সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছেন মালদ্বীপের প্রতিমন্ত্রী

আশহাদ আলীছবি: টুইটার

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ৫ দলে ২৩ জন করে ফুটবলার আছেন। বেশির ভাগই পেশাদার ফুটবলার। কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকুরেও।

তাঁদের ভিড়ে একজনকে আলাদা করা যাচ্ছে সহজে—আশহাদ আলী। ২০০৭ থেকে মালদ্বীপ জাতীয় দলে খেলছেন আশহাদ। ১৪ বছরে ৫৮ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল। মালদ্বীপের ইগলস ক্লাবের এই ফুটবলার একসময় মালদ্বীপ জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন। না, এসব তথ্য তাঁকে অবশ্য আলাদা করছে না। আশহাদকে এখন মালদ্বীপের লোকে বেশি চেনে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে!

মাঠে নামছেন আশহাদ আলী (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: টুইটার

সম্প্রতি তাঁর নামের পাশে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের কাঙ্ক্ষিত পদগুলোর একটি—প্রতিমন্ত্রী! ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শপথ নিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। এই মন্ত্রণালয়ের অধীন আছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নও। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আশহাদের ফুটবল ক্যারিয়ারে দাঁড়ি পড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু ৩৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডার মন্ত্রীত্বের তকমা গায়ে নিয়েই খেলে চলেছেন জাতীয় দলের জার্সিতে।

চলমান সাফে মালদ্বীপের জার্সিতে প্রথম দুই ম্যাচ খেলেছেন। একজন প্রতিমন্ত্রী দিব্যি খেলে গেলেন, অথচ অনেকে টেরই পেলেন না! বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে চোটের কারণে প্রথমার্ধে ছাড়েন ১২ নম্বর জার্সিধারী আশহাদ। আজ তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে ছিলেন না পুরোপুরি চোটমুক্ত না হওয়ায়।

আশহাদ আলী
ছবি: টুইটার

মালের একই হোটেলে থাকার সুবাদে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় বা কোচিং স্টাফের সঙ্গে লিফটে-লবিতে দেখা হয়ে যাচ্ছে মালদ্বীপের ফুটবলারদের। তবে আশহাদ যে প্রতিমন্ত্রী, তা বাংলাদেশ দলের অনেকেই জানতেন না। বাংলাদেশ দলের গোলকিপার কোচ নুরুজ্জামান আজ রোববার প্রথম আলোকে বললেন, ‘এখানে এসে আমাদের কোচ বলেছেন, মালদ্বীপ দলে একজন মন্ত্রী আছেন। কিন্তু সে কে, বুঝতে পারিনি।’

৭ অক্টোবর বাংলাদেশ-মালদ্বীপ ম্যাচের পরদিন নুরুজ্জামানের সঙ্গে লিফটে দেখা আশহাদের। সৌজন্য বিনিময়ের পর আশহাদের পরিচয় জানার সেই পর্ব সম্পর্কে বেশ মজা করে বলছিলেন নুরুজ্জামান, ‘লিফটে দেখা হতেই জিগ্যেস করলাম, “তোমার চোটের অবস্থা কী?” তখন বলল, “ভালো।” সঙ্গে এ–ও জানাল, “জানো তো, আমি কিন্তু মন্ত্রী।” আমি ভেবেছিলাম, হয়তো মন্ত্রণালয়ে চাকরি-বাকরি করছে। আসলে তো তা নয়, আস্ত এক মন্ত্রী সে!’

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আশহাদ আলী (পেছনের সারিতে বাঁ থেকে তৃতীয়)
ছবি: টুইটার

নুরুজ্জামান কথা এগিয়ে নেন, ‘ও মুঠোফোনে ছবি দেখিয়ে বলল, “তোমাদের রাসেল ভাই তো আমার বন্ধু।” মানে আমাদের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। প্রায়ই নাকি ফোনে কথা হয়। আমাদের মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের কথা আলাদাভাবে বলল।’

আশহাদ মনে করিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার আরিফ খানের কথা। খেলা ছাড়ার পর বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন আরিফ খান। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। কিন্তু খেলতে খেলতে মন্ত্রী হয়ে যাওয়া বা মন্ত্রী পরিচয় গায়ে মেখে আর্ন্তজাতিক ফুটবলে বিচরণ করা ব্যতিক্রমী এক ঘটনাই।

মালদ্বীপ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে আশহাদ বলেছিলেন, ফুটবলসহ দেশের অন্য সব খেলার উন্নয়নে কাজ করবেন তিনি।

বছর পনেরো আগে বাংলাদেশে মন্ত্রী নামের এক ফুটবলার ছিলেন। অন্তত নামের কারণে ‘মন্ত্রী’ শব্দটির মাহাত্ম্য উপভোগ করতেন সেই ফুটবলার। কিন্তু আশহাদের ঘটনা একেবারে বাস্তব, যা বেশ উপভোগ করছেন মালদ্বীপের এই ফুটবলার। হাত বাড়িয়ে কারও সঙ্গে করমর্দন করার ফাঁকে আশহাদ নিজের নতুন পরিচয়টি দিতেও ভোলেন না—‘আমি তো মন্ত্রী!’

খেলোয়াড় থাকতে থাকতে একটা দেশের মন্ত্রিত্ব সামলানো সহজ ব্যাপার নয়। তা যত ছোট দেশই হোক। হাজার হোক একটা মন্ত্রণায়লের দায়িত্ব থাকা বিরাট ব্যাপার। আশহাদ মালদ্বীপের জোট সরকারের মূল শরিক মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। মালদ্বীপ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে আশহাদ বলেছিলেন, ফুটবলসহ দেশের অন্য সব খেলার উন্নয়নে কাজ করবেন তিনি।

জাতীয় দল ও ক্লাবের খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নাকি তাঁর বসা হয় কমই। চার মাস ধরে মালদ্বীপের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মূল মন্ত্রীকে অলিখিতভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে গোটা মন্ত্রণালয় এখন সামলাচ্ছেন আশহাদ।