রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে শেখ জামালের হাসি

যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে নাটকীয় ম্যাচে শেখ জামালকে জেতালেন সলোমন কিং (ডানে)।ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

শেখ জামাল ৩: ২ সাইফ এসসি 

কে জানত এতটা রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে রাখবে ম্যাচটি? কে জানত ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও হেরে যাওয়া দলের নাম হবে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব?

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ প্রিমিয়ার লিগের রোমাঞ্চ ছড়ানো এক ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। শেখ জামাল তৃতীয় গোলটি করেছে যোগ হওয়া সময়ে পেনাল্টি থেকে।

সাইফের গোল দুটি করেছেন ফয়সাল আহমেদ ও জন ওকোলি। শেখ জামালের হয়ে জোড়া গোল করেছেন সলোমন কিং। ১টি গোল নুরুল আবসারের। লিগে এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে সমানতালে জয়রথ ছুটিয়ে চলেছে শেখ জামাল।

বসুন্ধরা কিংস নিজেদের ৫ ম্যাচেই পেয়েছে জয়। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবও তাদের ৪টি ম্যাচেই জিতল। এই জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে উঠে এল শেখ জামাল। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে শেখ রাসেল।

আর ১৫ পয়েন্ট পেয়ে সবার ওপরে বসুন্ধরা কিংস। সাইফ স্পোর্টিংয়ের লিগে এটি দ্বিতীয় হার। ৫ ম্যাচে ২ জয়, ১ ড্র ও ২ হারে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে সাইফ স্পোর্টিং।

তৃৃতীয় গোলটি করার পর শেষ জামাল ধানমন্ডির খেলোয়াড়দের উল্লাস।
ছবি: প্রথম আলো

শেখ জামাল কোচ শফিকুল ইসলাম ম্যাচের শুরু থেকে খেলিয়েছে হাই প্রেসিং ফুটবল। রক্ষণভাগ অনেক ওপরে তুলে খেলার ফল পেয়েছে দুই গোল হজম করে। প্রথমার্ধে বলতে গেলে শেখ জামালের চেয়ে বল দখলে অনেক এগিয়ে ছিল সাইফ স্পোর্টিং। দুটো গোলও হয়েছে অসাধারণ। বিশেষ করে সাইফ স্পোর্টিংয়ের তরুণ মিডফিল্ডার ফয়সাল আহমেদের গোলটা তো ছিল চোখজুড়ানো।

ম্যাচের ২১ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন ফয়সাল। সামনে তখন শেখ জামালের ডিফেন্ডার মোজাম্মেল হোসেন। যেভাবে ড্রিবলিংয়ের পর মোজাম্মেলকে ডজ দিলেন, দৃশ্যটা টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখলে নিশ্চিত লজ্জা পাবেন শেখ জামাল ডিফেন্ডার! ভারসাম্য ঠেকাতে না পেরে পড়ে গেলেন মাটিতে! সামনে তখন শুধুই শেখ জামালের গোলরক্ষক জিয়াউর রহমান। দৃষ্টিনন্দন শটে জিয়াউরের মাথার ওপর দিয়ে বল জড়ালেন জালে।

বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার জন ওকোলি। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে দুর্দান্ত গতিতে ঢোকেন বক্সে। এরপর প্লেসিংয়ে করেন ২-০।

বদলি নেমে দুর্দান্ত খেলেছেন নুরুল আবসার।
ছবি: প্রথম আলো

শেখ জামালের আক্রমণভাগের সবচেয়ে বড় তিন অস্ত্র ওমর জোবে, সলোমান কিং ও সুলাইমান সিল্লাহর কেউই তখনো জ্বলে ওঠেননি। অবশ্য গোল খাওয়ার পর শেখ জামাল রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার কৌশল ধরে। সেই চেষ্টায় পরে সফলই হয়েছে।

গোল শোধে তখন মরিয়া শেখ জামাল। আক্রমণের পর আক্রমণ শানাচ্ছে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বক্সে। ৭১ মিনিটে তো প্রথম গোলটি পেয়েও যেতে পারত শেখ জামাল।

কর্নার থেকে শেখ জামালের উজবেক মিডফিল্ডার ভালি জোনোভ ওতাবেকের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে শাকিল আহমেদ দারুণ হেড করেছিলেন। কিন্তু সে যাত্রায় গোললাইন সেভ করে রহমত মিয়া দলকে বাঁচিয়ে দেন। ৭৩ মিনিটে ফয়সাল আহমেদকে তুলে নিয়ে শেখ জামাল কোচ শফিকুল ইসলাম বদলি হিসেবে নামান নুরুল আবসারকে। ‘সুপার সাব’ নুরুল নেমে ম্যাচের মোড় বদলে দিয়েছেন দারুণভাবে। ম্যাচের দুই মিনিটে ঝড় তুলে দুটি গোল করেন সলোমন কিং ও নুরুল আবসার।

যোগ হওয়া সময়ে ওমর জোবের আরেকটি আক্রমণে পেনাল্টি আদায় করে শেখ জামাল। ওমর জোবের জোরালো শট সাইফের ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসানের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি জালাল উদ্দিন।

৭৫ মিনিটে প্রথম গোলটি হয়েছে ওতাবেকের ফ্রি–কিক থেকে, সলোমন কিংয়ের হেডে (২-১)। এরপর ৭৭ মিনিটে ওমর জোবের জোরালো এক শট সাইফ স্পোর্টিংয়ের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেনের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। ফিরতি বলে নুরুলের ভলি, স্কোর ২-২।

কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো অনেক বাকি। যোগ হওয়া সময়ে ওমর জোবের আরেকটি আক্রমণে পেনাল্টি আদায় করে শেখ জামাল। ওমর জোবের জোরালো শট সাইফের ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসানের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি জালাল উদ্দিন। পেনাল্টি থেকে গোল করেই সলোমন কিং রাজকীয় ভঙ্গিতে সেটা উদযাপন করলেন। এরপর সতীর্থদের নিয়ে এক দৌড়ে গ্যালারির কাছে চলে গেলেন। সেখানে খেলা দেখতে আসা একদল সমর্থক যেন এই জয় দেখার অপেক্ষাতেই ছিলেন।
খেলার পর কোচ শফিকুল ইসলামের উচ্ছ্বাসভরা চাহনি ছিল দেখার মতো! রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচ শেষে হাসতে হাসতেই মাঠ ছেড়েছে প্রিমিয়ার লিগের তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা।