সরল অঙ্কের মতো সহজ একটা হিসাবই ছিল বার্সেলোনার—চ্যাম্পিয়নস লিগে উঠতে হলে বায়ার্ন মিউনিখকে হারালেই চলত। কিন্তু সহজ এ সরল অঙ্কের হিসাব মেলাতে পারেনি জাভি হার্নান্দেজের দল। বায়ার্নের কাছে ৩–০ গোলে হেরে গেছে তারা। এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে দিনোমা কিয়েভকে ২–০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোতে উঠেছে বেনফিকা।
নিজেদের ইতিহাসে এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ল বার্সেলোনা। কাতালান ক্লাবটির গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ার সর্বশেষ ঘটনাটি ২০০০–২০০১ মৌসুমের। সেবার গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বেসিকতাসকে ৫–০ গোলে হারালেও শেষ ষোলোতে ওঠা হয়নি তাদের। ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট পেয়ে এইচ গ্রুপে তৃতীয় হয়েছিল বার্সা। তাদের পেছনে ফেলে সেবার শেষ ষোলোতে উঠেছিল এসি মিলান ও লিডস ইউনাইটেড। আর বার্সেলোনার সর্বশেষ ইউরোপা লিগে খেলার ঘটনা ২০০৩-০৪ মৌসুমে।
দুই দশকের মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার সবচেয়ে বাজে অবস্থার কারণ বিশ্লেষণ চলছে ফুটবল বিশ্বে। সেই কারণ বিশ্লেষণের শুরুটা হয়েছে ম্যাচ শেষে দুই দলের কোচ–খেলোয়াড়দের দিয়েই। বার্সেলোনার এমন অবস্থার কারণ বলতে গিয়ে বায়ার্নের ফরোয়ার্ড টমাস মুলার যা বললেন, অনেকেই হয়তো তা শুনে অবাক হবেন। আর রাগে গা জ্বলবে বার্সেলোনা কোচ জাভির।
বার্সেলোনার এই দলের খেলোয়াড়েরা নাকি মানসিক দিক থেকে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলার জন্য প্রস্তুত হননি! ম্যাচ শেষে জার্মান ফরোয়ার্ড মুলার বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, বার্সেলোনার মানসিক সামর্থ্যের সমস্যা আছে। টেকনিক্যালি দলটি খুব ভালো, ট্যাকটিক্যালি আর টেকনিক্যালি দলটির খেলোয়াড়েরা অসাধারণ। কিন্তু তাদের শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে লড়াইয়ের তেজই নেই।’
শুধু মুলার কেন, ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে খোদ বার্সেলোনার কোচ জাভি যা বলেছেন, সেটার সারমর্মও তো একই রকম! বাস্তবতা মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। রোনালদিনিও, লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জেরার্দ পিকে...একটা সময় ছিল অসাধারণ একটি দল ছিল বার্সেলোনার। রোনালদিনিও চলে যাওয়ার পর বার্সার খেলার ছন্দে পতন ঘটতে দেননি মেসি–জাভি–ইনিয়েস্তারা।
দুর্দান্ত এই দল এক দশকের বেশি সময় স্পেন ও ইউরোপের ফুটবলে অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়ে গেছে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল—বার্সায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে আটটি লা লিগা ও চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ জাভি জিতেছেন ২৫টি শিরোপা। স্বপ্নের সেই বার্সা দলের দুঃসময়ে হাল ধরেছেন জাভি। কিন্তু এই দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে হতাশ তিনি, ‘নিজেদের আরও নিংড়ে দিতে হবে। আমরা বার্সেলোনা। (ক্লাবের) গতিধারা পাল্টাতে এটাই হয়তো পরিবর্তনের সূচনা। এটা চ্যাম্পিয়নস লিগ অথচ আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারিনি। এটাই বাস্তবতা। (কাল রাতে) আজ নতুন যুগ শুরু হলো।’