সালাউদ্দিন না অন্য কেউ—ফুটবলের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

টানা চতুর্থবার বাফুফে সভাপতি হতে নির্বাচনে লড়ছেন সালাউদ্দিন।ছবি: প্রথম আলো

দেশের ফুটবল নেতৃত্বে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে গত কিছুদিন বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে আজ সেই পরিবর্তন আনার সুযোগ বিরোধীদের সামনে। অন্যদিকে ভোটেই টানা চতুর্থবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হতে চান কাজী সালাউদ্দিন। বিরোধীরা তাঁকে ব্যর্থ বললেও একজন সভাপতি পদপ্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে সাদাচোখে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে সালাউদ্দিন।

বিরোধী সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রথম শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদের মহাসচিব ও ব্যবসায়ী তরফদার রুহুল আমিনের নাম। কিন্তু তিনি মনোনয়নপত্র বিক্রির বেশ আগেই সরে যান নিজের ব্যবসায় সময় দেবেন বলে। যদিও চাপের মুখে সরে গেছেন বলে তাঁর সমর্থকেরা বলেন।

ভোটের প্রক্রিয়া তখনো শুরু হয়নি। ভোটাররা চলে এসেছেন।
ছবি: প্রথম আলো

আরেক সভাপতি প্রার্থী বাফুফের সহসভাপতি ও সাবেক ফুটবলার বাদল রায়ও চাপের মুখে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন, এমন দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় ব্যালটে থাকছে বাদলের নাম। কাজেই তাঁর বাক্সে ভোট পড়লে সেটা বৈধ হবে। গতকালও একই কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। সব মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠে সভাপতি প্রার্থী আসলে তিনজন।

একেবারে শেষ সময়ে এসে বাদল রায়ও ফোনে নিজের জন্য ভোট চাইছেন। গতকাল তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে সালাউদ্দিনবিরোধী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। বাদল রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। এখন সুস্থ বোধ করছি এবং নির্বাচন করতে তৈরি। ভোটাররা আমাকে ভোট দিলে কৃতজ্ঞ থাকব এবং সভাপতি হলে দায়িত্ব নেব।’ শেখ আসলামের নেতৃত্বে সমন্বয় পরিষদকে ভোট দিতেও আহ্বান জানিয়েছেন বাদল। তবে সমন্বয় পরিষদ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কোনো সভাপতি প্রার্থী নেই। বাদল রায় স্বতন্ত্র প্রার্থী।

নির্বাচিত হলে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আশা করি, কাউন্সিলররা আমাকে ভোট দেবেন
শফিকুল ইসলাম, বাফুফে সভাপতি পদপ্রার্থী

শেষ সময়ে বিরাট চমক নিয়ে সভাপতি প্রার্থী হওয়া সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলামও (মানিক) স্বতন্ত্র। সালাউদ্দিনবিরোধী ভোট তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। বিরোধী ভোট তাঁর বা বাদল রায়ের বাক্সে গেলে ভোটের ফল অন্য রকমও হতে পারে বলে অনেকের অনুমান। সেই আশায় ভোটারদের কাছে শফিকুলের আবেদন, ‘নির্বাচিত হলে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আশা করি, কাউন্সিলররা আমাকে ভোট দেবেন।’

তবে সালাউদ্দিনের টানা চতুর্থ মেয়াদে সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত বলেই অনেকের ধারণা। বরাবরই ভোটের মাঠে তাঁর দাপট। ২০০৮ সালে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিন আহমেদ চৌধুরীকে হারিয়ে প্রথমবার বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে সাবেক ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু প্রার্থী হলেও সরে যান। সেবার শেষ দিকে সভাপতি প্রার্থী হয়ে পরে আবদুর রহিমও সরে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে প্রবল বিরোধিতার পরও সালাউদ্দিন সভাপতি হয়েছেন।

গত ১২ বছর আমি ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করেছি। আরও কিছু করার বাকি আছে।
কাজী সালাউদ্দিন, বাফুফের বর্তমান সভাপতি

এবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সালাউদ্দিন। কিছু লোক টাকাপয়সা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অনেকবারই অভিযোগ করেছেন। ভোট সামনে রেখে গতকাল সন্ধ্যায় সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১২ বছর আমি ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করেছি। আরও কিছু করার বাকি আছে। আমি আশা করি, এবারও সভাপতি পদে নির্বাচিত হব।’

তবে গত তিনবার সালাউদ্দিনের পক্ষে থাকা জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ (ফোরাম) এবার বিপক্ষে। ১৩৯ ভোটের মধ্যে জেলা ও বিভাগের ভোট ৭২টি। সুতরাং জেলা ও বিভাগের ভোট সালাউদ্দিনের বিপক্ষে গেলে তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।

তবে এখন পর্যন্ত ভোটের হাওয়া সালাউদ্দিনের দিকেই। জেলা ও বিভাগ সভাপতি পদে প্রার্থী না দেওয়ায় এ নিয়ে নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও নেই বলে জানা গেছে।

তবে অন্য পদগুলোয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে চায় জেলা ও বিভাগ। ফোরামের মহাসচিব আশিকুর রহমান বলেছেন, ‘এই নির্বাচন আমাদের অস্তিত্বের, সম্মানের, অধিকার আদায়ের লড়াই।’ তাঁদের পরিষদ না জিতলে তিনি ক্রীড়াঙ্গন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

এই পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদে শেখ আসলাম লড়ছেন সালাউদ্দিন পরিষদের প্রার্থী সালাম মুর্শেদীর বিপক্ষে। ৪টি সহসভাপতি এবং ১৫টি সদস্যপদে দুই পরিষদ থেকেই নির্বাচিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।