সালাহকে কাঁদানো সেই রামোসকেই দলে চায় লিভারপুল?

সে রাতটা কীভাবে ভুলবেন সালাহ?ফাইল ছবি: রয়টার্স

গুঞ্জনটা বাতাসে ভাসছে এখনো সপ্তাহখানেকও হয়নি। বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির চুক্তি শেষ হয়ে আসছে, রিয়াল মাদ্রিদে সের্হিও রামোসের। ব্যস, দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে শোনা গেল, এই মৌসুম শেষে দুজনই পিএসজিতে যোগ দেবেন, জুটি বাঁধবেন নেইমারের সঙ্গে।

কিন্তু নতুন আরেক গুঞ্জন শুনলে মনে হবে, সেই পরিকল্পনা বুঝি ভন্ডুল করে দিতে চলেছে লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের একজন ডিফেন্ডার লাগবে, আর স্পেনে হঠাৎ গুঞ্জন শুরু হয়েছে, রামোসকে চায় লিভারপুল।

সেই রামোস, ২০১৮ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যিনি লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহকে মচকে যাওয়া কাঁধ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন!

বিশ্বকাপের আগে চোটে পড়া সালাহকে সান্ত্বনা দিচতে এগিয়ে এসেছিলেন মানে।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই ফাইনালটা রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল—দুই দলের ভক্তদের কাছে দুই কারণে বিশেষভাবে স্মরণীয়। সেবার শিরোপা জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে টানা তিনবার শিরোপাটা জেতা প্রথম ক্লাব হয়েছে রিয়াল (চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে টানা শিরোপা জেতা একমাত্র ক্লাবও রিয়ালই)। কিন্তু লিভারপুলের জন্য কিয়েভের সেই ফাইনাল হয়ে আছে দুঃস্বপ্নের অন্য নাম।

দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের সে সময়ের গোলকিপার লরিস কারিয়াসের অবিশ্বাস্য দুই ভুলে দুই গোল খেয়ে ম্যাচটা ৩-১ গোলে হেরেছিল লিভারপুল। কারিয়াসের ভুলগুলো এখনো হয়তো ভুলতে পারেন না অনেক লিভারপুল–সমর্থক। তার আগেই অবশ্য ম্যাচটাকে লিভারপুলের জন্য দুঃস্বপ্নের বানিয়ে রেখেছিলেন রামোসই! প্রথমার্ধের শুরুর দিকে সালাহর সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে রামোসের বেমক্কা টানে কাঁধে চোট পান সালাহ। লিভারপুল সমর্থকদের অনেকেরই এখনো দাবি, রামোস সেদিন ইচ্ছে করেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সালাহকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিতে এভাবে আঘাত করেছেন।

চুক্তি নিয়ে রিয়ালের সঙ্গে মতের মিল হচ্ছে না রামসের।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সেই রামোসই এখন লিভারপুলে সালাহর সঙ্গে একই দলে খেলবেন? স্পেনের সংবাদমাধ্যম এল চিরিঙ্গিতো টিভির লা সেক্সতা অনুষ্ঠানের আলোচনা তো তা-ই বলছে।
একদিকে রিয়ালে রামোসের চুক্তি শেষ হয়ে এসেছে, আর ছয় মাস বাকি। নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনাও আটকে গেছে। স্প্যানিশ ক্রীড়া চ্যানেল দেপোর্তেস কুয়াত্রো বলছে, চুক্তি দুই বছরের হবে বলে ঠিক হয়েছে, কিন্তু টাকার অঙ্ক নিয়ে মিলছে না রামোস আর রিয়ালের। আবার কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, টাকার অঙ্ক নিয়ে ঝামেলা নয়, ঝামেলাটা চুক্তির সময়ে। রামোস আগামী মার্চে পড়বেন ৩৫-এ, আর রিয়ালে সাধারণত ৩৫-এর বেশি বয়সের খেলোয়াড়দের চুক্তি এক বছর করে বাড়ানো হয়। মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক মার্কাও জানাচ্ছে, রিয়াল ছেড়ে মৌসুম শেষে অন্য ক্লাবে যাওয়ার কথা ভাবছেন রিয়াল অধিনায়ক।

ওদিকে লিভারপুলের একজন ডিফেন্ডার দরকার। একের পর এক ডিফেন্ডার চোটে পড়ে এমনই অবস্থা ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের, সেন্ট্রাল ডিফেন্সে কখনো তরুণ অপরীক্ষিত ডিফেন্ডারদের খেলাতে হচ্ছে লিভারপুল কোচকে, কখনোবা মিডফিল্ডারদের। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ফাবিনিও তো এই মৌসুমে বলতে গেলে পুরো সময় সেন্টারব্যাক হিসেবেই খেলেছেন, গত মঙ্গলবার লিগে সাউদাম্পটনের মাঠে ১-০ গোলে হারের ম্যাচে ক্লপ রক্ষণের কেন্দ্রে ফাবিনিওর সঙ্গে খেলিয়েছেন আরেক মিডফিল্ডার জর্ডান হেন্ডারসনকে!

একজন ডিফেন্ডার দরকার ক্লপের।
ছবি: রয়টার্স

দলের রক্ষণের সবচেয়ে বড় ভরসা ভার্জিল ফন ডাইক চোট কাটিয়ে এই মৌসুমে আর খেলতে পারবেন কি না সন্দেহ, অন্য দুই ডিফেন্ডার জোয়েল মাতিপ আর জো গোমেজও চোটে। তরুণ রিস উইলিয়ামস আর ন্যাট ফিলিপসই এই মুহূর্তে লিভারপুলের মাঠে নামার মতো ‘প্রথাগত’ ডিফেন্ডার। এই অবস্থায় জানুয়ারির শীতকালীন দলবদলে লিভারপুল আরেকজন ডিফেন্ডার কিনবে কি না, সেটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ডে। আর ইউরোপে কোনো ডিফেন্ডারের দলবদলের গুঞ্জন উঠলে সেখানে লিভারপুলের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে সে কারণে।

রামোসের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে। এমনকি এই মাসেই ১৫ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে রামোসকে কিনে নিতে পারে লিভারপুল, এমনও জানিয়েছে এল চিরিঙ্গিতো। যদিও সাধারণ বিশ্লেষণেই সেটির সম্ভাবনা প্রায় শূন্য বলে মনে হবে। রিয়ালে এত মৌসুম কাটিয়ে, রিয়ালের ‘প্রতীক’ হয়ে যাওয়া রামোসের এটাই যদি রিয়ালে শেষ মৌসুম হয়, সে ক্ষেত্রে মৌসুমের মাঝপথে নিশ্চয়ই তিনি ক্লাব ছেড়ে যাবেন না!