লিভারপুলকে খারাপ সংবাদই দিলেন ফন ডাইক

বেশ কিছু দিনের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেন ভার্জিল ফন ডাইক।ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের তখন ছয় মিনিট। হুট করে নিজেদের ডি-বক্সে লিভারপুলের ডাচ সেন্টারব্যাক ভার্জিল ফন ডাইকের হাঁটুতে পাগলাটে এক ট্যাকল করে বসেন এভারটনের ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। যে ফন ডাইক ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে এক মিনিটও লিগ ম্যাচের বাইরে থাকেননি, তিনিই কিনা ওই ট্যাকলের পর খেলতেই পারলেন না! স্থানীয় হাসপাতালে হাঁটুতে স্ক্যান শেষে ক্রাচে ভর দিয়েই ফিরলেন। লিভারপুল সমর্থকদের শঙ্কাটা জেঁকে বসেছিল তখন থেকেই। ফন ডাইকের চোটটা কী আসলেই বেশি গুরুতর? যদি গুরুতরই হয়, তাহলে কত দিনের জন্য পাওয়া যাবে না রক্ষণভাগের মূল কান্ডারিকে?

ফন ডাইকের আসল অবস্থাটা জানাতে বেশ দেরিই করেছে লিভারপুল। ডাচ তারকা নিজেও কিছু বলেননি। তবে সবাইকে শঙ্কার মধ্যে রেখেই গত রাতে লিভারপুলের কাছ থেকে এসেছে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিটা। শঙ্কা যা ছিল সেটাই ঘটেছে। লিগামেন্টের চোটে পড়েছেন ফন ডাইক। ফুটবলারদের জন্য এ চোটটা তো বড় ধরনের এক অভিশাপই। সুস্থ হতে এখন শল্যবিদের ছুরির তলায় যেতে হবে তাঁকে। অস্ত্রোপচার করিয়েই তবে ফিরতে হবে মাঠে।

লিভারপুল জানিয়েছে, ‘শনিবারে এভারটনের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র হওয়ার ম্যাচে চোট পাওয়ার কারণে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাবেন ভার্জিল ফন ডাইক। ম্যাচের ছয় মিনিটে এভারটনের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের সঙ্গে ফন ডাইকের একটা ঘটনা ঘটে, যে কারণে এই সেন্টারব্যাকের হাঁটুর লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ফন ডাইককে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা লাগবে।’

পিকফোর্ডের এই ট্যাকলের কারণেই মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো ফন ডাইককে।
ছবি : রয়টার্স

তবে অস্ত্রোপচারের পর ফন ডাইকের ফিরতে কত দিন লাগবে, সে ব্যাপারে লিভারপুল কিছুই বলেনি, ‘এই পর্যায়ে তাঁর ফিরতে কত দিন লাগবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। অস্ত্রোপচারের পর ফন ডাইক ক্লাবের চিকিৎসক দলের পরামর্শ অনুযায়ী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, যাতে যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণ ফিটনেস নিয়ে আবারও মাঠে ফিরতে পারেন।’

ক্লাবের বিবৃতির পর আলাদাভাবে বিবৃতি দিয়েছেন ফন ডাইকও, ‘আজ বিকেলে আমি একজন শীর্ষস্থানীয় শল্যবিদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। গতকাল যা হয়েছে, তারপর আমার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটা কেমন হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য। আমার মনোযোগ এখন সম্পূর্ণরূপে ঠিকঠাক ফিরে আসার দিকে। দ্রুত মাঠে ফিরে আসার জন্য যা যা করা দরকার আমি তাই-ই করব।’

খারাপ এই সময়ের মধ্যেই ফন ডাইক খুঁজে নিচ্ছেন ইতিবাচকতা, ‘আমি বিশ্বাস করি যেকোনো কঠিন সময়ের পেছনে ভালো করার সুযোগ লুকিয়ে থাকে, তাই এই হতাশার মাঝেও আমি আশাবাদী, ঈশ্বরের সহায়তায় আমি আগের চেয়েও বেশি সুস্থ, ফিট ও শক্তিশালী হয়ে ফিরব। ফুটবল কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে ঘটা সবকিছুর পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। সময় ভালো হোক বা খারাপ, মাথা ঠান্ডা রাখা খুবই জরুরি। স্ত্রী, সন্তান, পরিবার ও লিভারপুলের প্রত্যেকের নিরঙ্কুশ সমর্থনে আমি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। আমাকে যারা বার্তা পাঠিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন, আমি ও আমার পরিবার সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন আমি আমার সতীর্থদের সাহায্য করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করব। এক এক দিন করে আস্তে আস্তে আমি সুস্থ হয়ে উঠব। আমি ফিরে আসবই।’

শারীরিক ফিটনেস, শক্তি-সামর্থ্য, মনোবল, আরোগ্য লাভের ক্ষমতা একদম দুর্দান্ত না হলে অনেক খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারই এই চোটের পর শেষ হয়ে যায়। তবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ঠিকঠাক হলে খেলোয়াড় ফিরে পেতে পারেন আগের ফর্ম। রবার্তো ব্যাজিও, আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো, অ্যালান শিয়ারার, ইব্রাহিমোভিচ, রাদামেল ফালকাও, ফ্রান্সেসকো টট্টি, রুড ফন নিস্টলরয়, রয় কিন, জাভি এর্নান্দেস, রবের্ত পিরেস—সবাই একই চোটে পড়েছিলেন। সঠিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পর প্রত্যেকেই নিজের ফর্ম ফিরে পেয়েছিলেন। ব্যাজিও, দেল পিয়েরো নিজেদের ইতালির ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুই স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, শিয়ারার প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন, পোর্তো-আতলেতিকো কিংবা মোনাকোর হয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ফালকাও, একই পথে হেঁটেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক স্ট্রাইকার ফন নিস্টলরয়, বার্সেলোনার জাভি কিংবা রোমার ফ্রান্সেসকো টট্টি।

দেখা যাক, গত মৌসুমে মেসি-রোনালদোদের টপকে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় হওয়া ফন ডাইক এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে টপকাতে পারেন!