সব ছাপিয়ে ম্যারাডোনার চলে যাওয়া

ইতিহাসের পাতায় ২০২০ সাল চিহ্নিত হয়ে থাকবে করোনার বছর হিসেবে। তার মধ্যেও নতুন স্বাভাবিকতায় মাঠে খেলা ছিল। ছিল মাঠ ও মাঠের বাইরে আনন্দ–বেদনার কাব্য। সেসব নিয়েই ফিরে দেখা ২০২০

করোনা মহামারির বছরে ক্রীড়াঙ্গনের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা হয়ে আসে কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যু
ফাইল ছবি

তাঁকে ভালোবাসায় ঘিরে রাখা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন মাসখানেক হয়ে গেল, তবু এখনো শত সংবাদের শিরোনামে তাঁর নিয়মিত উপস্থিতি। তাঁর মৃত্যু ঘিরে কিছু রহস্য এখনো আছে—যেমনটা ছিল তাঁর জীবনজুড়ে। কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে মৃত্যুর আগে তাঁর যত্নআত্তি ঠিকভাবে হয়েছে কি না, তা নিয়ে। তদন্ত চলছে। এতটুকু নিশ্চয়তা হয়তো দিয়ে দেওয়াই যায়, বিতর্ক-কাদা ছোড়াছুড়ির এখানেই শেষ নয়।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা বলে কথা!

মৃত্যু নামের অমোঘ বাস্তবতা তাঁকে কেড়ে নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তিকে মানুষের মন থেকে মুছে নেয়, মৃত্যুরও সে সাধ্য কী! ম্যারাডোনা আছেন মানুষের ভালোবাসায় আর দীর্ঘশ্বাসে। সে কারণেই হয়তো, ২০২০ সালের শেষে এসে যখন বছরটার দিকে ফিরে তাকানো হয়, ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বারেবারে চোখ ফিরে যায় গত ২৫ নভেম্বরের সেই দুঃস্বপ্ন ক্ষণটিতে। ছিয়াশি বিশ্বকাপের নায়কের মৃত্যুর কদিন না যেতেই ফুটবল হারিয়েছে ইতালিকে বিরাশি বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক পাওলো রসিকেও।

করোনাভাইরাস নামের দুঃস্বপ্নের এখনো দাপুটে উপস্থিতি বিশ্বজুড়ে। প্রায় পুরোটা বছর মানব জীবনের প্রতিটি অধ্যায়কেই ভুগিয়েছে সেটি। কেউ প্রিয়জন হারিয়েছেন, কেউ জীবিকা, কেউবা সর্বস্ব। সে তুলনায় ফুটবলের ক্ষতি হয়তো তেমন বেশি নয়! কিছু ম্যাচ হারিয়েছে ফুটবল, ইউরো-কোপা আমেরিকার মতো টুর্নামেন্ট পিছিয়ে গেছে এক বছর, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাকি অংশ এবার হয়েছে এক লেগের।

ফুটবলের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা খুঁজতে গেলে আর্থিক দিকেই চোখ পড়বে। ক্লাবগুলো ভুগেছে, অনেক ক্লাবই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। ফুটবলের আরেকটি বড় ক্ষতি সম্ভবত এই, ফুটবল কিছুটা হয়তো প্রাণও হারিয়েছে। হারাবে না? মাঠের প্রাণ দর্শককেই যে করোনা মাঠে আসতে দিচ্ছে না!

করোনার বছরে কাঁদিয়ে যাওয়া এত হারানোর ভিড়ে তবু ফুটবলই হয়তো অনেকের কাছে ছিল আশার আলো হয়ে। তিন মাস বন্ধ থাকার পর জুনে করোনাকে পাশ কাটিয়ে ‘নতুন স্বাভাবিক’কে আলিঙ্গন করে ফিরেছে ফুটবল। আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে বেদনাক্লিষ্ট শত মনে। কত অর্জনের গল্পও তো আছে সেখানে! লিভারপুল তিন দশকের খরা ঘুচিয়ে আবার ইংল্যান্ডসেরা হয়েছে, জিনেদিন জিদান রিয়াল মাদ্রিদে ফেরার দ্বিতীয় মৌসুমেই আবার লিগ জিতিয়েছেন ক্লাবটাকে। নেইমার-এমবাপ্পের পিএসজি ইউরোপসেরা না হলেও প্রথমবারের মতো উঠেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে।

আর প্রসঙ্গ যখন শ্রেষ্ঠত্বের, সেখানে সবাইকে ছাপিয়ে আলো ছড়িয়েছেন রবার্ট লেভানডফস্কি ও তাঁর ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। গত বছরের নভেম্বরে হান্সি ফ্লিক দায়িত্ব নেওয়ার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো বায়ার্ন জার্মান লিগ তো রেকর্ড টানা অষ্টমবার জিতেছেই, ট্রেবল জয়ের পথে জিতেছে ইউরোপশ্রেষ্ঠত্বের মুকুট চ্যাম্পিয়নস লিগও। আর সে অর্জনের পথে গোলের বান ছুটিয়ে বছরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কারে লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো দুই মহিরুহকে হার মানিয়েছেন লেভানডফস্কি।

এত কিছুর মধ্যে একটা ‘ধ্রুবক’ অবশ্য ছিল। আগের দুই বছরের মতো এবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে লজ্জায় বিদায় নিয়েছে বার্সেলোনা। এবার লিসবনে এক লেগের কোয়ার্টার ফাইনালেই বায়ার্নের কাছে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে মেসির ক্লাব। এত বছরের প্রিয় ক্লাব যে মেসি আগস্টে ছাড়তে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন, তা হয়তো সে কষ্টেরই প্রতিফলন।

শেষ পর্যন্ত অনেক নাটকের পর মেসি বার্সা ছাড়তে পারেননি চুক্তিগত জটিলতায়। তবে তাঁকে ঘিরে দলবদলের গুঞ্জন এখনো থামেনি। নতুন বছরে সেদিকে চোখ রাখতেই হচ্ছে!