লিভারপুলের ‘ত্রিফলা’ ভেঙে বায়ার্নে সাদিও মানে

ভেঙে যাচ্ছে এই বিখ্যাত ত্রিফলাছবি : টুইটার

আক্রমণভাগে সাদিও মানে কী কী করতে পারেন, সে সম্পর্কে ভালোই জানা ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের। না জানলে লিভারপুলের কোচ হওয়ার পর আক্রমণভাগ শক্তিশালী করার জন্য সবার আগে মানের দিকেই কেন হাত বাড়াবেন এই জার্মান কোচ?

মানেও এ কয় বছরে ক্লপের ভরসা রেখেছেন শতভাগ। মোহাম্মদ সালাহ আর রবার্তো ফিরমিনোর সঙ্গে আক্রমণভাগে গড়েছিলেন ‘ত্রিফলা’, যা লিভারপুলের সাম্প্রতিক সাফল্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এনে দিয়েছে সম্ভাব্য সকল শিরোপা।

কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের আলিঙ্গনে মানে
ছবি: রয়টার্স

গত কয়েক বছরে লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, এফএ কাপ, লিগ কাপ ও উয়েফা সুপার কাপ জেতানো এই সেনেগালিজ উইঙ্গার এবার লিভারপুলকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অর্ধযুগ ধরে অলরেডদের বিখ্যাত ত্রিফলার অন্যতম অংশ মানে এবার জানিয়ে দিয়েছেন, গায়ের জার্সির রংটা হয়তো লালই থাকবে, এক থাকবে না শুধু জার্সির বুকে থাকা ব্যাজ। লিভারপুল ছেড়ে জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিতে যাচ্ছেন ৩০ বছর বয়সী সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড।

মানের লিভারপুল ছাড়ার গুঞ্জন সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের আগে থেকেই শুরু হয়। এরপর মানে বায়ার্ন মিউনিখে যেতে চান, সে গুঞ্জনও ছড়াতে সময় লাগেনি। কিছুদিন আগে সাড়ে সাত কোটি ইউরোর (ছয় কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড) বিনিময়ে বেনফিকা থেকে উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড দারউইন নুনিয়েজকে লিভারপুল যখন কেনে, তখনই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, মানেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত লিভারপুলও।

সেটাই হচ্ছে। মানে নিজেও বায়ার্নে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। দলটার সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি, বেতন সবকিছু নিয়েই ঐক্যমত্যে পৌঁছে যাওয়া মানে লিভারপুলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, সম্মানজনক উপায়েই ক্লাব ছাড়তে চান। বায়ার্নের প্রস্তাব যেন লিভারপুল গ্রহণ করে, সে চাওয়ার কথাও জানিয়ে দেন। যে ফরোয়ার্ড গত ছয় বছর ধরে দলকে এত কিছু দিয়েছেন, সে ফরোয়ার্ডের এমন ইচ্ছে ফেলে দেয়নি লিভারপুল।

মানের জায়গায় এর মধ্যেই নুনিয়েজকে দলে ভিড়িয়েছে লিভারপুল
ছবি: লিভারপুল টুইটার

লিভারপুলের সঙ্গে চুক্তির আর এক বছর বাকি ছিল। মানে চুক্তি নবায়ন না করলে এই ফরোয়ার্ডের জন্য খুব বেশি অর্থ চাওয়া যাবে না, সেটা জানত লিভারপুল। ব্রিটিশ গণমাধ্যম টাইমসের নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক পল জয়েস জানিয়েছেন, মানের জন্য দুই কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড দিচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ। বায়ার্নের হয়ে মানের ম্যাচ খেলা ও ব্যক্তিগত-দলগত সাফল্যের মাত্রা অনুযায়ী আরও ৭৬ লাখ পাউন্ড আয় করার সুযোগ থাকছে লিভারপুলের সামনে।

সবকিছুই পাকাপাকি হয়ে গেছে, বাকি শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। সেটাও যে আসতে বেশি দেরি করবে না, বোঝা গেছে বায়ার্নের ক্রীড়া পরিচালক হাসান সালিহামিদিচের কথায়। স্কাই স্পোর্ট জার্মানিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালিহামিদিচ জানিয়েছেন, ‘হ্যাঁ, সে আসছে।’

লিভারপুলের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৬৯ ম্যাচে ১২০ গোল করেছেন মানে। ২০১৬ সালে ৩ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ডে সাউদাম্পটন থেকে লিভারপুলে যোগ দিয়েছিলেন মানে। এই মৌসুমে সেনেগালের হয়ে জিতেছেন আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের শিরোপাও। ফাইনালে হারিয়েছেন লিভারপুলেরই সতীর্থ মোহাম্মদ সালাহর মিসরকে। ক্লাবের হয়ে লিগ কাপ ও এফএ কাপের শিরোপাও জিতেছেন এই মৌসুমে। তবে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ১ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতা হয়নি লিভারপুলের। গত ২৮ মে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে লিভারপুল ১-০ গোলে হারায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটা জেতা হয়নি মানের।

‘মানে টু বায়ার্ন’ দলবদলটার অন্য পাশে রবার্ট লেভানডফস্কির বায়ার্ন ছাড়ার পথ আরেকটু পরিষ্কার হয়ে গেল। বহুদিন ধরেই বার্সেলোনায় যোগ দিতে চাইছেন দুবার ফিফা বর্ষসেরা নির্বাচিত বায়ার্নের ৩৪ বছর বয়সী পোলিশ স্ট্রাইকার।