সুইডেনের কাছে হৃদয় পুড়ল লেভানডফস্কিদের

হারের হতাশায় পোলিশ তারকা লেভানডফস্কি।ছবি: রয়টার্স

সুইডেনকে হারানো ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না পোল্যান্ডের। রবার্ট লেভানডফস্কি একাই সে পথে দলকে বেশ খানিকটা এগিয়ে নিয়েও পারলেন না!

দলের অন্য যে কারও চেয়ে বিদায়ের হতাশা লেভানডফস্কিকে পোড়াবে বেশি। বিরতির পর জোড়া গোল করলেও প্রথমার্ধে অবিশ্বাস্যভাবে গোল মিস করেন। পাশাপাশি অফসাইডের কারণে একটি গোলও বাতিল হয় পোল্যান্ডের। সেন্ট পিটার্সবার্গে সুইডেনের কাছে ৩-২ গোলের হারে ইউরোর গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিল পোল্যান্ড।

বিরতির পর দুর্দান্ত খেলা লেভার ম্যাচ শেষে হতাশায় মোড়া মুখখানি পোড়াবে পোলিশ সমর্থকদের। তাদের জন্য এ ম্যাচটি ছিল মূলত 'ওয়ান ম্যান শো'। লেভা একাই যেন দেশকে উদ্ধার করার অভিযাত্রায় নেমেছিলেন।

৮৪ মিনিটে তাঁর দ্বিতীয় গোলে ২-২ ব্যবধানে ম্যাচে ফেরে পোল্যান্ড। শেষ ষোলোর পথে থাকতে বাকি ৬ মিনিটে আরও একটি গোল দরকার ছিল লেভা-জিলিনস্কিদের। আক্রমণের পর আক্রমণ করেও তারা গোলের মুখ দেখেনি। 'অল আউট' ফুটবল খেলায় উল্টো গোল হজম করেছে ম্যাচের যোগ করা সময়ে।

লেভানডফস্কিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সুইডেনের সেবাস্তিয়ান লারসন।
ছবি: রয়টার্স

শেষ ষোলো আগেই নিশ্চিত ছিল সুইডেনের। আজ 'ই' গ্রুপ থেকে শেষ রাউন্ডের এই ম্যাচে সুইডেনকে ঘিরে প্রশ্ন ছিল, গ্রুপসেরা হয়ে তারা শেষ ষোলোয় উঠতে পারবে কি না? একই সময়ে শুরু হওয়া অন্য ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে স্পেন ৫-০ গোলে হারালেও পয়েন্ট ব্যবধানে গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোয় উঠল সুইডেন।

'ই' গ্রুপ থেকে ৩ ম্যাচে ২ জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপসেরা সুইডেন। স্পেন গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে টিকিট পেল শেষ ষোলোর। ৩ ম্যাচে এক জয় ও ২ ড্রয়ে তাদের সংগ্রহ ৫ পয়েন্ট। ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় স্লোভাকিয়া ও তাদের সমান ম্যাচে ১ পয়েন্ট পাওয়া পোল্যান্ড বাদ পড়ল গ্রুপপর্ব থেকে।

ভিক্টর ক্লায়েসনের জয়সূচক গোলের পর সুইডেনের উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

সেন্ট পিটার্সবার্গে ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রোমাঞ্চ ভর করেছে। ম্যাচের মাত্র ৮২ সেকেন্ডে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে গোল করে এমিল ফর্সবার্গ বুঝিয়ে দেন গ্রুপসেরা হতেই লড়ছে সুইডেন। ইউরোর ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম গোল। পোল্যান্ড এরপর যেন আড়মোড়া ভেঙে ওঠে।

দুই প্রান্ত থেকে ক্রস দিয়ে লেভানডফস্কির গোলের পথ বের করার চেষ্টা করেছে পোল্যান্ড। প্রথমার্ধেই দলকে সমতায় ফেরানোর সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে নষ্ট করেন লেভা। ফ্রাঙ্কোভস্কির বাতাসে ভাসানো পাস দুর থেকে জোরাল হেডে সুইডেনের ক্রসবারে লাগান বায়ার্ন মিউনিখ তারকা।

ফিরতি বলে আবারও হেড করেও ফাঁকা গোলপোস্টে বল পাঠাতে পারলেন না! প্রথমার্ধে পোল্যান্ড ৫টি শট নিয়েও গোল করতে পারেনি। অন্যদিকে সুইডেন মাত্র ১টি শট নিয়েই এগিয়ে যায়।

প্রথমার্ধে অবিশ্বাস্যভাবে একটি গোল করতে ব্যর্থ হন লেভানডফস্কি।
ছবি: রয়টার্স

বিরতির পর ৫৯ মিনিটে বদলি হয়ে নামা দেয়ান কুলুসভস্কি গোলের পথ বের করে দেন ফর্সবার্গকে। তাঁর পাস থেকে ইউরোয় নিজের তৃতীয় গোলটি তুলে নেন ফর্সবার্গ। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় সুইডেন। পোল্যান্ডের সামনে তখন 'হয় মারো নয় মরো'।

দুই মিনিট পরই বাঁ প্রান্ত থেকে বিশ্বমানের এক ফিনিশিংয়ে পোল্যান্ডকে গোল এনে দেন লেভা। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে মাপা কোনাকুনি শটে গোলটি করেন তিনি। এরপরই পোল্যান্ড স্ট্রাইকার ইয়াকুব সুইয়েরজোকের গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হলে হৃদয়ভাঙে পোলিশ সমর্থকদের।

কিন্তু পোল্যান্ড হাল ছাড়েনি। ৮৪ মিনিটে ফ্রাঙ্কোভস্কির পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে পোল্যান্ডকে সমতায় ফেরান লেভা। শেষ ছয় মিনিটে চার থেকে পাঁচটি দারুণ আক্রমণ করেও গোলের দেখা পায়নি পোল্যান্ড।

গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোয় ওঠা সুইডেনের উদযাপন।
ছবি: রয়টার্স

তাদের মরিয়া রক্ষণভাগের সুযোগ নিয়ে পোলিশদের আশায় গুঁড়েবালি ঢালেন ভিক্টর ক্লায়েসন। সুইডিশ মিডফিল্ডার যোগ করা সময়ের ৩ মিনিটের মাথায় গোল করে বসেন!

গোটা ম্যাচে সুইডেনের গোলপোস্ট তাক করে ১৮টি শট নিয়েছে পোল্যান্ড। ৬টি রাখতে পারলেও গতি ও পাসের মিশেলে তাদের আক্রমণগুলো ছিল দেখার মতো। সুইডেন সে তুলনায় খুব বেশি রক্ষণাত্নক ফুটবল খেলেনি। তারা ১১টি শট নিয়েছে। উপভোগ্য এ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হৃদয় পুড়ল লেভানডফস্কিদের।