সুপার লিগের ডামাডোলে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে টানাটানি

পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল লিভারপুলের সামনে। আর চতুর্থ স্থানে উঠে লিগ শেষ করতে পারা মানেই পরের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার টিকিট নিশ্চিত করা। এভারটন, টটেনহাম ড্র করেছে, ওয়েস্ট হাম হেরে বসেছে নিউক্যাসলের সঙ্গে, আর্সেনালও ড্র করেছে—এই অবস্থায় জিতলেই শেষ চারে উঠতে পারত অল রেডরা। সেটা হয়নি। শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে লিডস ইউনাইটেডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে তারা। ফলে লিগ তালিকায় এখনো ছয় নম্বরে খাবি খাচ্ছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

অবশ্য লিভারপুলসহ ১২ দল গতকাল ফুটবল বিশ্বকে যেভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছে, তাতে কি আদৌ তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে কোনো চিন্তা থাকার কথা? নতুন যে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের ঘোষণা এসেছে, তাতে ১২ বিদ্রোহী দল তো ঘোষণা দিয়েই দিয়েছে, ওসব চ্যাম্পিয়নস লিগ-ট্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সময় নেই তাদের। সময় এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের কৌলীন্য প্রকাশ করার—ইউরোপিয়ান সুপার লিগ খেলার। বিদ্রোহী লিগে নাম লেখানো দলগুলোর মধ্যে লিভারপুলই প্রথম মাঠে নেমেছিল। ফলে সুপার লিগবিরোধী লোকজনের রাগের তেজও তারা দেখেছে ভালোভাবে। ম্যাচ শুরুর আগে লিডসের খেলোয়াড়েরা লিভারপুলকে দেখিয়ে দেখিয়ে একটা গেঞ্জি পরে অনুশীলন করেছে, যে গেঞ্জিতে লেখা ছিল, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে চাও? যোগ্যতা দেখিয়ে খেল।’

শুধু তা–ই নয়, এই গেঞ্জির কয়েকটা আবার লিভারপুলের ড্রেসিংরুমেও রেখে এসেছিল লিডস, যদি লিভারপুলের কোনো খেলোয়াড় তাদের সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে প্রতিবাদে নাম লেখান আরকি!

ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, নিজেদের কুলীন বলে ঘোষণা দিয়ে এভাবে বছরের পর বছর ধরে ইউরোপে খেলার পাঁয়তারা না করে মুরোদ থাকলে নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে ইউরোপে খেলে দেখাও। সাম্প্রতিক অবস্থা বিবেচনায় লিভারপুলের বুকে গেঞ্জির লেখাগুলো শেল হয়ে বেঁধার কথা। পরের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিতেই তো ঘাম ছুটে যাচ্ছে তাদের!

ঘাম আরও ছুটেছে ম্যাচের শেষে। প্রথমার্ধে সাদিও মানের গোল এগিয়ে গেলেও শেষমেশ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার দিয়েগো ইয়োরেন্তের গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লিডস। দ্বিতীয়ার্ধে মার্সেলো বিয়েলসার লিগ যেমন ভয়ডরহীন খেলা খেলেছে, ওই ১ পয়েন্টও লিভারপুলের কপালে জোটার কথা ছিল না। ইংলিশ স্ট্রাইকার প্যাট্রিক বামফোর্ডের একটা শট ক্রসবারে লাগে। প্রথমার্ধে মোহাম্মদ সালাহকে খেলানো হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই দুর্দান্ত এক সুযোগ পেয়েছিলেন সালাহ। সুযোগ পেয়েছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার অ্যালেক্স-অক্সলেড চেম্বারলিনও। কিছুতেই কিছু হয়নি লিভারপুলের।

লিডসের রেখে যাওয়া গেঞ্জি পরে প্রতিবাদ না করলেও ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন লিভারপুলের মিডফিল্ডার জেমস মিলনার, ‘এই ব্যাপারটা (ইউরোপিয়ান সুপার লিগ) আমার একদম ভালো লাগছে না, আমি চাইব এটা যেন না হয়।’

কে জানে, মিলনার নিজে লিডসের ছেলে বলে হয়তো নিজ শহরের মানুষের আকুতিটা বুঝতে পারছেন ভালোভাবে!