সাউদাম্পটনকে ৯ গোল ইউনাইটেডের

ইংলিশ লিগের সবচেয়ে বড় জয়ের তালিকায় এখন এই জয়টা যৌথভাবে শীর্ষে থাকবেছবি : রয়টার্স

এমন অনুভূতির সঙ্গে সাউদাম্পটনের কোচ রালফ হাসনহাটলের যে পরিচিতি নেই, তা নয়।

গত মৌসুমেই লেস্টার সিটির বিপক্ষে ৯-০ গোলে হেরে বসেছিল সাউদাম্পটন। সে ফলকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে এগিয়ে যাচ্ছিল সাউদাম্পটন। হাসনহাটলের অধীনে সাউদাম্পটনের দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের কারণেই হোক, বা তার অধীনে দলটার ক্রমাগত উন্নতির কারণেই হোক, সবাই ওই ফলকে একটা অঘটন হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। কিছুদিন আগেই লিভারপুল-আর্সেনালকে হারিয়েছে তারা, ড্র করেছে চেলসির সঙ্গে—গত মৌসুমে লিগে ১১ হওয়া দলটা এই মৌসুমে আরও এগিয়ে যাবে, এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নামের এক ঝড় এসে আবারও যেন সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল! ফিরিয়ে আনল লেস্টারের বিপক্ষের সেই দুঃসহ স্মৃতি।

গত রাতে লিগ ম্যাচে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ৯-০ গোলের বিশাল জয় তুলে নিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রাতে যাঁরা খেলা দেখেননি, সকালে উঠে তাই স্কোরলাইন দেখে চোখ কচলানোই স্বাভাবিক! ইংলিশ লিগের সবচেয়ে বড় জয়ের তালিকায় এখন এই জয়টা যৌথভাবে শীর্ষে থাকবে।

গত মৌসুমে লেস্টারের ওই বিশাল জয় ছাড়াও ১৯৯৫ সালে ইপসউইচ টাউনের বিপক্ষে একই ব্যবধানে লিগ ম্যাচে জিতেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রায় ২৬ বছর পর ওই অনুভূতি আবারও যেন ফিরে পেয়েছিল ইউনাইটেড শিবিরে। অর্থাৎ ইংলিশ লিগে সবচেয়ে বাজে তিনটি পরাজয়ের দুটিতেই এখন পরাজিত দলের জায়গায় লেখা থাকবে সাউদাম্পটনের নাম।

অবশ্য সাউদাম্পটনের কপালে যে শনি আছে, সেটা বোঝা গিয়েছিল একদম শুরু থেকেই। দ্বিতীয় মিনিটেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কটিশ মিডফিল্ডার স্কট ম্যাকটমিনেকে বাজেভাবে ফাউল করে বসেন সাউদাম্পটনের সুইস মিডফিল্ডার আলেকসান্দ্রে জাঙ্কেউইজ। লাল কার্ড দেখে সরাসরি মাঠের বাইরে চলে যান তিনি, ফলে প্রায় প্রথম থেকেই একজন কম নিয়ে খেলা শুরু করে সাউদাম্পটন। আর ইউনাইটেড একজন বেশি থাকার সুবিধা নেওয়া শুরু করে শুরু থেকেই। ১৮ মিনিটে দুই ফুলব্যাকের যুগলবন্দীতে প্রথম গোল পেয়ে যায় ইউনাইটেড। ইংলিশ লেফটব্যাক লুক শ এর ক্রসে গোল করেন ইংলিশ রাইটব্যাক অ্যারন ওয়ান-বিসাকা। ২৫ মিনিটে মেসন গ্রিনউডের ক্রসে পা ঠেকিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইংলিশ উইঙ্গার মার্কাস রাশফোর্ড।

৩৪ মিনিটে নিজের দলের বিপদ আরও বাড়ান পোলিশ সেন্টারব্যাক ইয়ান বেদনারেক। মার্কাস রাশফোর্ডের ক্রস সামলাবেন কী, উল্টো নিজেদের জালে বল ঢুকিয়ে দেন সাউদাম্পটনের এই সেন্টারব্যাক। ৩৯ মিনিটে আবারও সহায়তাকারীর ভূমিকায় লুক শ, এবার তাঁর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দলকে ৪-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে দেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার এদিনসন কাভানি।

দ্বিতীয়ার্ধে ৬৯ মিনিট পর্যন্ত বেশ ‘শান্ত’ই ছিল ইউনাইটেড। তখনো মনে হয়নি, আরও পাঁচটা গোল আসবে যে। ৬৯ মিনিটে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ব্রুনো ফার্নান্দেসের সহায়তায় ম্যাচে নিজের গোলের খাতা খোলেন ফরাসি স্ট্রাইকার অ্যান্থনি মার্সিয়াল। এর ঠিক দুই মিনিট পর দূরপাল্লার এক শটে ব্যবধান ৬-০ করে ফেলেন ম্যাকটমিনে। দলের এত গোল খাওয়া দেখেই কি না, বেদনারেক বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন যেন। মার্সিয়ালকে বক্সের মধ্যে অন্যায়ভাবে ফাউল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনিও। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান ৭-০ করে ফেলেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। দুই মিনিট পরেই ওয়ান-বিসাকার ক্রসে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ফেলেন মার্সিয়াল।

কিন্তু ইউনাইটেডের এত চিন্তা করলে চলে? ম্যাচের একদম শেষে ব্রুনো ফার্নান্দেসের সহায়তায় গোল করে স্কোরলাইন ৯-০ করে ফেলেন ওয়েলশ উইঙ্গার ড্যানিয়েল জেমস। তাতেই নিশ্চিত হয়, ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় জয়ে আবারও উঠছে ইউনাইটেডের নাম। সাউদাম্পটনের নামও উঠেছে, তবে এক লিগ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়ার তালিকায়, দ্বিতীয়বারের মতো।

ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় জয়ে আবারও উঠছে ইউনাইটেডের নাম।
ছবি : রয়টার্স

ওদিকে দুই লাল কার্ডের নাটক দেখেছে আর্সেনাল-উলভারহ্যাম্পটন ম্যাচও। লাল কার্ড দেখেছেন আর্সেনালের ডিফেন্ডার দাভিদ লুইজ ও গোলরক্ষক বার্নড লেনো। তবে দুই জন বেশি নিয়ে খেলেও আর্সেনালের ওপর ইউনাইটেডের মতো অতটা খড়্গহস্ত হতে পারেনি উলভস। ম্যাচ জিতেছে ২-১ গোলে। গোল করেছেন দুই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও মুতিনিও ও রুবেন নেভেস। আর্সেনালের হয়ে সান্ত্বনার গোলটা আইভোরিয়ান উইঙ্গার নিকোলাস পেপের।