ল্যাম্পার্ডকে স্বস্তি দিল দ্বিতীয়ার্ধের চেলসি

চেলসির দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন দেখল দর্শকেরাছবি: রয়টার্স

এ মৌসুমে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের পেছনে দেদারসে টাকা ঢাললেও, রক্ষণভাগের দিকে অতটা গুরুত্ব ছিল না চেলসির। ফলে টিমো ভেরনার, কাই হাভার্টজ, হাকিম জিয়েশের মতো খেলোয়াড়দের পেছনে প্রচুর অর্থ ঢালা হলেও রক্ষণভাগে নতুন খেলোয়াড় আনতে গিয়ে চুক্তিহীন তারকাদের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে চেলসিকে। তাই বলে থিয়াগো সিলভা বা মালাং সারদের যে রক্ষণ সামলানোর ক্ষমতা নেই, তা অবশ্যই নয়। বরং পিএসজির হয়ে সদ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলা ব্রাজিলের তারকা ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা এলে চেলসির তরুণ রক্ষণভাগ অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হবে, দল পাবে রক্ষণভাগের এক নেতাকে, এটাই ভেবেছিল সবাই। তবে সিলভার অভিষেক ম্যাচে গত রাতে চেলসির যা অবস্থা হলো, তাতে এই বয়সে প্রিমিয়ার লিগে সিলভা কীভাবে ভালো খেলতে পারবেন, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

চেলসির ওপর প্রথমার্ধের ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মূল কারিগর - ক্যালাম রবিনসন।
ছবি : রয়টার্স

গত রাতে সদ্য দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা দুর্বল ওয়েস্ট ব্রমের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল চেলসি। গত ম্যাচে লিভারপুলের বিপক্ষে হারা লন্ডনের দলটা এই ম্যাচে সহজে জিতে সেই ক্ষতে প্রলেপ দেবে, ঝলসে উঠবেন ভের্নার-হাভার্টজরা—এটাই ছিল প্রত্যাশিত। লিভারপুলের বিপক্ষে দৃষ্টিকটুভাবে ভুল করেছিলেন দলের মূল গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগা। ফলে এই ম্যাচে তাঁকে না নামিয়ে বেঞ্চ গোলরক্ষক উইলফ্রেডো ক্যাবায়েরোকে নামান হয়। কিন্তু বিধি বাম। ওই রক্ষণভাগই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের জন্য। মাত্র সাতাশ মিনিটেই তিন-তিনটা গোল খেয়ে বসে চেলসি।

আগের দুই ম্যাচে হেরে আসা ওয়েস্ট ব্রম নিজেদের মাঠে চার মিনিটেই এগিয়ে যায়। মাঝমাঠে লেফটব্যাক মার্কোস আলোনসোর ভুল হেড থেকে বল পেয়ে সামনে থাকা স্ট্রাইকার ক্যালাম রবিনসনের দিকে বাড়ান ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ম্যাথিউস পেরেইরা। এই পেরেইরা ওয়েস্ট ব্রম দলটার আক্রমণের মূল প্রাণভোমরা। ক্যালাম রবিনসনের মাটি ঘেঁষা মাপা কোনাকুনি শটে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ব্রম। এনগোলো কান্তে বা রিস জেমস, কেউই রবিনসনকে সঠিক সময়ে চার্জ করতে পারেননি।

নিজের ভুল নিজেই মানতে পারছেন না থিয়াগো সিলভা।
ছবি : রয়টার্স

২৫ মিনিটে থিয়াগো সিলভার হাস্যকর এক ভুলে ব্যবধান বাড়ায় ওয়েস্ট ব্রম। মাতেও কোভাচিচের পা থেকে আসা ছোট্ট পাস সামলাতে পারেননি এই ব্রাজিল তারকা। ফলে পেছনে ওত পেতে থাকা রবিনসন বলের দখল দিয়ে এক দৌড়ে গোল করেন। শেষ মুহূর্তে সিলভা রক্ষণ-সঙ্গী আন্দ্রেয়া ক্রিস্টিয়ানসেনও সে শট আটকাতে পারেননি। এর মাত্র দুই মিনিট পর কর্নার থেকে রাইটব্যাক ডারনেল ফারলংয়ের হেডের পর ফাঁকা জায়গায় অরক্ষিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ডিফেন্ডার কাইল বার্টলির কাছে চলে যায় বল। সেখান থেকে তাঁর ছোট্ট টোকায় বল ঢুকে যায় জালে। জেমসের মনেই ছিল না, পেছনে বার্টলি দাঁড়িয়ে আছেন! সাতাশ মিনিটেই তিন গোলে পিছিয়ে চেলসি।

এই শটেই ব্যবধান কমান হাডসন-অদয়।
ছবি : রয়টার্স

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের কোচের মুখ থেকে হারিয়ে যাওয়া হাসিটা আবারও ফেরান শুরু করেন চেলসি তারকারা। বাজে খেলা লেফটব্যাক মার্কোস আলোনসোর জায়গায় নামানো হয় নিয়মিত অধিনায়ক সেজার আজপিলিকুয়েতাকে। তাঁর পাস নিয়ে ৫৫ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে মাউন্টের নেওয়া দুর্দান্ত এক শট পরাস্ত করে গোলরক্ষককে।

তিন গোলে এগিয়ে থাকার পরেও ড্র, ওয়েস্ট ব্রমের খেলোয়াড়েরা হতাশ তো হবেনই!
ছবি : রয়টার্স

৭০ মিনিটে দুই জার্মান ভের্নার ও হাভার্টজের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু’ করতে করতে বিপজ্জনকভাবে বক্সে ঢুকে যান ইংলিশ উইঙ্গার ক্যালাম হাডসন-অদয়। মাপা শটে ব্যবধান আরও কমান বায়ার্ন মিউনিখের নজরে থাকা এই তরুণ। যোগ করা সময়ে অবশেষে স্বস্তি ফেরে চেলসি শিবিরে। হাভার্টজের শট গোলরক্ষক স্যাম জনস্টন ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি দলকে। সামনে থাকা স্ট্রাইকার আব্রাহাম সুযোগ কাজে লাগান নিখুঁত লক্ষ্যভেদে। জয়ের আশায় আসা চেলসি অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

দিনের আরেক ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসকে ২-১ গোলে হারিয়েছে এভারটন। গোল করেছেন স্ট্রাইকার ডমিনিক কালভার্ট লুইন ও উইঙ্গার রিচার্লিসন, ওদিকে প্যালেসের হয়ে ব্যবধান কমিয়েছেন মিডফিল্ডার চেইখু কুয়াতে।