লেভানডফস্কির ব্যালন ডি’অর–স্বপ্নে বড় আঘাত?

পোল্যান্ডকে এবার আর গ্রুপ পর্ব পার করাতে পারেননি লেভা।ছবি: রয়টার্স

লেভানডফস্কি চাইলে গত রাতে হ্যাটট্রিক করতে পারতেন।

তবে হ্যাটট্রিক করলেও দলের ভাগ্যের যে খুব বেশি পরিবর্তন হতো, তা না। তিন ম্যাচ খেলে সাকল্যে এক পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে পোল্যান্ড। গত রাতে সুইডেনের বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরেছে তাঁরা, লেভা নিজেই করেছেন দুই গোল। হ্যাটট্রিক করলে না হেরে বরং ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ত তাঁরা। সে ক্ষেত্রে আরও এক পয়েন্ট কপালে জুটত—এই আর কী। তাতে পরের রাউন্ডে যাওয়া হতো না। যে কাজটা গ্রুপ থেকে করেছে সুইডেন আর স্পেন।

দলকে কিছুক্ষণের জন্য আশা দেখিয়েছিলেন লেভান্ডফস্কি।
ছবি: রয়টার্স

অবশ্য টুর্নামেন্টের শুরুতে পোল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে, এমন ভাবার মানুষের অভাব ছিল না। যে দলে লেভানডফস্কির মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড় আছেন, সে দল অন্তত দ্বিতীয় বা তৃতীয় দলগুলোর একটা হয়েও উঠবে না? এ মানতে বড্ড কষ্ট হয়।
অথচ সেটাই মানতে হচ্ছে। গ্রুপ পর্বে তিন গোল করেও দলকে টেনে দ্বিতীয় রাউন্ডে তুলতে পারলেন না লেভা। নতমুখে বিদায় নিতে হলো প্রথম পর্ব থেকেই। দলকে কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের নকআউট রাউন্ডে তোলার স্বপ্নের সমাধি তো ঘটেছেই, হয়তো সমাধি ঘটে গেছে আরও একটি স্বপ্নেরও।

স্বপ্নটা ব্যালন ডি’অর জেতার। গতবার করোনার কারণে এই পুরস্কার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আয়োজক ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী। ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের পাশাপাশি ফুটবলারদের পরম আরাধ্য পুরস্কার মানা হয় এটাকেও। হিসাব করলে ব্যালন ডি’অরের গুরুত্ব ফিফা বর্ষসেরার চেয়েও এক জায়গায় বেশি।

শেষ ম্যাচে জোড়া গোল করে ইউরো থেকে বিদায় নিলেন লেভানডফস্কি।
ছবি: রয়টার্স

এই পুরস্কারটা দেওয়া হচ্ছে সেই ১৯৫৬ সাল থেকে, যেখানে ফিফা বছরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়ার চল করেছিল ১৯৯১ সাল থেকে। বর্তমানে ফিফা যে ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কারটা দেয়, সেটার চল ২০১৬ সাল থেকে। তাই সব মিলিয়ে ব্যালন ডি’অরের বয়সই বেশি সবার চেয়ে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে গতবার এই পুরস্কার দেওয়া হতো যথারীতি। আর সেটা দেওয়া হলে, গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৭ ম্যাচে ৫৫ গোল করা, বায়ার্ন মিউনিখকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো লেভানডফস্কির পাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল সবচেয়ে বেশি, যা হয়নি। ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে লেভাকে।

সেই আক্ষেপ থেকেই কি না, এবার আরও ক্ষুরধার হয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার। বিশেষ করে লিগে। গতবার ৩১ ম্যাচে ৩৪ গোল করা লেভা এবার মাত্র ২৯ ম্যাচ খেলেই ৪১ গোল করেছিলেন, ভেঙেছিলেন কিংবদন্তি জার্ড মুলারের রেকর্ড। কপাল খারাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগে দলকে বেশি দূর নিতে পারেননি, তা–ও ৪০ ম্যাচ খেলে ৪৮ গোল করে জানিয়ে রেখেছিলেন, ব্যালন ডি’অরটা এবার তাঁর চাই-ই চাই। সে দাবির পালে আরেকটু বাতাস লাগত যদি পোল্যান্ড অন্তত নকআউট পর্বে উঠতে পারত এই ইউরোতে।

জাতীয় দলের কিছু করতে না পারা লেভার ব্যালন ডি’ অর জেতার স্বপ্ন প্রায় শেষ করে দিয়েছে।
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু সেটা হলো কোথায়? যে বছর ফিফা কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করে, সে বছর ফিফার বর্ষসেরা বা ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে সে টুর্নামেন্টজয়ী দলের কোনো খেলোয়াড়েরই পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা থাকে বেশি, বা অন্তত এমন কোনো খেলোয়াড়ের জেতার সম্ভাবনা থাকে, যার দল ওই টুর্নামেন্টে অন্তত বেশ কিছু পথ পাড়ি দিয়েছে, অন্তত প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়নি (অবশ্যই মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথের ব্যাপারটা এখানে ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে)।

লুকা মদরিচ, ফাবিও কানাভারো, রোনালদো নাজারিও, জিনেদিন জিদান—সবার বর্ষসেরা হওয়ার পেছনে সেবার বিশ্বকাপে ভালো করার ব্যাপারটা একটা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। লেভা এবার পোল্যান্ডকে নিয়ে অন্তত নকআউটে উঠলে ব্যালন ডি’অর জেতার ব্যাপারে সেটা বেশ সাহায্য করতে পারত, যেহেতু এবার বায়ার্ন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি।

লেভা যেহেতু এখন আর ইউরোতে খেলবেন না, নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে এখন একটু হলেও এগিয়ে গেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, হ্যারি কেইন কিংবা রোমেলু লুকাকুর মতো তারকারা। লেভার মতো রোনালদো, এমবাপ্পে, কেইন, মেসি—প্রত্যেকে নিজ নিজ লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। ওদিকে লুকাকু ৯ বছর ধরে চলতে থাকা জুভেন্টাসের একাধিপত্য কাটিয়ে ইন্টারকে লিগ জেতাতে সাহায্য করেছেন। তাঁদের কারোর দল যদি ইউরো জিতে যায়, নিশ্চিতভাবেই সেটা ব্যালন ডি’অর জেতার ক্ষেত্রে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।

লেভা কী তবে দৌড়ে পিছিয়ে গেলেন একটু?