সাব্বিরের প্রশ্ন, ‘তাঁরা আর কবে পারবেন’
অভিমানে ফুটবল থেকে নিজেকে এক প্রকার দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির। ভক্তরা যাঁকে ‘বাংলার ম্যারাডোনা’ বলে ডাকতে পছন্দ করতেন। দেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা এই প্লেমেকার টানা ৭টা বছর মাঠেই আসেননি। এমনকি যে মোহামেডানের জার্সিতে তিনি খেলোয়াড়ি জীবনে নিজেকে উজাড় করে দিতেন, সেই প্রিয় দলের খেলার খবরও রাখেননি। তবে গত বছর ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর সাদা-কালো শিবিরের নবযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন। তাঁকে দেখা গিয়েছিল গ্যালারিতে। আজ তিনি এলেন মোহামেডান ও জাতীয় দলের এক সময়ের সতীর্থ শফিকুল ইসলাম মানিকের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায়। শফিকুল বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের ফুটবলে পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদী তিনি।
খেলোয়াড়ি জীবনে ‘কোচ’ কাজী সালাউদ্দিনের অধীনে খেলেছেন তিনি। ১৯৮৮ সালে আবুধাবিতে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে একবার, ১৯৯৩ সালে জাপান-আমিরাতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আরেকবার। প্রথমবার অভিজ্ঞতা ভালো হলেও শেষবার সেটি নাকি মোটেও ভালো ছিল না। সালাউদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল বলেই খবর বেরিয়েছিল। সে অবশ্য ২৭ বছর আগের কথা।
তবে শফিকুল তাঁর বরাবরেরই বন্ধু। মোহামেডানের জার্সিতে ১৯৮৭-৮৯ পর্যন্ত ছিলেন সতীর্থ। জাতীয় দলেও একই সময়ে এক সঙ্গে খেলেছেন। আসছে বাফুফে নির্বাচনে সাব্বিরের পক্ষপাত সতীর্থের দিকেই। শফিকুল নির্বাচিত হলে ফুটবলে পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করেন তিনি, ‘ সালাউদ্দিন ভাইকে আমি জাতীয় দলে কোচ হিসেবে পেয়েছি আর ( শফিকুল ইসলাম) মানিক ভাই ছিলেন আমার সতীর্থ খেলোয়াড়। আমি অনেক দিন তাঁর সঙ্গে খেলেছি। সে খুবই শৃঙ্খল ও সৎ মানুষ। তাঁর অধীনে ফুটবল নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে। আমার কাছে মনে হয় সে জয়ী হয়ে আসলে ফুটবলে একটা পরিবর্তন আসবে।’
সাব্বিরের সময়টাকে বাংলাদেশের ফুটবলের ‘সোনালি সময়’ই বলা হয়। অন্তত, দর্শক-আগ্রহের দিক দিয়ে তো বটেই। ক্লাব ফুটবল তো ছিল রমরমা। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স আহামরি না হলেও সাব্বিররা ইরান-জাপানের মতো দলের সঙ্গে লড়াই করত। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়াকে হারাত। নেপাল-ভুটান কিংবা মালদ্বীপ অন্তত বলে- কয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত না। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। র্যাঙ্কিংয়েও তখন ‘১৯৭’ নম্বরে নেমে যাওয়ার ব্যাপার ঘটেনি।
আসছে নির্বাচনে শফিকুলের হাত দিয়ে দেশের ফুটবলে পরিবর্তনের আশা করেন সাব্বির, ‘আমার প্রত্যাশা বাংলাদেশের ফুটবল আবার আগের জায়গায় ফিরে যাক। এশিয়ার ভালো দশটা দলের মধ্যে বাংলাদেশে আসুক। এ জন্য পরিবর্তন দরকার। ব্যাপারটি প্রমাণিত এ দল ( বর্তমান কমিটি) ফুটবলকে ভালো কিছু দিতে পারবে না। যারা ১২ বছর কিছু করে দেখাতে পারেননি, তারা আর কবে পারবেন সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান।’
দেশের জার্সিতে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত খেলেছেন সাব্বির। মোট ৩৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর আগে বয়সভিত্তিক ফুটবলেও খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-১৬, ১৯, ২৩। অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২৩ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। বর্তমানে পুরো দস্তুর ব্যবসায়ী এককালের দেশের ফুটবলের মহাতারকা। ফুটবলে ইতিবাচক পরিবর্তনটাই এখন মোহামেডানকে অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯৩ সালে লিগ জেতানো এই তারকার একমাত্র চাওয়া।