ডের মুখপাত্র ছিলেন কিছুদিন। তখন এক বিজ্ঞাপনে দেখা দিয়েছিলেন ফুত্রে। বল জাগলিং করছেন, কিন্তু সে বল পায়ের কাছে আসার আগেই আবার মাথার ওপরে উঠে যাচ্ছিল। দুই পা মাটিতে স্থির থাকা অবস্থাতেও বল জাগল করার রহস্যটা কী? বুদ্ধিমান কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত বুঝতে পারায় বিজ্ঞাপনটি টিভি পর্দায় প্রচার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
‘শপি’র বিজ্ঞাপন করার আগেও রোনালদো বিচিত্র বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন। এমনই এক বিজ্ঞাপন ছিল বিশ্বখ্যাত ক্লিয়ার অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুর। দেখা গেল, মাথার খুশকি দিয়ে বানানো ফুটবল রোনালদোর দিকে ধেয়ে আসছে একের পর এক। কিন্তু সে বলগুলো রোনালদোকে আঘাত করতে পারছে না, অ্যাকশন সিনেমার নায়কের মতো নিপুণভাবে পাশ কাটাচ্ছেন। কিন্তু রোনালদোর পাশে থাকা অন্যান্য সাধারণ মানুষ বলগুলোকে ‘ডজ’ দিতে পারছেন না। খুশকির বলগুলো তাঁদের মাথায় বাড়ি খাচ্ছে, আর মাথা হয়ে যাচ্ছে খুশকিময়। তাহলে রোনালদো কীভাবে বলগুলোর আঘাত এড়াতে পারছেন? এখানেই শ্যাম্পুর কেরামতি! রোনালদো সেই শ্যাম্পু মাথায় মেখেছেন দেখেই খুশকির বলগুলো একবারও তাঁকে আঘাত করতে পারেনি!

জিনেদিন জিদান
বিচিত্র বিজ্ঞাপন করার তালিকায় আছেন রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান কোচ জিনেদিন জিদানও। গ্র্যান্ড অপটিক্যাল নামের এক চশমার ব্র্যান্ডের এক বিজ্ঞাপনে দেখা গেল, চোখে কম দেখছেন জিদান। সমস্যা সমাধানের জন্য গ্র্যান্ড অপটিক্যালের এক দোকানে চশমা কিনতে গেছেন তিনি। একটা চশমা পছন্দ হলো তাঁর। জিদানকে দেখে চিনে ফেললেন দুজন ভক্ত। জিদানকে বল নিয়ে কারিকুরি করার অনুরোধ করলেন তাঁরা। জিদানও নতুন চশমা পরে ভালোভাবে দেখতে পেরে শুরু করলেন বল নিয়ে কেরামতি!

ডিয়েগো ম্যারাডোনা
ফুটবলারদের করা বিদঘুটে বিজ্ঞাপন নিয়ে আলোচনা হবে, আর সেই তালিকায় ম্যারাডোনা থাকবেন না, তা কি হয়? জিনিসপত্র কেনাবেচা করার ওয়েবসাইট ‘বোমনেগোচিও ডটকম’–এর একটা আজব বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দেখা গেল, বাসার লোকজন ফুটবল ম্যাচ দেখছেন, পাশে ‘টকিং চেয়ার’–এর রূপে আছেন ম্যারাডোনা। বাসার মানুষকে বিরক্ত করে ছাড়ছেন ‘আর্জেন্টিনা’, ‘আর্জেন্টিনা’ চিৎকার করে। তাঁর চিৎকারে বিরক্ত হয়ে বাসার লোকজন ম্যারাডোনা-চেয়ারকে বিক্রি করে দিতে চাইলেন। কিন্তু কীভাবে বিক্রি করবেন? বোমনেগোচিও ডটকম আছে না!