লা লিগার ওই চুক্তিকে অবৈধ বলছে স্প্যানিশ ফেডারেশনও
বার্সেলোনা চুক্তিটার বিরোধিতা করেছে। রিয়াল মাদ্রিদ তো এমন চুক্তি করায় স্প্যানিশ লিগের সভাপতি হাভিয়ের তেবাসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাই নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে! স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) আর এই চুক্তি সমর্থন করবে না, এমনটা অনুমিতই ছিল। তা-ই হলো।
স্প্যানিশ লিগ কর্তৃপক্ষ (এলএনএফপি) স্প্যানিশ লিগের সম্প্রচার স্বত্ব ও অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ সংস্থা সিভিসির সঙ্গে চুক্তি করতে চেয়েছিল। ৫০ বছরের এই চুক্তির বিনিময়ে ৩০০ কোটি ইউরো পাওয়ার কথা ছিল স্প্যানিশ লিগের। এই অর্থের ৯০ ভাগ আবার স্পেনের পেশাদার ক্লাবগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হতো। অবশ্য বণ্টনটা সমানভাবে নয়, হতো লিগের টিভি স্বত্বে বিভিন্ন ক্লাবের অবদানের ভিত্তিতে।
কিন্তু বার্সা-রিয়াল শুরু থেকেই এই চুক্তির বিরুদ্ধে ছিল। আজ এক বিবৃতিতে স্প্যানিশ ফেডারেশনও জানিয়েছে, তারাও এই চুক্তির পুরোপুরি বিরুদ্ধে।
চুক্তিটার ব্যাপারে লিগ কর্তৃপক্ষ রাজি ছিল, কিন্তু বেশির ভাগ ক্লাবের সম্মতি পেলেই শুধু চুক্তিটা আনুষ্ঠানিক রূপ পেত। তা সম্ভবত আর হচ্ছে না। আগামীকাল চুক্তির অনুমোদন নিয়ে ক্লাবগুলোর সঙ্গে লিগ কর্তৃপক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই এসেছে স্প্যানিশ ফেডারেশনের বিবৃতি।
‘সিভিসির সঙ্গে চুক্তির খুঁটিনাটি ও এর প্রভাব ব্যাখ্যা করে এলএনএফপি (লা লিগা) যে কাগজপত্র পাঠিয়েছে, আগামীকালের সভার আগে সেসব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় পেয়েছে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন। এর মধ্যেই চুক্তির সবটুকু দেখা হয়েছে কি না, আমরা জানি না। তবে মানুষকে না জানিয়ে এবং (চুক্তির পথে দর হাঁকানো কোম্পানিগুলোর মধ্যে) সফল বিডার কীভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটা না জানিয়েই করা এই চুক্তির দুটি দিক আছে। একদিকে লিগের অডিও-ভিজ্যুয়াল স্বত্ব বিক্রি করা, অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত এই লিগের বাকি সব কাজসংক্রান্ত’—বিবৃতির শুরুতেই লিখেছে স্প্যানিশ ফেডারেশন।
এরপর নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে, ‘লিগের ক্লাবগুলো এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অডিও-ভিজ্যুয়াল স্বত্ব নিয়ে এলএনএফপি এবং সিভিসির মধ্যে সমঝোতার সব দিক পড়ার পর আরএফইএফকে এই সমঝোতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেই হচ্ছে।’
কেন বিপক্ষে, সেটির কারণ ব্যাখ্যা করে স্প্যানিশ ফেডারেশন লিখেছে, ‘সেটা শুধু আইনগত কারণেই নয়। এই সমঝোতাটা কিছু বৈধ প্রতিষ্ঠানকে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলবে, তাই আইনগত দিক থেকেও এই সমঝোতার কারণে অনেক ঝামেলা তৈরি হবে, যেটা সমঝোতার আনুষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার ব্যাপারটাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। অর্থনৈতিক কারণও আরএফইএফ–এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, কারণ, এই চুক্তি খুবই অল্প অর্থের বিনিময়ে ক্লাব এবং লিগসংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্ব আগামী ৫০ বছরের জন্য কিনতে যাচ্ছে।’
এই চুক্তিকে ইউরোপ ও স্পেনের ফুটবলের নিয়মের পুরোপুরি লঙ্ঘন জানিয়ে আরএফইএফ লিখেছে, ‘এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এই সমঝোতার কারণে ক্লাবগুলোর মধ্যে বৈষম্য বাড়বে, যেটা স্পেনে প্রতিযোগিতামূলক পেশাদার ফুটবলের যথাযথভাবে এগিয়ে চলা অসম্ভব করে ফেলবে।’
একটা উদাহরণ দিয়েই বুঝিয়েছে আরএফইএফ। ধরা যাক, স্পেনের অপেশাদার লিগ থেকে কোনো ক্লাব উঠে এল পেশাদার লিগে। কিন্তু সিভিসির সঙ্গে লিগের চুক্তি অনুযায়ী যেহেতু ওই ক্লাব এর আগে পেশাদার লিগে কোনো অবদান রাখেনি, ক্লাবটার আয়ের অঙ্ক অনেক কমে যাবে।
চুক্তি নিয়ে তাদের বিরোধিতার কথা লিগ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দিয়েছে স্প্যানিশ ফেডারেশন, ‘এই চুক্তি নিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগের অনেক ক্লাবের অভিযোগ ও বিরোধী মন্তব্যের কথা শুনেছে আরএফইএফ, এলএনএফপিকে বুরোফ্যাক্স পাঠিয়ে নিজেদের চূড়ান্ত বিরোধিতার কথা জানিয়েও দিয়েছে আরএফইএফ।’