লিভারপুলের 'মুখের গ্রাস' কেড়ে নিচ্ছে চেলসি

ভের্নার গন্তব্য ঠিক করে ফেলেছেন। ছবি: টুইটার
ভের্নার গন্তব্য ঠিক করে ফেলেছেন। ছবি: টুইটার
জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ভের্নারকে ছয় কোটি ইউরোর বিনিময়ে ঘরে তুলতে যাচ্ছে ইংলিশ ক্লাব চেলসি

গত এক বছর ধরেই দলবদল বাজারের অন্যতম বড় গুঞ্জন ছিল জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ভের্নারকে কেন্দ্র করে।

আরবি লাইপজিগের জার্মান এই স্ট্রাইকারকে বহুদিন ধরেই পছন্দ লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের। লিভারপুল আক্রমণভাগের সেরা ত্রয়ী রবার্তো ফিরমিনো-সাদিও মানে-মোহাম্মদ সালাহর সঙ্গে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর জন্য স্বদেশি ভের্নারকে বহুদিন ধরেই চাইছিলেন ক্লপ। ক্লপের আগ্রহ দেখে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন ভের্নারও। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার ইনিয়ে-বিনিয়ে মিডিয়ার সামনে লিভারপুলে যাওয়ার জন্য নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছিলেন।

তবে আর দশটা ঘটনার মতো ভের্নার-লিভারপুল 'প্রেমকাহিনি' তেও বাধ সেধেছিল করোনাভাইরাস। লাইজিগ বহু আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ভের্নারের 'রিলিজ ক্লজ' ছয় কোটি ইউরো। নিজেদের সবচেয়ে দামী রত্নকে যে 'রিলিজ ক্লজের' এক পয়সাও কমে ছাড়বে না জার্মান ক্লাবটি।

অন্য কোনো স্বাভাবিক সময়ে হয়তো ছয় কোটি ইউরো দিতে সমস্যা হতো না লিভারপুলের। কিন্তু এখন যে স্বাভাবিক সময় না! হ্যাঁ, কিছুদিন আগেই নিজেদের বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে লিভারপুল। কিন্তু টাকাপয়সা খরচের ব্যাপারে সব সময় কৌশলের আশ্রয়ের নিয়েছে বর্তমান ইউরোপসেরারা। করোনাভাইরাসের কারণে প্রত্যেক ক্লাবই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, লিভারপুলও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে ভের্নারের মুখ ফুটে 'আমি লিভারপুল যেতে চাই' বলার পরেও তাঁকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছিল না ক্লাবটি।

আর সে সুযোগটাই নিতে চলেছে 'অল রেড'দের লিগ প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসি। স্ট্রাইকার দরকার তাদেরও। সে কারণে ভের্নারকে মনে ধরেছিল চেলসি কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের। কিন্তু ভের্নারের লিভারপুল-প্রীতি দেখে লিওঁর মুসা দেম্বেলে, নাপোলির ড্রিস মের্তেন্সদের দিকে নজর দিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু ভের্নারকে কেনার জন্য লিভারপুলের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে, এটা দেখেই সাহস বেড়ে যায় চেলসির। যার ফলাফল, ভের্নারের রিলিজ ক্লজের পুরোটা দিতে রাজী হয়ে যাওয়া!

নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবরে জানা গেছে, ভের্নারের রিলিজ ক্লজের পুরো ছয় কোটি ইউরো দিতে রাজি চেলসি। সঙ্গে বেতন হিসেবে জার্মান স্ট্রাইকারকে প্রতি সপ্তাহে এক লাখ নব্বই হাজার পাউন্ড (দুই কোটি টাকারও বেশি) করে দেবে লন্ডনের ক্লাবটি। ওদিকে আগে জানা গিয়েছিল, ভের্নারকে দলে আনলে তাঁকে প্রতি সপ্তাহে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডের বেশি দেবে না লিভারপুল। ফলে বেতনের দিক দিয়েও ইউরোপসেরাদের পেছনে ফেলছে চেলসি।

ভের্নারের সঙ্গে লাইপজিগের চুক্তির একটা শর্ত ছিল, আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে কেউ যদি ভের্নারের রিলিজ ক্লজ দিতে রাজি হয়, শুধু তখনই নিজেদের সবচেয়ে বড় রত্নকে ছাড়তে রাজি হবে জার্মান ক্লাবটি, নচেৎ নয়। ১৫ তারিখ আসতে বাকী আছে আর মাত্র এগারো দিন। ভের্নারকে কেনার জন্য তাই আগ্রহী ক্লাবগুলোকে এই এগারো দিনের মধ্যেই ছয় কোটি অর্থ পরিশোধ করে ভের্নারের সঙ্গে বেতন সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা শেষ করতে হবে। সে হিসেবে তাই অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে চেলসি। ওদিকে হাতে আরও এগারো দিন সময় থাকলেও ভের্নারের জন্য ছয় কোটি ইউরো দিতে রাজি হচ্ছে না লিভারপুল। কিছুদিন আগেই বিবিসির নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক ডেভিড অর্নস্টেন জানিয়েছিলেন, করোনার কারণে দরকার হলে আরও এক বছর লাইপজিগে খেলতে রাজি ভের্নার, তাও তিনি লিভারপুলেই যেতে চান। আর এক বছর পর ভের্নারের রিলিজ ক্লজও কমে মাত্র চার কোটি ইউরো হয়ে যাবে। এক বছর বাড়তি খেলানোর বিনিময়ে দুই কোটি ইউরো অতিরিক্ত দিতে রাজি হয়নি লিভারপুল। ফলাফল, দৃশ্যপটে চেলসির আগমন!

এমনিতেই দলবদলে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এক বছর ধরে নতুন খেলোয়াড় কিনতে পারছে না লন্ডনের ক্লাবটি। তাই অর্থেরও সমস্যা নেই তাঁদের।

এখন দেখার বিষয়, লিভারপুল কি সামনের কয়েক দিনে ভের্নারের জন্য ছয় কোটি ইউরো দিতে রাজী হয় কি না। যদি না হয়, তাহলে নিজের 'প্রিয়' ক্লাবে না গিয়ে ভের্নারকে খেলতে হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হয়েই!