সাফল্যের কৃতিত্ব মারিয়াদের দিলেন কোচ গোলাম রব্বানী

ভারতের মেয়েদের বিপক্ষে দাপুটে ফুটবল খেলেই জিতেছে বাংলাদেশছবি: প্রথম আলো

ফাইনালের পর আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ সম্মেলন হলো না। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ততক্ষণে ট্রফি হাতে নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই আনন্দে যোগ দিলেন কোচ গোলাম রব্বানী। বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা বরাবরই অপ্রতিরোধ্য। আর এই মেয়েদের এমন সাফল্যের পেছনে রয়েছে কোচ গোলাম রব্বানীর অবদান।

২০১৫ সালে নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে মেয়েদের সাফল্যের পথচলা শুরু। এরপর ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে এই একই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। ২০১৬ সালে এএফসি অনূধর্ব্ব-১৬ বাছাইপর্বেও বাংলাদেশ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। এরপর ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে ট্রফি জেতে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আঁখি খাতুন, মারিয়া মান্দারা।

অনেক দর্শক এসেছেন মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যোগ হয়েছে আজ সন্ধ্যায়। কমলাপুর শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী।

আজকের ম্যাচে জয়ের পর এ সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব মেয়েদের দিলেন বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী, ‘এ টুর্নামেন্টে আমাদের মেয়েরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ছন্দে ছিল ওরা। আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল ম্যাচটি জিতব। গ্রুপপর্বের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে যে ফুটবল খেলেছি, সেটা আজ খেলিনি। কারণ ওই দিন আমাদের ফাইনালে ওঠার তাড়া ছিল। আজ পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে বাংলাদেশ।’

এই বাংলাদেশ দলে বেশির ভাগ ফুটবলারই গোল পেয়েছেন টুর্নামেন্টে। ফুটবলারদের প্রতি এ আস্থা ছিল কোচের। আর সেই আস্থার প্রতিদান দিয়ে কোনো ফরোয়ার্ড নয়, রাইটব্যাক আনাই মগিনি দিয়েছেন জয়সূচক গোল করে। আগের চার ম্যাচে কোনো গোল না পেলেও দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে ওঠেন আনাই।

নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী
ছবি: প্রথম আলো

ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত আনাই বলছিলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি। গোল পেয়ে গেছি। যখন গোল পাচ্ছিলাম না তখন রিপা (শাহেদা) বলটা দিতেই পোস্টে শট নেওয়ার চেষ্টা করি। আগে একবার গোল হয়নি। কিন্তু পরেরবার হয়েছে। আমার গোলে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি বলে খুশিটা বেশি লাগছে।’

পুরো টুর্নামেন্টেই আলো ছড়িয়েছেন কক্সবাজারের মেয়ে শাহেদা আক্তার। মাত্র ১৬ বছর বয়স হলেও দুর্দান্ত খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে। ৫ ম্যাচের মধ্যে খেলেছেন তিনটিতে। এই তিন ম্যাচে সুযোগ পেয়েই হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও জিতেছেন শাহেদা। দুটো ট্রফি হাতে নিয়েও যেন ঘোরের মধ্যে ছিলেন শাহেদা, ‘এই ভালোলাগা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমি কখনো আশা করিনি এত গোল করব। চোটের কারণে কোচ এক ম্যাচ খেলাননি। আরেক ম্যাচ বিশ্রামে ছিলাম। আমার ওপর কোচ যে আস্থা রেখেছিলেন, সেটার প্রতিদান দিয়েছি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এভাবে আরও গোল করতে চাই।’

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের মেয়েদের উদ্‌যাপন
ছবি: প্রথম আলো

টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা। ভারতের বিপক্ষে জিততে যেন মরিয়া ছিলেন তিনি। এই জয়টা দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল বলছেন মনিকা, ‘এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হব বলে দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রম করছি। আজ আমাদের প্রমাণ করার সুযোগ ছিল। মাঠে লড়াই করে সেটা প্রমাণ করেছি এবং ভালো খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের সবার মধ্যে এই বিশ্বাস ছিল যে কেউই গোল করতে পারবে। ম্যাচটি বের করে আনবে।’

অধিনায়ক মারিয়া মান্দা মাঝমাঠে ছিলেন প্রাণভোমরা। এর আগেও কমলাপুর স্টেডিয়ামে ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও অধিনায়ক ছিলেন মারিয়া। সেবারও ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এবারও সেই অধিনায়কের হাতেই আরেকটি ট্রফি। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কোনো গোল খায়নি। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

গলায় ঝোলানো সোনালি পদক নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মারিয়া বলছিলেন, ‘ ফাইনাল হলেও এই ম্যাচ নিয়ে কোনো সময় চাপে ছিলাম না। পুরো টুর্নামেন্টে যেভাবে খেলেছি, আজও সেভাবেই খেলতে চেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, এই একটা ম্যাচ জিততে বাকি। চেষ্টা করেছি ঠান্ডা মাথায় গোল বের করতে হবে। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশবাসীর সবাইকে একটা জয় উপহার দিয়েছি। আমাদের অনেক ভালো লাগছে।’