লিভারপুলের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এলেন সালাহ

লিভারপুলের হতাশা বাড়াল সালাহর এই খবর।ছবি: রয়টার্স

এত দিন ক্লাবগুলোর কোচদের শঙ্কাটা থাকত চোট নিয়ে। ফিফার আন্তর্জাতিক বিরতিতে গেলে খেলোয়াড়েরা অনেকেই ফিরতেন চোট নিয়ে। সে কারণে ফিফা বিরতির নামই হয়ে গিয়েছিল ‘ফিফা ভাইরাস’। সেটি তো আছেই, এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে আসল আরেক ভাইরাস। করোনা নামের সেই আতঙ্ক ফিফার আন্তর্জাতিক বিরতি নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

শঙ্কাটা যে অমূলক নয়, তা একের পর এক খেলোয়াড়ের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরেই প্রমাণিত। নতুন করে শঙ্কা সত্যি হলো লিভারপুলের। তর্ক সাপেক্ষে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলটার সবচেয়ে বড় তারকা মো সালাহ আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। আজ এক বিবৃতিতে সেটি নিশ্চিত করেছে সালাহর জাতীয় দল মিসর।

‘আমাদের জাতীয় ফুটবল দলের ওপর চালানো সোয়াব টেস্টে দেখাচ্ছে, আমাদের খেলোয়াড়, লিভারপুলের তারকা মোহামেদ সালাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন তিনি’—মিসরের বিবৃতিটা নিশ্চিত ধাক্কা দিয়ে যাবে যেকোনো লিভারপুল সমর্থককে। তবে মন্দের মধ্যে আপাতত সুখবরও আছে বিবৃতিতে, ‘তবে তিনি কোনো উপসর্গে ভুগছেন না। দলের অন্য সদস্যরা নেগেটিভ। তিনি (সালাহ) দলের চিকিৎসকের পরামর্শে এরই মধ্যে মেডিকেল প্রটোকল মেনে চলছেন।’

এ নিয়ে মৌসুমে লিভারপুলের চার খেলোয়াড় করোনায় আক্রান্ত হলেন। এ মৌসুমেই ক্লাবে যোগ দেওয়া গ্রিক লেফটব্যাক কনস্তানতিনোস সিমিকাস সবার আগে করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন, তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন গ্রিসের হয়ে খেলতে গিয়ে। এরপর প্রায় কাছাকাছি সময়ে করোনায় আক্রান্ত হন এই মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে লিভারপুলে আসা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারা ও ২০১৬ সালে ক্লপের অধীনে প্রথম কেনা খেলোয়াড় হয়ে ক্লাবে যাওয়া সাদিও মানে।

একের পর এক খেলোয়াড় হারাচ্ছে লিভারপুল।
ছবি: রয়টার্স

করোনার মধ্যে ক্লাব ফুটবলই যেখানে ফেরানো হয়েছে অনেক নিয়মকানুন অনুসরণ করে, সেখানে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেরানো নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক। একে তো অনেক দেশে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা এখনো ওঠেনি। অনেক খেলোয়াড়ই তাই জাতীয় দলের হয়ে খেলতে যেতে পারছেন না। তার ওপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পর খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে এক জায়গায় আসার পর করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকছেই।

এর মধ্যে যোগ হয়েছে করোনা পরীক্ষার নিয়ম নিয়ে সংশয়। দুই দিন আগে তুরস্কের বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচের বিরতির সময় জানা গেল, ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার দোমাগোই ভিদা করোনা পজিটিভ। তাঁর পরীক্ষার ফলই আসে ম্যাচের বিরতির সময়। তাঁকে দ্বিতীয়ার্ধে আর নামানো হয়নি, তখনই আইসোলেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রথমার্ধে তো করোনা নিয়েই খেলেছেন! কাল ইংল্যান্ডের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের প্রীতি ম্যাচের পর জানা যায়, আয়ারল্যান্ডের অ্যালান ব্রাউনি করোনায় আক্রান্ত। তাঁর পরীক্ষার ফল এসেছে ম্যাচের পর। অর্থাৎ করোনা নিয়েই পুরো ম্যাচ খেলেছেন ব্রাউনি!

ব্রাজিল জাতীয় দলের ক্যাম্পকে ঘিরেও এখন করোনার শঙ্কায় পড়েছে লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবগুলো। কাল জানা গেছে, ব্রাজিলের রাইটব্যাক গাব্রিয়েল মেনিনো করোনায় আক্রান্ত। বাংলাদেশ সময় কাল সকালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে তিনি খেলবেন না ঠিকই। কিন্তু তাঁর পরীক্ষা হয়েছিল বুধবার, ফল এসেছে কাল বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে। এ সময়ের মধ্যে ব্রাজিল দলের সঙ্গে করোনা নিয়েই অনুশীলন করেছেন মেনিনো!

তাতে লিভারপুল-রিয়াল-সিটির শঙ্কা কেন? লিভারপুলের আলিসন ও ফিরমিনো, রিয়ালের ভিনিসিয়ুস, সিটির গাব্রিয়েল জেসুসের মতো খেলোয়াড়েরা যে অনুশীলন করেছেন মেনিনোর সঙ্গে!

আর কেউ এভাবে চোটে বা করোনায় আক্রান্ত হলে আরও বিপদেই পড়বে লিভারপুল। চোটে ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক তো প্রায় পুরো মৌসুমের জন্যই ছিটকে গেছেন, কাল জানা গেছে, আরেক ডিফেন্ডার জো গোমেজও ইংল্যান্ডের হয়ে অনুশীলনে চোটে পড়েছেন। তাঁকেও এই মৌসুমে আর দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ড চোটে পড়েছেন লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে। চোট মাঠের বাইরে রেখেছে ফাবিনিওকে।

এখন সালাহকেও কিছুদিনের জন্য পাচ্ছে না লিভারপুল!