সাইফকে গুঁড়িয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর দুরন্ত জয়

জয়ের নায়ক রাকিব হোসেনকে (৭ নং) নিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায় চার্লস দিদিয়ের।ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দুই সমশক্তির লড়াইটা জমে উঠবে বলে ধারণা করছিলেন অনেকে। কিন্তু বিরতির পর ম্যাচটাকে একপেশে বানিয়ে শেষ পর্যন্ত ৫-২ গোলে জিতেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।

৪-১ স্কোরলাইনকে ৪-২ বানিয়ে জামাল ভূঁইয়ার সাইফ স্পোর্টিং ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করছিল। কর্নার থেকে ৪-৩ প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রাতটা সাইফের ছিল না। উল্টো গোলে ভেসে গেল। চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে এই রাত হয়ে থাকবে স্মরণীয়। ধারাবাহিকতার অভাবে ভোগা দলটি অবশেষে চলতি প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে সেরা নৈপুণ্য দেখাতে পেরেছে।

৭ গোলের রোমাঞ্চকর এই ম্যাচ শুরুর আগে দুই কোচ অনেকটা সময় কথা বললেন মাঠে দাঁড়িয়ে। চট্টগ্রাম আবাহনীর মারুফুল হক ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের স্টুয়ার্ট হলের মধ্যে কী কথা হলো প্রেসবক্স থেকে বোঝা যায়নি। তবে বলা বাহুল্য, দুজনই ম্যাচ জিততে মরিয়া ছিলেন। শেষ হাসি চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হকের। তাঁর ফরোয়ার্ডরা আজ সেরাটা দিতে পেরেছেন মাঠে।

চট্টগ্রামের আবাহনী পঞ্চম গোলটি মান্নাফ রাব্বির (১৭)।
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম দুই গোল করে এবং একটি গোল করিয়ে ম্যাচের নায়ক চট্টগ্রাম আবাহনীর উইঙ্গার রাকিব হোসেন। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি বক্সের ভেতর অরক্ষিত রাকিব বাঁ পায়ের গড়ানো প্লেসিংয়ে এগিয়ে দেন চট্টগ্রাম আবাহনীকে। সুযোগটা তৈরি করেন লিগে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে লিগে সর্বোচ্চ ৭ গোল করা ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নিক্সন গিলের্মি। প্রথমে ডিফেন্ডার রাফিকে বোকা বানান নিক্সন। এরপর ইয়াসিন আরাফাত বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। এই সুযোগে বল পেয়ে গোল করতে ভুল করেননি রাকিব।

ম্যাচে ফিরতে অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সাইফকে। ২৭ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর বক্সে নাসিরুলের হাতে বল লাগায় পেনাল্টি পায় সাইফ। নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড জন ওকোলি লিগে নিজের দশম গোলটি করে ম্যাচে ফেরান সাইফকে। কিন্তু বিরতির পরপরই ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় ম্যাচের রং।

৩ মিনিটের মধ্যে ২ গোল করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ৪৭ মিনিটেই নাসিরুলের কাট ব্যাকে রাকিবের প্লেসিংয়ে ২-১। শেখ জামালের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখা রাকিব এক ম্যাচ নিষিদ্ধ ছিলেন। ফিরেই জোড়া গোল করে দলকে জেতালেন। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও রাকিব। চলতি লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর সবচেয়ে বড় জয়ে ভূমিকা রাখেন নিক্সন ও অধিনায়ক দিদিয়েরও।

এক গোল করেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক চার্লস দিদিয়ের।
ছবি: প্রথম আলো

৪৯ মিনিটে চিনেদু ম্যাথুর সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় নিক্সন করলেন তৃতীয় গোল। এরপর আইভরিকোস্টের মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের হেলাফেলায় বক্সে ঢুকে জোরালো শটে করেন ৪-১। ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়ে সাইফ বাকি সময়টা বৃথা চেষ্টাই করে গেছে ম্যাচে ফিরতে। তবে একটি গোল তারা পেয়েছে। জন ওকোলি ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলে ৪-২ করলেও ৮২ মিনিটে রাকিবের পাস থেকে মান্নাফ রাব্বির ডান পায়ের প্লেসিংয়ে ৫-২।

ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ সাইফ লিগে ভালো করছে না। রহমতগঞ্জের সঙ্গে ড্র দিয়ে লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরু। মোহামেডানের কাছে হারের পর টানা দ্বিতীয় ম্যাচে আজ চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে স্রেফ উড়ে যাওয়ার হতাশা রক্ষণের অবস্থা খুবই খারাপ। ফেডারেশন কাপে ৬ ম্যাচে খেয়েছে ৪টি গোল। লিগে ১৫ ম্যাচে ২৩ গোল খেয়ে বসেছে। বারবার কোচ বদল করায় থিতু হতে পারেনি সাইফ। সেটারই ফল মাঠের টানা ব্যর্থতা।

১৫ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে সাতে নেমে গেল সাইফ। সমান ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট পাওয়া চট্টগ্রাম আবাহনী নিচ থেকে ওপরে উঠে এখন ছয়ে।