সুপার লিগে তাঁর হাত ছিল না, দাবি ফিফা সভাপতির

ইনফান্তিনো।ছবি: রয়টার্স

শর্ষের ভেতরেই ভূত থাকার মতো অভিযোগ বটে!

যে ইউরোপিয়ান সুপার লিগকে ফুটবলের আদর্শের পরিপন্থী বলে চারদিকে শোরগোল, চারদিকে ফুটবল খেলোয়াড়-সমর্থকদের ছাঁচাছোলা সমালোচনা আর তীব্র বিক্ষোভের মুখে যে সুপার লিগের পরিকল্পনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে, সেই সুপার লিগের পেছনেই নাকি হাত ছিল ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর! তবে ফিফা সভাপতি সেসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

এর আগে উয়েফার সভাপতি থাকার সময়েও তিনি এমন ‘বিদ্রোহী’ লিগের পরিকল্পনা ভন্ডুল করেছিলেন বলে দাবি ইনফান্তিনোর। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, ফিফা সভাপতি হিসেবে সবার সঙ্গেই তাঁকে কথা বলতে হয়, সব পক্ষের কথা শুনতে হয়, কিন্তু সবার অংশগ্রহণের পথ নেই এমন ‘বন্ধ’ লিগকে ফিফা কখনোই সমর্থন দেয় না।

অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন ইনফান্তিনো।
ছবি: রয়টার্স

গতকাল শুক্রবার দিনটা অনেক ব্যস্তই কেটেছে ইনফান্তিনোর। প্রথমে দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনের যে পরিকল্পনা নিয়ে ফিফা কাজ করছে, সেটি ব্যাখ্যা করলেন। এরপর জবাব দিলেন সুপার লিগের পেছনে তাঁর হাত থাকা না থাকা নিয়ে সমালোচনার। সুপার লিগের আয়োজক ১২ ক্লাবকে তিনি সমর্থন দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।

সেটির জবাবে সংবাদ সম্মেলনে ফিফা সভাপতি বললেন, ‘এসব সমালোচনার ক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে এগুলোর উৎস কী। ইউরোপিয়ান দলগুলোর সঙ্গে তো আমি সব সময়ই কথা বলি। আর এমন একটা প্রকল্প যে চালু করার পরিকল্পনা হচ্ছে, সেটা অনেক আগে থেকেই মুখে মুখে চলছিল।’

তিনি উয়েফা সভাপতি থাকার সময়ে এমন প্রকল্প ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে ইনফান্তিনোর দাবি, ‘আমি যখন উয়েফায় ছিলাম, এমন একটা প্রকল্প তখনো ছিল। কিন্তু তখন তাদের ভুল শুধরে দেওয়া হয়েছে। ফিফার ক্ষেত্রে বললে সবার সঙ্গে কথা বলা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, কিন্তু সুপার লিগের পেছনে আমাদের হাত কখনো ছিল না। আমরা এ নিয়ে কী ভাবছি, সেটা জানুয়ারিতেই এক বিবৃতিতে আমি স্পষ্ট করে দিয়েছি। বেশ কিছু ক্লাব যে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আঁটছে, সেটা অনেক দিন ধরেই পরিষ্কার, কিন্তু তাদের জন্য অন্য ক্লাবগুলোর স্বপ্ন আমরা মেরে ফেলতে পারি না। অল্প কয়েকটি ক্লাব ছাড়া অন্যদের অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করে রাখে, এমন লিগের বিপক্ষেই সব সময় ফিফার অবস্থান।’

রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুলসহ ১২টি ক্লাব মিলে চ্যাম্পিয়নস লিগের বিকল্প হিসেবে সুপার লিগ আনতে চেয়েছিল। এমন যেকোনো টুর্নামেন্টের মূল উদ্দেশ্য যে বাড়তি টাকা কামানো, সেটা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। তবে সুপার লিগের ছকটাই বিতর্ক জাগানোর মতো। প্রতিষ্ঠাতা ১২টিসহ পরে মোট ১৫টি ক্লাব কখনো লিগ থেকে অবনমিত হবে না, এমন নিয়ম রেখে প্রতিষ্ঠিত লিগ ফুটবলের চেতনার সঙ্গে যায় না।

এমন লিগ হলে সেটি দেশে দেশে লিগগুলোর মানও কমিয়ে দিত। কারণ, এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগের মতো ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতে হলে লিগে একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকতে হয় দলগুলোকে, সুপার লিগ হলে সুপার লিগের ক্লাবগুলোকে সে নিয়মের মধ্যে পড়তে হতো না। সে ক্ষেত্রে লিগে দলগুলোর ভালো খেলার তাড়নাও থাকত কম। সে কারণেই গত ১৮ এপ্রিল সুপার লিগ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ইউরোপের ১২টি ক্লাব দেওয়ার পর ক্লাবগুলোরই সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যার ফলে দুদিন পরই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয় ক্লাবগুলোকে।

বিদ্রোহী ১২ ক্লাবের মালিকেরা
ফাইল ছবি: এএফপি

তা সুপার লিগে সমর্থন না দিলেও ইনফান্তিনোর বিরুদ্ধে ভন্ডামির অভিযোগ তো আরেকটি আছে। সুপার লিগ টাকার পেছনে ছুটছে বলে অভিযোগ, নতুন ক্লাব বিশ্বকাপের ফরম্যাট এনে ইনফান্তিনোও কি সেটিই করছেন না? খেলোয়াড়-ক্লাবের ওপর ধকল বাড়াবে এই টুর্নামেন্ট, এমন অভিযোগ অনেক খেলোয়াড়-কোচই করেছেন। ইনফান্তিনোর দাবি, এখনকার ক্লাব বিশ্বকাপের বদলে তাঁর প্রস্তাবিত নতুন ছকের ক্লাব বিশ্বকাপ আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কিন্তু এর পেছনে আরও বেশি অর্থ আয় করার উদ্দেশ্যকেই মূল ভাবছেন অনেকে।

সেটি নিয়ে সমালোচনার জবাবে ইনফান্তিনো বিকল্প চিন্তার কথা তাঁরা শুনতে রাজি জানিয়ে বললেন, ‘ফিফায় আমরা কোনো নতুন টুর্নামেন্ট কিংবা (বর্তমান টুর্নামেন্টের) ভিন্ন ছকের ধারণার জন্য দরজা বন্ধ রাখি না। আমরা ফুটবলের ক্যালেন্ডার নিয়ে আরও গবেষণা করতে রাজি, আপনাদের সাংবাদিকদের মতও শুনতে চাই। কেউ কেউ হয়তো (ফিফার মাধ্যমে) তাঁদের নিজের ঝামেলার সমাধান হয়নি বলে ফিফাকে আক্রমণ করে। কিন্তু আমি সবার সঙ্গেই কথা বলতে চাই।’