সালমা-জাহানারার দুই রকম ‘আইপিএল’

মেয়েদের আইপিএল খেললেন জাহানারা–সালমা। অভিজ্ঞতা হলো দুজনের দুরকমছবি: সংগৃহীত

মেয়েদের আইপিএলে জাহানারা আলম আগেও খেলেছেন। কিন্তু সালমা খাতুন গেলেন এবারই প্রথম। আর প্রথমবার গিয়েই তিনি নিলেন শিরোপা জয়ের স্বাদ। পরশু ফাইনালে সালমাদের দল ট্রেইলব্লেজার্স ১৬ রানে হারিয়েছে সুপারনোভাসকে। জাহানারার দল ভেলোসিটি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় আগেই। আইপিএল থেকে তাই দুই রকম অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরবেন সালমা ও জাহানারা।

২০২০ সাল হতে পারত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ব্যস্ততম বছর। অথচ করোনাভাইরাসের কারণে কোনো খেলাই হলো না! নারী ক্রিকেটারদের প্রায় পুরো বছরই ঘরে বসে কাটাতে হচ্ছে। ব্যতিক্রম দুই অলরাউন্ডার জাহানারা ও সালমা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরশু শেষ হওয়া মেয়েদের ‘আইপিএল’ উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে এবার খেলার সুযোগ পেয়েছেন দুজনই।

কোভিডকালে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে খুশি জাহানারা।

গত আট মাস মেয়েদের ক্রিকেট বলতে অস্ট্রেলিয়ায় নারী বিগ ব্যাশ ও উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ। কোভিডকালে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েই খুশি দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ খেলা জাহানারা, ‘আমরা একটা টুর্নামেন্ট খেলতে পেরেছি। এটাই অনেক বড় পাওয়া। খেলা টিভিতে দেখানো হচ্ছে। যাঁরা ছেলেদের আইপিএল দেখছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মেয়েদের আইপিএলও দেখছেন।’ সালমা যেহেতু এবার প্রথম খেললেন, তাঁর রোমাঞ্চটা আরও বেশিই হওয়ার কথা। তবে এখন টুর্নামেন্ট খেলার রোমাঞ্চকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে শিরোপা জয়ের আনন্দ।

শুরুটা ভালো হয়েছিল জাহানারারও। প্রথম ম্যাচেই ২৭ রানে ২ উইকেট, ভ্যালোসিটিকে জেতাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পরের ম্যাচে অবশ্য ব্যাটিং-বোলিংয়ের সুযোগ ছিল না তেমন। এরপর তো রানরেটের ফাঁদে পড়ে ফাইনালেই উঠতে পারেনি ভ্যালোসিটি। অবশ্য এক ম্যাচেই জাহানারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিদেশি লিগগুলোতে খেলার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের মেয়েদেরও। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মুঠোফোনে জাহানারা বলছিলেন, ‘সবাই বলেছে বাংলাদেশি ক্রিকেটার জাহানারা ভালো খেলেছে। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার নামের সঙ্গে বাংলাদেশও প্রশংসা পাচ্ছে। গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পেরেছি এবার।’

ফাইনালে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের বিজ্ঞাপনটা আরও ভালোভাবে করলেন সালমা। প্রশংসায় ভেসেছেন তিনিও। লিগ পর্বের দুই ম্যাচেই সালমার অফ স্পিন ছিল এককথায় দুর্দান্ত। ফাইনালের আগের ম্যাচে সুপারনোভাসের বিপক্ষে ২৫ রানে এক উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। কৃপণ বোলিং করেছেন তার আগের ম্যাচেও। বাইরের লিগে প্রথমবার খেলতে গিয়েই সালমা দেখালেন নিজের সামর্থ্য, যেটা ফাইনালে আরও স্পষ্ট। ৪ ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ট্রেইলব্লেজার্সের জয়টা সহজ করেছেন বাংলাদেশের এই অফ স্পিনারই।

বারবার করোনা পরীক্ষা, ছয় দিনের কোয়ারেন্টিন—সবই ছিল সালমার জন্য কঠিন। তবে কোয়ারেন্টিনের পর দলের সঙ্গে মেশার অভিজ্ঞতাটাকে তিনি বলছেন ‘স্বপ্নের মতো’। ডিয়েন্দ্রা ডটিন, স্মৃতি মান্ধানা, ঝুলন গোস্বামী, দীপ্তি শর্মার মতো নারী ক্রিকেটের তারকাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করছেন, এটাই বড় পাওয়া ছিল সালমার কাছে।

প্রথমবার আইপিএলে গিয়েই শিরোপা জেতার স্বাদ পেলেন সালমা।
ছবি :সংগৃহীত

নারী ক্রিকেটের কিংবদন্তি ঝুলন ও উইকেটকিপার রিচা ঘোষ বাঙালি। বোলিংয়ের সময় স্টাম্প মাইক্রোফোনে সালমার সঙ্গে রিচার বাংলা কথোপকথনও শোনা গেছে। ভাষাগত দূরত্ব তেমন ছিল না বলেই দলের সঙ্গে মিশতে সুবিধা হয় সালমার, ‘প্রথম দু-এক দিনের মধ্যেই সবার সঙ্গে মিশে গেলাম। আমি যেহেতু বাইরে থেকে এসেছি, সবার সাহায্য পেয়েছি।’

নারী ক্রিকেটের তারার মেলায় খেলার অভিজ্ঞতাকে সালমা বলছেন ‘জীবনে বড় একটা অভিজ্ঞতা’, যা আজীবন মনে রাখবেন তিনি। তা তো রাখতেই হবে। প্রথমবার টুর্নামেন্টটা খেলেই যে ফিরছেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে!