এ তো ক্লাব নয়, যেন হাসপাতাল!

হেন্ডারসন, সালাহ, আলেক্সান্ডার-আরনল্ড ; সবাই কোনো না কোনো সমস্যায় এখন হাসপাতালে
ছবি: রয়টার্স

করোনাকালীন নতুন স্বাভাবিক জীবনে ফুটবল ফেরার পর এই বছরের শেষ পর্যন্ত পাঁচ বদলি খেলোয়াড়ের সুযোগ দিয়েছিল ফিফা। ঠাসা সূচি, প্রস্তুতির অভাব, চোট, সংক্রমণের শঙ্কা—দলগুলো যেন এসব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে ভালোভাবে খেলায় ফিরতে পারে, সে ভাবনা থেকেই নিয়মটি করেছিল ফিফা।

কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রিমিয়ার লিগ এ নিয়মকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেনি। তারা ফিরে গেছে তিন বদলির নিয়মে। কিন্তু এখন কপাল চাপড়াতে হচ্ছে কোচদের। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে টানা খেলতে হচ্ছে ফুটবলারদের।

এতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পাওয়ায় চোটে পড়ছেন খেলোয়াড়েরা। সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণায় পড়েছে বোধ হয় লিভারপুলই। প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ড্রেসিংরুম যেন রূপ নিয়েছে হাসপাতালে!

উয়েফা নেশনস লিগে খেলতে গিয়ে গত রাতেই লিভারপুলের আরও দুজন খেলোয়াড় চোটে পড়েছেন। প্রথমে খবর এল লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসনকে নিয়ে। এরপর শোনা গেল, খোদ অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনই চোটে পড়েছেন।

বেলজিয়ামের বিপক্ষে গত রাতে হেন্ডারসন নেমেছিলেন ইংল্যান্ডের মাঝমাঠে। কিন্তু প্রথমার্ধের পর উঠিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে, নামানো হয় টটেনহামের হ্যারি উইঙ্কসকে। কিন্তু কী কারণে হেন্ডারসনকে তুলে নেওয়া হলো? চোটের শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল লিভারপুল সমর্থকদের মনে। সেই শঙ্কাই সত্যি হয়েছে ম্যাচ শেষে।

ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট জানিয়েছেন, ফিটনেস সমস্যার কারণেই উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল হেন্ডারসনকে, ‘বিরতির সময় হেন্ডারসন ঠিক ফিট ছিল না। আমার মনে হয়েছিল ও খেলতে পারবে না এভাবে। আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে ওর চোট ঠিক কতটা গুরুতর।’

স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছেন রবার্টসন
ছবি: রয়টার্স

গত মৌসুমের শেষ দিকে এমনই এক চোটে পড়ে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারেননি হেন্ডারসন, খেলতে পারেননি প্রাক্‌-মৌসুমের ম্যাচগুলোতেও। এরপর থেকে চলতি মৌসুমে ক্লপ বেশ রয়েসয়েই খেলাচ্ছিলেন অধিনায়ককে, আয়াক্সের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচটাতেই যেমন, পুরোটা খেলতে হয়নি হেন্ডারসনের।

কিন্তু ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে এসে আবারও ক্লপকে রীতিমতো অসহায়ই বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। একই দিনে হেন্ডারসনের আগে লিভারপুলকে দুঃসংবাদ দিয়েছেন লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসন।

২৩ বছর পর স্কটল্যান্ডকে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিয়ে যাওয়া স্কটিশ অধিনায়ক সার্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টিতে গড়ানো ম্যাচের শেষ দিকে হ্যামস্ট্রিংয়ের ব্যথা টের পেয়েছিলেন।

সেটিই কাল হয়েছে তাঁর জন্য। এখনো চোট কতটা গুরুতর, সেটা জানা যায়নি। নেশনস লিগে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে খেলেননি রবার্টসন, ম্যাচটা স্কটল্যান্ড হেরে গেছে ১-০ গোলে।

আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও লিভারপুল সর্বোচ্চ খারাপ চিন্তাটাই করে রাখছে তাঁকে নিয়ে।রক্ষণের মূল ভরসা সেন্টারব্যাক ভার্জিল ফন ডাইক তো প্রায় পুরো মৌসুমের জন্যই ছিটকে গেছেন।

এবারের আন্তর্জাতিক বিরতির আগে লিগে সর্বশেষ ম্যাচে (ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে) চোটে পড়েছেন রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ড।

ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে গিয়ে অনুশীলনে চোট পেয়েছেন আরেক সেন্টার জো গোমেজ, তাঁরও মাঠে ফিরতে কয়েক মাস লাগবে বলে অনুমান।

রবার্টসনের চোটে পড়ার ফলে নিশ্চিত হয়ে গেল, লিভারপুলের মূল রক্ষণভাগের প্রত্যেকেই এখন হাসপাতালের বিছানায়। লেস্টার সিটির বিপক্ষে এই চারজনের একজনকেও হয়তো পাওয়া যাবে না।

ক্লপের সমস্যা যদি রক্ষণভাগেই শেষ হতো, তাও হতো। সেদিন ভাইয়ের বিয়েতে গিয়ে করোনা বাঁধিয়ে এসেছেন ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। তাঁকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টিনে।

সাদিও মানে ও জের্দান শাকিরির মতো ফরোয়ার্ডেরও করোনা সমস্যা ছিল কিছুদিন আগে। সেটা ঠিক হয়েছে অবশ্য। মাঝমাঠে হেন্ডারসনের আগে ডাক্তারের শুশ্রূষা নিতে হাসপাতালে ছুটেছেন ফাবিনিও, অ্যালেক্স-অক্সলেড চেম্বারলাইন ও নাবি কেইতার মতো তারকারাও।

ওদিকে দলে নতুন আসা থিয়াগো আলকানতারা আবার করোনা ও চোট—দুই-ই বাঁধিয়েছেন।

ক্লাবে এসেই করোনায় পড়া থিয়াগো এভারটনের বিপক্ষে মাঠে নেমে ব্রাজিলের উইঙ্গার রিচার্লিসনের কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে ছিটকে গেছেন মাঠের বাইরে।

লেস্টার সিটির বিপক্ষে থিয়াগো ফিরবেন কি না, সেটাও অনিশ্চিত। ওদিকে কিছুদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন দলে নতুন আসা লেফটব্যাক কনস্তানতিনোস সিমিকাসও। তবে তিনি এখন সুস্থ।

ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড না খেললে ক্লপ রাইটব্যাক হিসেবে সাধারণত যাকে খেলান, সেই নিকো উইলিয়ামসকে নিয়েও চিন্তা দেখা দিয়েছিল গত রাতে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গত রাতে খেলতে নেমেছিল উইলিয়ামসের ওয়েলস। ম্যাচের মধ্যেই চোটে পড়েছিলেন উইলিয়ামস। পরে যদিও পুরো ম্যাচ খেলেই মাঠ ছেড়েছেন। আর হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন লিভারপুল সমর্থকেরা।

লিগে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এ পর্যন্ত মোট ১৬টা গোল হজম করেছে লিভারপুল। ভাঙাচোরা রক্ষণ নিয়ে লেস্টারের বিপক্ষে খেলতে নামলে সে সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?